ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, একজন নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে শ্রমিকরা মামলা করেছেন, পাওনা বুঝিয়ে দেননি বরং অসৎ উপায়ে সেটির সমাধান করার চেষ্টা চালিয়েছেন, এমন অভিযোগও আছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
Advertisement
সোমবার (৮ মে) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি আরও বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেননি তিনি। এ ঘটনা নোবেল পুরস্কারকে কলঙ্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে মনে করেন ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। যারা মামলা করেছেন, তারা নিশ্চয়ই মামলা চালাবেন। আশা করবো, মামলা নিষ্পত্তির আগেই পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা হবে।’
নির্বাচনের আগেই আসন সংখ্যা ভাগবাটোয়ারা করতে চাচ্ছে বিএনপি শরিকরা- এ বিষয়টি কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, শরিকরা আসন চাইবে, স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে যাবে কি যাবে না। আসন বণ্টন নিয়ে শরিকরা আলোচনা করছে, তার অর্থ হচ্ছে তারা নির্বাচনে যেতে চায়। বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে গেলে তারাও বিএনপি থেকে পালিয়ে যাবে।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফর শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে তিনি। ৯ মে দেশে ফিরে আসবেন। তিনি আরও বলেন এটি একটি সফল সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেছেন। ব্রিটিশ রাজা চার্লসের সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরও সফল ছিল। ব্রিটেন সফরকালে সেখানকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি নির্বাচন করতে চায়, যেটা ব্রিটেনের নির্বাচনের মতোই সুন্দর হবে। যেখানে সব ধরনের পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন একটি সুন্দর নির্বাচন করার ঐকান্তিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, সেই সময়ে বিএনপির নেতারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন বর্জন কিংবা প্রতিহত করার ঘোষণা গণতন্ত্রকে প্রতিহত কিংবা ঠেকিয়ে দেয়ার ঘোষণার মতো। আসলে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।’
বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে পারে, কিন্তু নির্বাচন বন্ধ কিংবা ঠেকিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন দেশের মানুষ বিএনপিকে সেই সুযোগ দেবে না। শেখ হাসিনার উচ্চতা কোন জায়গায় এ সফরের মাধ্যমে বিএনপির অনুধাবন করার দরকার বলে মনে করেন তিনি। মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, তার সরকারের প্রতি বিশ্ব অঙ্গনের সমর্থন কোন জায়গায়, তা নিশ্চয়ই বিএনপি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
Advertisement
ক্ষমতায় থাকতে ধর্না দিতে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে বলে দাবি করেন বিএনপির নেতারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাপানে গেছেন, সেই দেশের সরকারের আমন্ত্রণে। জাপান সরকার প্রধানমন্ত্রীকে যে মর্যাদা দিয়েছে, সেটি অভাবনীয়। জাপান আমাদের দেশকে ত্রিশ মিলিয়ন ইয়েন দিয়েছে। রানা প্লাজা প্রকল্পে সহায়তার জন্য সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বিশ্বব্যাংকের বিশেষ আমন্ত্রণে। বন্ধের দিনে বিশ্বব্যাংক তার জন্য সভার আয়োজন করেছে। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, দুর্নীতর অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছে, সেই বিশ্বব্যাংক নিজেই ভুল বুঝে এখন ২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশকে।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে গেছেন দেশটির নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দেখা করে তাকে বলেছেন, শেখ হাসিনা আমাদের আইডল। কেবল তারই না, তার মেয়েদেরও আইডল।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রশংসা করেছেন, তা শুনে বিএনপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সে কারণে আবোল-তাবোল বকা শুরু করেছে।’
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি নির্বাচন থেকে পালিয়ে যাক, আমরা তা চাই না। আমরা বিএনপির সঙ্গে খেলতে চাই।’
দাবি না মানলে বিএনপি নির্বাচন করবে না। দলটিকে নির্বাচনে আনতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির আবদার এমন একটি ব্যবস্থা যার মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে। তারা সেই নিশ্চয়তা চাচ্ছে। কিন্তু সেটি তো নির্বাচন কমিশন দিতে পারবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই হবে।’
আইএইচআর/এসএনআর/জেআইএম