সংঘাতপূর্ণ সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে এগিয়ে এসেছে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সংস্থাটি জানিয়েছে, সুদানে আটকে পড়া সব বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনবে বিমান।
Advertisement
সোমবার (৮ মে) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ধাপে ধাপে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে ঢাকায় ফিরলেন ১৩৬ বাংলাদেশি
Advertisement
রোববার স্থানীয় সময় দিনগত রাত রাত ১টায় বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩৩৬ সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে সুদান প্রবাসী ১৩৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে উড্ডয়ন করে সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করেছে। তারা সবাই বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি আরবের সহযোগিতায় সংঘাতপূর্ণ সুদান থেকে জেদ্দায় সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ঢাকায় পৌঁছানোর পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. ছিদ্দিকুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রতিনিধিরা বিমানবন্দরে সুদানফেরতদের স্বাগত জানান। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে বাংলাদেশিদের আনতে দুই লাখ ডলার বরাদ্দ
এতে বলা হয়, রেমিটেন্স যোদ্ধাদের দুঃসময়ে সর্বদাই পাশে আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এর আগে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে চীন, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের নিজ দেশে ফিরিয়ে এনেছিল বিমান।
Advertisement
এর আগে গতকাল রোববার যুদ্ধকবলিত সুদান থেকে ১৩৬ বাংলাদেশিকে সৌদি সামরিক বাহিনীর তিনটি উড়োজাহাজে করে জেদ্দায় পৌঁছানো হয়। ওইদিন এসব বাংলাদেশিকে জেদ্দা বিমানবন্দরে স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে জেদ্দায় পৌঁছেছেন ১৩৫ বাংলাদেশি
গত ৩ মে সুদানে আটকে পড়া ৬৫০ বাংলাদেশি দেশটির রাজধানী খার্তুম থেকে পোর্ট সুদান বন্দরে পৌঁছান। ওইদিন সকালে তাদের বহনকারী ১৩টি বাস বন্দরে পৌঁছায়। আগের দিন ২ মে বাসগুলো ৬৫০ বাংলাদেশিকে নিয়ে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বন্দরে পৌঁছানোর পর দেখা যায়, অনেক বাংলাদেশির পাসপোর্ট নেই। সেক্ষেত্রে নতুন করে তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট তৈরি করতে হয়।
জানা যায়, পোর্ট সুদান থেকে জেদ্দায় ফেরার জন্য ৬৭৫ বাংলাদেশি অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রাভেল পারমিট ইস্যু ও জাহাজের শিডিউল পেতে দেরি হওয়ায় তারা জেদ্দায় পৌঁছাতে পারছিলেন না। তবে জাহাজ না পাওয়ায় বিমানযোগে ১৩৬ জনকে জেদ্দায় আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কবে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানো হবে, জানালেন রাষ্ট্রদূত
আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত চারশোর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যাদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মী ও মিশরের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাও রয়েছেন। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুদানে বাংলাদেশ দূতের বাসভবন-দূতাবাসে গোলাগুলি
সুদানে প্রায় দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী খার্তুমেই প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশির বাস। যুদ্ধকালীন প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরমধ্যে আটকে পড়া ৬৭৫ জন বাংলাদেশিকে গত ৩ মে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে আনা হয়। তাদের মধ্যে থেকে জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরেছেন ১৩৬ জন। বাকিদেরও ধাপে ধাপে দেশে ফেরানো হবে।
এদিকে চলমান যুদ্ধে সুদানে চিকিৎসাসেবা, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহতভাবে বিঘ্নিত হওয়া এবং খাদ্যের মজুত ফুরিয়ে আসায় মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আরও আগেই তাদের নাগরিক ও কূটনীতিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: সুদানে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শীর্ষ দুই সামরিক নেতার কাউন্সিলের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে। তারা হলেন- সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।
ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা ও দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফেরানোর প্রস্তাব ইস্যুতে এ দুই নেতার বিরোধ ঘিরেই গত ১৫ এপ্রিল সকাল থেকে যুদ্ধের সূত্রপাত। তবে কোন পক্ষ প্রথম আঘাত হেনেছে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হবে
এমএমএ/এমকেআর/এমএস