চরম নাটকীয়তা এবং শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ সম্ভবত একেই বলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সমস্ত আবেগ-উত্তেজনা, রুপ-রস নিংড়ে দেয়ার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো রোববার রাতে জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে। যে ম্যাচের পরতে পরতে ছড়িয়েছিলো উত্তেজনার পরশ। যে ম্যাচের শেষটা ছিল চরম নাটকীয়, শ্বাসরুদ্ধকর।
Advertisement
এমন এক উত্তেজনাময় ম্যাচের একেবারে শেষ বলে ছক্কা মেরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে জিতিয়ে দিয়েছেন আবদুল সামাদ। রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়েছে ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
প্রথমে ব্যাটিং করে ২ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তোলে রাজস্থান রয়্যালস। জবাব দিতে নেমে একেবারে শেষ বলে এসে আবদুল সামাদের ছক্কায় জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ৬ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় তারা।
শেষ ওভারে হায়দরাবাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭ রান। রাজস্থানের বোলার সন্দিপ শর্মা। আগের ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়েছিলেন তিনি। শেষ ওভারের প্রথম বল মোকাবেলা করেন মাত্রই উইকেটে নেমে আসা আবদুল সামাদ। তার সঙ্গে ছিলেন মার্কো জানসেন।
Advertisement
প্রথম বলেই ২ রান নিলেন সামাদ। শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যাককয় দৌড়ে গিয়ে বলটা হাতের তালুতে নিয়েও ফেলে দেন। মনে হচ্ছিল যেন ম্যাচটাই তখন ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। পরের বলেই মূল্য দিতে হলো সন্দিপ শর্মাকে। ইয়র্কার লেন্থের বলটিকেই সোজা ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন সামাদ।
তৃতীয় বলটি থেকে সামাদ নিলেন ২ রান। অর্থ্যাৎ ৩ বল থেকে এলো ১০ রান। পরের বলে ১। পঞ্চম বলে জানসেন ১ রান দিয়ে আবারও সামাদকে দিলেন স্ট্রাইকে। শেষ বলে প্রয়োজন ৫ রান। বাউন্ডারি মারলে ম্যাচ হবে টাই। ছক্কা মারলে জিতবে হায়দরাবাদ।
এমনই এক টানটান উত্তেজনায় সন্দিপ শর্মা বল করলেন। সামাদ কোনো রান নিতে পারলেন না। উল্লাস শুরু হয়ে গেলো রাজস্থান শিবিরে। সন্দিপ আকাশের দিকে আঙ্গুল উঁচু করে বিজয় উদযাপন শুরু করে দিয়েছিলেন তখন।
কিন্তু বেরসিক আম্পায়ার ঘোষণা দিলেন, বলটা ছিল নো। ওভারস্টেপিং করে ফেলেছেন সন্দিপ। ম্যাচ তো শেষ হলোই না, বরং যোগ হলো ১ রান। এবার বাউন্ডারি মারলেও জিতে যাবে হায়দরাবাদ। চরম নাটকীয়তায় উপনীত তখন ম্যাচটি।
Advertisement
এবার দৌড়ে এসে সোজা ইয়র্কার করলেন সন্দিপ। কিন্তু সামাদও কম যাননি। সোজা বোলারের মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির ওপারে। ছক্কা। রাজস্থান রয়্যালসের সমর্থক এবং ডাগআউটে বসা ক্রিকেটাররা হৃদয়ভাঙার আওয়াজ নিয়ে ধপাস করে বসে পড়লেন আর বুনো উল্লাসে মেতে উঠলেন সানরাইজার্সের ক্রিকেটারও সমর্থকরা। সবারই কথা, ক্রিকেটে এমনও সমাপ্তি হয়!
আবদুল সামাদের আগে ঝড় তুলেছিলেন মূলত গ্লেন ফিলিপস। মাত্র ৭ বলে তিনি করেছিলেন ২৫ রান। ১৯তম ওভারেই ম্যাচের মোড় পুরো ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ফিলিপস। ১২ বলে তখন হায়দরাবাদের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান।
বোলার কুলদিপ যাদবকে ওই ওভারের প্রথম তিন বলে টানা তিনটি ছক্কা এবং চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ২২ রান তুলে ফেলেন ফিলিপস। ৫ম বলে তিনি আউট হয়ে গেলেও হায়দরাবাদের জন্য ম্যাচটা সহজ করে দিয়েছেন তিনি। যে কারণে মাত্র ২৫ রান করার পরও ফিলিপসকেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
২১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর দুই ওপেনার আনমলপ্রিত সিং এবং অভিষেক শর্মা মিলে ঝোড়ো সূচনা এনে দেন। ৫.৫ ওভারে ৫১ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ২৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হন আনমলপ্রিত সিং। অভিষেক শর্মা ৩৪ বলে খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন ২টি।
২৯ বলে ৪৭ রান করে আউট হন রাহুল ত্রিপাথি। ১২ বলে ২৬ রান করেন হেনরিক ক্লাসেন। ২টি করে বাউন্ডারি এবং ছক্কার মার মারেন তিনি। গ্লেন ফিলিপস শেষ দিকে বলে ৩ ছক্কা এবং ১ বাউন্ডারিতে করলেন ২৫ রান। ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান সংগ্রহ করে রাজস্থান রয়্যালস। ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল ১৮ বলে করেন ৩৫ রান। ৫৯ বলে ৯৫ রান করেন জস বাটলার। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন এই ইংলিশ অধিনায়ক। ৩৮ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাঞ্জু স্যামসন। ৫ বলে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন শিমরন হেটমায়ার।
এই জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৯ম স্থানে উঠে আসলো সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। অন্যদিকে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানেই রইলো রাজস্থান রয়্যালস।
আইএইচএস/