শিকলবন্দি জীবন কাটছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার আদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিক মোহন্তর (২৩)। মানসিক অসুস্থতার কারণে পাঁচমাস ধরে পরিবারের লোকজন তাকে ঘরে বেঁধে রেখেছেন।
Advertisement
আশিক মোহন্ত আদারপাড়া এলাকার রাখাল মোহন্তর ছেলে।
সম্প্রতি আশিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাকে ঘরে দুটি লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। একটি শিকল তার দুই পায়ে পরানো, অন্যটি হাতে। ঘরের জানালা দিয়ে তাকে পান্তা ভাত খেতে দেওয়া হলো। খাবার খাওয়া শেষে বাইরে থেকে জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘরের একপাশে টয়লেট স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। তবে শিকল ছোট হওয়ায় টয়লেট পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয় আশিকের পক্ষে। তাই ঘরের মেঝেতেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় তাকে। বাইরে থেকে ডাক দিলে ভেতর থেকে টিনের তৈরি দরজা খুলে দেন আশিক।
আশিকের বাবা রাখাল মোহন্ত জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে আশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। তার মাও মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পাবনা মানসিক হাসপাতালে কয়েক দফায় ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন আর তাকে ভর্তি করে না।
Advertisement
রাখাল মোহন্ত বলেন, ছেলের চিকিৎসা বাবদ ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে তিনি এখন সহায় সম্বলহীন। কিছু জমি ছিল। সেটি বিক্রি করে পাশে তিন শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেছেন। নিজস্ব একটি দোকান ছিল তার। সেটিও এখন নেই। স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে কর্মচারীর কাজ করে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশিক মোহন্ত আগে নেশা করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। শিকল ছেড়ে রাখলে প্রতিবেশীদের বিরক্ত করতেন। ভাঙচুরও করেছেন একাধিক জায়গায়।
আব্দুল আজিজ নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। ছাড়া পেলেই কাউকে না কাউকে আক্রমণ করতে যায়। আবার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখাও অমানবিক। পরিবারটি নিরুপায়। তাদের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।’
দোলং মহল্লার জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলেটি প্রায়ই ঠিকমতো কথাবার্তা বলে। তবে কখনো কখনো উল্টাপাল্টা বলে। তার পুরোপুরি সুস্থতার জন্য যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন।’ এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অমানবিক কাজ। ছেলেটির বাবা-মাকে ডেকে তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করাবেন। তার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
Advertisement
পাবনা মানসিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার জাগো নিউজকে বলেন, কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে রোগী ভর্তি করা হয়। ওই রোগীর অভিভাবকরা তাকে হাসপাতলে নিয়ে এলে নিয়মের মধ্যে পড়লে তাকে আবারও ভর্তি করা যাবে।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/এমএস