রাজনীতি

আল্লাহর আদালত আছে, জনতার আদালত আছে: জাহাঙ্গীর আলম

হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও আশা ছাড়েননি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আইনি লড়াইয়ে এরপরও প্রার্থিতা ফিরে না পেলে সবশেষ মায়ের পক্ষে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

প্রার্থিতা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে ব্যর্থ হলে কী করবেন- জানতে চাইলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আল্লাহর আদালত আছে, জনতার আদালত আছে। আমার মা আছেন, আমি জনগণের জন্য কিছু করতে চাই।’

সোমবার (৮ মে) প্রার্থিতা ফিরে পেতে জাহাঙ্গীর আলমের করা রিট আবেদন হাইকোর্টে সরাসরি খারিজ হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি শুনেছি, ঋণখেলাপির মতো বা ঋণগ্রহীতার পক্ষে গ্যারান্টার (জামিনদার) হয়েছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের অনেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আমি শুধু একটি বিদেশি কোম্পানি যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন বলে নিজস্ব সম্পত্তি দিয়ে গ্যারান্টার হয়েছিলাম। তারা ঋণ পরিশোধ করে আসছিল, কিন্তু চারটি কিস্তি দিতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও গত ১১, ১৬ এবং ১৮ এপ্রিল পযর্ন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা টাকা বুঝে পেয়েছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন>> রিট খারিজ, প্রার্থী হতে পারছেন না জাহাঙ্গীর

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তারা একটি নিয়ম দেখিয়ে এসিআরপি থেকে নাম সরানোর জন্য বলেছে। যেহেতু তারা ১৬ এপ্রিলও টাকা পেয়েছে, অন্য যেকোনো লোক হলে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে সিআইপি ক্যানসেল করার কথা। কিন্তু এটা শুধু আমার বেলায় হওয়ায় সেটা আজ পর্যন্ত শেষ করা হয়নি। তারপরও গত ২ মে হাইকোর্ট থেকে আমাদের সিআইপি ও কোম্পানির ওপরে রং স্টে করেছে, সেটাও তারা সর্বশেষ মামলায় গ্রহণ করেনি। কারণ হিসেবে তারা বলছে, সময়টা পার হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের গ্যারান্টার হিসেবে আমার টাকা কোম্পানি পরিশোধ করেছে, সেই হিসেবে আমি পাই (প্রার্থিতা)। নির্বাচন কমিশন আইনে আছে, যারা গ্যারান্টার বা জামিনদার তাদের কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারেস্ট থাকতে হয়, লভ্যাংশ থাকতে হয়। তারপরও একই ঘটনায় অন্যরা রায় পেলেন, আমি পেলাম না। আমি উচ্চ আদালতে যেন ন্যায়বিচার পাই।’

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, আর আমার যারা গণ্যমান্য আছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি চেষ্টা করবো সর্বোচ্চ লড়ার জন্যে। কারণ আমি বলেছি, পদের জন্য নয়, একটা মানুষের অস্তিত্ব ও্ একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আদালত পর্যন্ত দৌড়াচ্ছি, আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন মেয়র পদের জন্য। আমার সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে, জুলুম করা হয়েছে, তারই প্রতিবাদে আমি এখানে নেমেছি, কেউ যেন আমাকে ভুল না বোঝেন। একটি সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ আদালত পযর্ন্ত লড়বো।’

Advertisement

আরও পড়ুন>> রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল করবেন জাহাঙ্গীর

তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই বুঝে নেবেন, আমার এ ফরম বাতিলের জন্য কারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে তাদের দিক থেকে সাকসেস হচ্ছেন। গণতান্ত্রিক দেশ, একজন মানুষের নির্বাচন করার অধিকার আছে, আমরা যেহেতু জনপ্রতিনিধি ছিলাম, আমাদের বিচারটা জনগণ করবে। আমি বিচার চাওয়ার জন্য মেয়র প্রার্থী হয়েছিলাম। যেহেতু আমাকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে, আমি মনে করি আমার মা সন্তানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। মাও এখানে প্রার্থী হয়েছেন। আমি চেষ্টা করবো এখানে সত্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। রাষ্ট্র, সরকার, সর্বোচ্চ আদালত, নির্বাচন কমিশনার, আমাদের ভোটার, জনগণ আমি সবার কাছে আবদার রাখবো, সত্যটি যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্যের যদি মৃত্যু হয় তাহলে কেউই সামনের দিকে ভালো কাজে এগিয়ে আসবে না। সে হিসেবে আপনাদের কাছে আবেদন থাকবে সত্যটা সবাই জানুক, সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সহযোগিতা করবেন।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। আইনের লড়াই করে যেতে চাই। নাগরিকরা বুঝবেন তাদের সন্তানের ওপর কী অত্যাচার করা হচ্ছে, কী অনিয়ম করা হচ্ছে। এটা ভবিষ্যতে সবাই সময়মতো জানতে পারবেন।’

এদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে জাহাঙ্গীর আলমের করা রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না তিনি।

আরও পড়ুন>> ভোটের মাঠে থাকছেন জাহাঙ্গীরের মা, স্বাগত জানালেন আজমত

এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ৩০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। ঋণখেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এফএইচ/ইএ/এমএস