হবিগঞ্জে ৩৭ দিনে নারী ও শিশুসহ ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
Advertisement
একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেফতার এড়াতে অনেক গ্রামে পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলায় হঠাৎ করেই মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুনখারাবি বেড়ে যায়। মাত্র ৩৭ দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত ২৩ মার্চ চুনারুঘাট উপজেলার গাদিশাইল গ্রামে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানকে হত্যার পর গাছে ঝুলে আত্মহত্যা করেন সজ্জুল হক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। পুলিশের ধারণা, অভাবের কারণে সজ্জুল মিয়া স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেন।
২৫ মার্চ বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামে পাওনা টাকার জেরে বিষ্ণু সরকার (২২) নামের এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
Advertisement
৫ এপ্রিল নবীগঞ্জ উপজেলার বদরদী গ্রামে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় বাচ্চু মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তি খুন হন। ৮ এপ্রিল বানিয়াচং উপজেলার কুশিয়ারতলা গ্রামে দুপক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে খুন হন জাহাঙ্গীর (৩৫) নামের এক যুবক। এসময় পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হন। এ সংঘর্ষে গুরুতর আহত ইছাক মিয়া (৫৫) ১১ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনার পর প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করে।
৯ এপ্রিল আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নোয়াগড় গ্রামে জমিতে গরুর ফসল খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে ফয়েজ মিয়া (২০) নামের এক মাদরাসাছাত্র নিহত হয়। আহত হন আরও ২০ জন। ১৩ এপ্রিল বানিয়াচং উপজেলার মশাকলি গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষে জোড়াখুনের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের দশরত দাসের ছেলে সুব্রত দাস (৩০) ও একই গ্রামের সুনীল দাসের ছেলে সুজিত দাস (৩৫)।
১৪ এপ্রিল লাখাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামে ধান কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে নিহত হন কৃষক আব্দুল জলিল (৬৫)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ১৪ এপ্রিল বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে ভাতিজার দায়ের কোপে মোশারফ হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তি খুন হন। ১৮ এপ্রিল লাখাই উপজেলার কাটাইয়া গ্রামের স্বামী খলিলুর রহমানের হাতে স্ত্রী রুহেনা খাতুন (৪৫) খুন হন।
২২ এপ্রিল (ঈদের দিন) সকালে মাধবপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোকে কেন্দ্রে করে কথা-কাটাকাটির জেরে ইরফান আলী (৬০) নামের এক মুয়াজ্জিনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৪ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে শিশুদের মার্বেল খেলা নিয়ে ঝগড়ার জেরে হামলায় খুন হন মিনারা খাতুন (৪৭) নামের এক নারী।
Advertisement
২৬ এপ্রিল লাখাই উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে সাবেক ও বর্তমান দুই ইউপি মেম্বারের বিরোধের জেরে সংঘর্ষে খুন হন জহিরুল ইসলাম (২৮) নামের এক যুবক। এ ঘটনায় আহত হন অর্ধশত।
২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ সদর উপজলোর পশ্চিম ভাদৈ গ্রাম থেকে মানিক মিয়া (৫০) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। সবশেষ ৩০ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা আবু জাহের মিয়ার লাঠির আঘাতে মারা যায় ছেলে রায়হান (১২)।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, দাঙ্গার বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দাঙ্গার বিরুদ্ধে সিনেমাও তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাওর এলাকায় ধান কাটার মৌসুমে এসব ঘটনা বেশি ঘটে। এসময় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর পরও লোকজনকে থামানো যাচ্ছে না। তবে পুলিশ এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
এসআর/এমএস