রুবেল মিয়া নাহিদ
Advertisement
শতবর্ষী মন্দিরটির অবস্থান পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামে। স্থানীয় জমিদার পূর্ণচন্দ্র রায় ১৯০৫ সালে মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
সাড়ে ৩২ হাত দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ২১ হাত প্রস্থের একতলা মন্দিরটিতে ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যকলা ফুটে উঠেছে। কালের বিবর্তনে জৌলুশ হারিয়েছে রায় পরিবারের জমিদারবাড়ি।
আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন ভারতের ‘ছোট্ট স্কটল্যান্ডে’
Advertisement
ভেঙে গেছে প্রাসাদসম পাকা বাড়ি। রায়দের ঐতিহ্য ও সম্পদের সাক্ষী হয়ে শুধু টিকে আছে দুর্গামন্দিরটি। সরেজমিন দেখা গেছে, মন্দিরের সিঁড়ির ৮টি ধাপ আছে।
সিঁড়ির দু’পাশে আছে হাতির শুঁড়ের মতো শিল্পকর্ম। চিনামাটির কোসন (থালা) ভেঙে সিঁড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এতে সিঁড়ির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। মন্দিরের ফটকের খাম্বায় ও ভেতরে আছে ফুল ও তরুলতাসদৃশ কারুকাজ।
রায়বাড়ির ষষ্ঠ পুরুষ তুষারকান্তি রায় এখন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি পূর্বপুরুষের ইতিহাস রচনার কাজে হাত দিয়েছেন। তিনি ও স্থানীয় প্রবীণ মানুষের কাছ থেকে জানা গেল রায়বাড়ি ও এই মন্দিরের ইতিহাস।
আরও পড়ুন: সিকিম ভ্রমণে ঢুঁ মেরে আসুন ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ‘ছায়াতালে’
Advertisement
১৮৩৫-১৮৪০ সালের কোনো এক সময় বরিশালের বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে বৃন্দাবনচন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তি মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
প্রথমে চুনের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসা করে অনেক টাকা ও সম্পদের মালিক হন বৃন্দাবন। এরপর তিনি বাড়িতে নারকেল তেলের কারখানা করেন।
নারকেল তেল বজরা নৌকায় করে ভারতের কলকাতায় নিয়ে বিক্রি করা হতো। তেলের ব্যবসার সুবাদে বৃন্দাবন রায়ের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইংরেজদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে জমিদারি পত্তন নেন।
আরও পড়ুন: পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন থাকতে রিনিউ করবেন ও কীভাবে?
পিতার মৃত্যুর পর জমিদারি দেখভাল করতেন বৃন্দাবন রায়ের ছোট ছেলে পূর্ণচন্দ্র রায়। ১৯০৫ সালে পূর্ণচন্দ্র রায় বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন এই দুর্গামন্দির।
স্থানীয় এক প্রবীণ সুরেশ জানান, বৃন্দাবনচন্দ্র রায় তেলের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এরপর জমিদারি থেকে তার সম্পদ বেড়ে যায়। বৃন্দাবনচন্দ্র রায়ের পর জমিদারির দায়িত্ব নেন ছোট ছেলে পূর্ণচন্দ্র রায়। তিনি মূলত বাড়িতে দালানকোঠা ও দৃষ্টিনন্দন মন্দির তৈরি উদ্যোগ নেন।
দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটি সংরক্ষণ করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। মঠবাড়িয়া শেরেবাংলা সাধারণ পাঠাগারের সম্পাদক নূর হোসাইন মোল্লা বলেন, ‘মিরুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাজার, প্রতিষ্ঠাসহ জনহিতৈষী কাজে রায় পরিবার যুক্ত ছিল। সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার হিসেবে তাদের খ্যাতি আছে।’
আরও পড়ুন: পানির নিচে ৯০০ ফুটের দানব গর্তের সন্ধান মেক্সিকোতে
স্থানীয় মুসলিম পরিবারগুলোর সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। এ বাড়ির অধিকাংশ সদস্য শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। রায়বাড়ির মন্দিরসহ পুরোনো স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক বা নৌপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া যাওয়া যায়। নৌপথে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল যাওয়া যায়।
বরিশাল থেকে যে কোনো স্থানীয় পরিবহনে মঠবাড়িয়া যেতে পারবেন। মঠবাড়িয়া থেকে মিরুখালি গেলে দেখা মিলবে শতবর্ষে রায়বাড়ির দুর্গামন্দির।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বাঁশ-কাঠের তৈরি ‘রূপগাঁও রিসোর্টে’
সড়কপথে গেলে আগের দিন রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পরের দিন সকালে পিরোজপুর পৌঁছে সারাদিন ঘুরতে পারবেন। এরপর আবার রাতের গাড়িতে রওনা দিয়ে পরেরদিন সকালে পৌঁছে যাবেন ঢাকায়।
যেখানে থাকবেন
মঠবাড়িয়ায় বেশি কিছু হোটেল ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় রাতযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
মঠবাড়িয়ায় ভালো মানের কিছু রেস্তোরাঁ আছে। সুযোগ থাকলে পিরোজপুরের রসগোল্লা, রসমালাই ও রসমঞ্জুরি খেতে পারেন।
জেএমএস/এমএস