দেশজুড়ে

সময়ের আগেই পাকছে লিচু, কমছে স্বাদ

দিনাজপুরে মৌসুমের প্রথম লিচু বাজারে আসে ১৫ মের পর। সে হিসেবে দানা বড় এবং পরিপক্ব হতে আরও এক সপ্তাহ প্রয়োজন। কিন্তু প্রচণ্ড দাবদাহে আগাম পাকতে শুরু করেছে লিচু। এতে স্বাদ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে লিচুর দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষী-বাগানিরা।

Advertisement

প্রতিবছর দিনাজপুর থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার লিচু যায় দেশের নানা প্রান্তে। লিচুর জেলা খ্যাত দিনাজপুরে এবার বৃষ্টি খুব একটা হয়নি। যদিও বা বৃষ্টি হয়েছে তাও অনেক দেরিতে। এতে সবুজ লিচু পরিপক্ব না হতেই পাকতে শুরু করেছে। এতে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছেন বাগানমালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমের প্রথম মাদ্রাজি জাতের লিচু বাজারে আসে ১৫ মের পর। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহে বেদানা, ১৫ জুনের পর বাজারে আসতে শুরু করে লিচুর রাজা বোম্বাই। এরপর চায়না-১, ২ ও ৩ জাতের এবং সবশেষ আসে কাঁঠালি ও মোজাফ্ফরি লিচু।

আরও পড়ুন: সোনারগাঁয়ে লিচু পাড়ার প্রস্তুতি চলছে, দাম নিয়ে শঙ্কা

Advertisement

কিন্তু চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন মাদ্রাজি লিচু বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন বাগানি ও মালিকরা। গরম আর কিছুদিন থাকলে অধিকাংশ লিচু নষ্ট হয়ে যাবে।

লিচু বাগানি ফরিদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাজি লিচু একটু আগেই বাজারে আসে, কিন্তু এবার গরমে বেশি আগেই লিচু পাকতে শুরু করেছে। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় দানাও ছোট হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে লিচুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। শিলায় আঘাত পাওয়া লিচু ফেটে পচে যাচ্ছে। জানি না এবার লাভ হবে কি না।

বাগান মালিক মো. নুর আমিন বলেন, গরম আর রোদে লিচুর সবুজ চামড়া লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কমপক্ষে ১০ দিন আগেই লিচু পাড়তে হবে। অপরিপক্ব লিচু পেকে যাওয়ায় মিষ্টিও কম হবে। লিচুর দানা বড় করার জন্য প্রতিদিন বাগানে সেচ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভিটামিন দিয়ে লিচু বড় করার চেষ্টা করছি, দেখা যাক কি হয়।

উদ্ভিদবিদ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, অব্যাহত তাপপ্রবাহ ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে লিচুতে দ্রুত রং আসতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অন্য বছরের চেয়ে এবার লিচুতে দ্রুত রং এসেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উদ্ভিদ বায়োক্লকে পরিবর্তন আসছে। আগামীতে এ ধরনের পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজশাহীর বাজারে উঠেছে লিচু, দাম চড়া

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ভোক্তাদের অপরিপক্ব লিচু খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বাগানিরা অতিরিক্ত লাভের আশায় লিচুতে কীটনাশক প্রয়োগ করে বাজারে বিক্রি করে। অপরিপক্ব লিচু খেলে মানুষের নানান ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিপক্ব লিচু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক শিশুদের জন্য। এমনকি এ লিচু খেলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুরে লিচু ভাঙার সময় এখনও আসেনি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করলে প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে দিনাজপুরের লিচু নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ে লিচু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ঝড়-বৃষ্টি কমেছে, গরমের সঙ্গে বাড়তে পারে তাপপ্রবাহের আওতা

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের অফিসার মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে প্রচারণা শুরু হয়েছে। অপরিপক্ব লিচু খেলে তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু যদি ক্যামিকেল বা রং ব্যবহার করে লিচু আকর্ষণীয় করে বাজারে বিক্রি করা হয় এবং সেই লিচু মানুষ খায় তাহলেই সমস্যা। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া জেলা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গেও আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূর মোর্শেদা রেবেকা সুলতানা বলেন, গত বছর জেলায় লিচুর চাষ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে। এবার ১০ হেক্টর বেড়েছে। গতবার ৬১৬ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার ৭০০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, জেলায় পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া বিরূপ হওয়ায় এবার উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

এমদাদুল হক মিলন/এএইচ/জেআইএম