গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। তারপর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পান সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বিদেশে অবস্থান করায় চার মাস দপ্তরের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন তাইফুল ইসলাম টিপু।
Advertisement
কেমন ছিল চারমাসের সে অভিজ্ঞতা? এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন টিপু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক খালিদ হোসেন।
জাগো নিউজ: বিশেষ পরিস্থিতিতে চার মাস দপ্তর সামলেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
তাইফুল ইসলাম টিপু: আমি গত সাত বছর ধরে সহ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। যখন দলের যে দায়িত্ব পেয়েছি সেটা তখন সফলভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। এর আগে করোনার সময়ে এককভাবে অফিস সামলেছি। আমাদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাহেব করোনা আক্রান্ত ছিলেন, তখনও দায়িত্ব পালন করেছি।
Advertisement
গত সাত ডিসেম্বর অফিসে ‘ক্রাক ডাউন’র পরে আবারও নতুন করে দায়িত্ব বেড়ে গেছে, যাকে দায়িত্ব দিয়েছে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। পরবর্তীসময়ে একটি পারিবারিক ইস্যুতে তিনি ভারতে যান। তারপরও প্রতিনিয়ত তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এই চার মাসে আমরা বিধ্বস্ত একটা অফিসকে পুনর্গঠন করেছি। অফিসে অধিকাংশ স্টাফ ছিল না, কর্মচারী ছিল না। আমরা বিভিন্নভাবে নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এ অফিস সচল করেছি। আর সারা দেশের নেতাকর্মীদের একটি জায়গায় নিয়ে আসছি। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা অর্জন আমি মনে করি, এখানে সাড়ে তিন হাজার প্রান্তিক জনপ্রতিনিধি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, সমন্বিতভাবে চিঠি দিয়েছি।
আরও পড়ুন>>ঈদের পর কি আন্দোলন আরও চাঙা করবে বিএনপি?
এই প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিরিজ বৈঠক হয়েছে যা অতীতে কখনো হয়নি। রমজান মাসে পঞ্চাশের অধিক ইফতার মাহফিলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অংশ নিয়েছেন। প্রত্যেকটা পার্টিতে পাঁচ-দশ হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল। প্রান্তিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। নিন্দুকেরা মনে করেছিল রমজান মাসে আমাদের কর্মসূচি মুখ থুবড়ে পড়বে, কিন্তু আমরা কৌশলের সঙ্গে মাঠে কর্মসূচি রেখেছি।
যেমন জেলা পর্যায়ে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে। ঢাকায় আমাদের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ আগের রাতে স্থান বাতিল করে। ওই রাতের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে কর্মসূচির স্থান নির্ধারণ করে সেখানে পালন করি এবং কর্মসূচি সফল হয়। তারপর থানা পর্যায়ে কর্মসূচি। সারাদেশে সাড়ে ছয়শর অধিক থানায় ঢাকা থেকে অতিথি পাঠানো হয়েছে। গোপালগঞ্জের মতো জায়গায়ও কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা থেকে নেতারা গিয়েছেন অতিথি হয়ে। যেসব এলাকায় আমাদের কর্মসূচি হতো না সেসব এলাকায় আমাদের এবারের কর্মসূচি পালন হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি ছিল। এর মধ্য দিয়ে রমজান মাস পুরো বিএনপির দখলে ছিল।
Advertisement
যারা আমাদের দলের গুম-খুনের শিকার হয়েছেন সেসব পরিবারে আমাদের নেতারা গিয়েছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন। যারা জেলে আছেন, ঈদের দিন সেসব পরিবারে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা গিয়েছেন। তাদের তালিকা করতে হয়েছে ঈদের আগেই। এবার পাঁচ হাজারের বেশি ঈদকার্ড দিয়েছি কূটনৈতিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
জাগো নিউজ: দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনি কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: এখানে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। কারণ রাজনীতিতে যখন নেমেছি তার কিছুদিন পর জিয়াউর রহমান মারা যান। সে সময় দল সংগঠিত ছিল না। বাড়ি বাড়ি সাহায্য চেয়ে ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী পালন করেছি। এরপর এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে সংগ্রাম পরিষদ, অন্যদিকে ছাত্রশিবির- সবার সঙ্গে লড়াই করে সেখানে সংগঠন পুনরুজ্জীবিত করেছি। পরবর্তীপর্যায়ে এক/১১-তে যখন সারাদেশ স্তব্ধ তখন যারা জিয়া পরিবারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছে তাদের মধ্যে আমরাও ছিলাম। সুতরাং, আমাদের কাছে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। কারণ দুঃসময়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করাই রাজনীতিকের কাজ।
আরও পড়ুন>>কঠোর আন্দোলনের বার্তা দিতেই রমজানে মাঠে বিএনপি
জাগো নিউজ: দলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কী ধরনের ঘাটতি দেখছেন এবং আপনি ব্যক্তিগতভাবে কতটা সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: সবার অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যে ঘাটতি ছিল সেটা পূরণের চেষ্টা করেছি। শতভাগ সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা করেছি রাজনীতি যে টিমওয়ার্ক সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে।
জাগো নিউজ: দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনার সহকর্মী বা সহযোদ্ধাদের সহযোগিতা কেমন পেয়েছেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: কেউ সহযোগিতা করবে, কেউ অসহযোগিতা করবে- এটা যুগে যুগে ছিল, আছে, থাকবে।
জাগো নিউজ: সহকর্মীদের অসহযোগিতা কীভাবে মোকাবিলা করেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: নিজের কর্মতৎপরতার মাধ্যমেই এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠি। কারও সঙ্গে বিভেদ-বিভাজনের দরকার হয় না। আমি কারও ওপর নির্ভর করি না। যেটা অফিসের স্টাফ করবে সেটা যদি সে করতে না পারে আমি আমার কাঁধে করে নিয়ে যাই। আমার সামর্থ্য থাকলে অন্যের অপেক্ষায় থাকি না।
আরও পড়ুন>>কূটনীতিকরা বিএনপির পরিকল্পনা জানতে চায়: শামা ওবায়েদ
জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করছেন আপনার কর্মতৎপরতার মাধ্যমে দলের হাই কমান্ডকে খুশি করতে পারছেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: সেটা হাই কমান্ড বলতে পারবে। আমি আমার জায়গা থেকে যথাযথ চেষ্টা করছি।
জাগো নিউজ: দপ্তরকে আরও গতিশীল করতে জরুরিভাবে কী দরকার বলে আপনি মনে করেন?
তাইফুল ইসলাম টিপু: আমি মনে করি দপ্তর হচ্ছে সংগঠনের প্রাণ, দপ্তর উদার হতে হবে। দপ্তর যত কালেক্টিভ হবে দল তত বিকশিত হবে এবং বিএনপির জন্য এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ: আপনার দলের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার যে মান তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট?
তাইফুল ইসলাম টিপু: রাজনীতি চলমান প্রক্রিয়া, এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। এখানে সবাই থাকবে। এর মধ্যে থেকে কে কীভাবে এগোবে সেটা তার ব্যক্তিগত কৌশল।
জাগো নিউজ: সংঘাত নাকি সমঝোতা- সামনে রাজনীতি কেমন হবে?
তাইফুল ইসলাম টিপু: রাজনীতি কখনো বলে আসে না। রাজনীতি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে সংঘাত হবে না শান্তি হবে এটা পরিবেশ পরিস্থিতি বলে দেবে।
জাগো নিউজ: এই যে কর্মসূচিতে সারা দেশের নেতাকর্মীরা চাঙা হয়েছে, আগামী আন্দোলনের জন্য তারা কি আশ্বস্ত হয়েছে?
তাইফুল ইসলাম টিপু: নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছে। ওপর থেকে যত নিচে যাবেন তত কমিটেড নেতাকর্মী বেশি পাবেন।
কেএইচ/এএসএ/এমএস