আন্তর্জাতিক

৭০ বছর পর যুক্তরাজ্যে রাজ্যাভিষেক, ঐতিহাসিক দিনে ব্যাপক আয়োজন

৭০ বছর পরে যুক্তরাজ্যে আবারও আয়োজিত হচ্ছে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান। স্থানীয় সময় শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে নানা আযোজন। রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানি ক্যামিলাকে ঘোড়ার গাড়িতে করে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি।

Advertisement

বৃষ্টির পূর্বাভাস সত্ত্বেও রাজার বাহন যে পথে যাবে, সেখানে এরই মধ্যে ভিড় করতে শুরু করেছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। প্রায় ১০০টি দেশের প্রধানের উপস্থিতি ঘিরে সেন্ট্রাল লন্ডনে থাকছে ব্যাপক নিরাপত্তা।

অভিষেক অনুষ্ঠান চলবে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। এটি সামনাসামনি দেখার সুযোগ পাবেন ২ হাজার ৩০০ জন বিশেষ অতিথি।

রাজার দস্তানা ও বেল্ট। ছবি সংগৃহীত

Advertisement

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে তার সন্তান চার্লস যুক্তরাজ্য ও আরও ১৪টি রাষ্ট্রের রাজার স্বীকৃতি পান গত সেপ্টেম্বরে। তার অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে পরের কয়েক মাস ধরে চলে ব্যাপক পরিকল্পনা। 

যুক্তরাজ্যে সবশেষ রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে, যখন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাথায় মুকুট পরানো হয়েছিল।

অভিষেকের আগমূহুর্তে রাজাকে বেশ শান্তই মনে হয়েছে। কড়া নিরাপত্তাসহ ওয়েলসের প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে নিয়ে মলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে তাকে।

অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজার পোশাক। ছবি সংগৃহীত

Advertisement

শনিবার অনুষ্ঠান হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই রাজপথের পাশে ভিড় জমাতে শুর করেন দর্শনার্থীরা। পথের দু’ধারে দেখা যেতে থাকে শত শত তাবু। সবাই হাজির হয়েছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার আশায়।

রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করবেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় রয়েছেন মার্কিন ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন থেকে শুরু করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর মতো নেতারা।

এই গাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হবে রাজা-রানিকে। ছবি সংগৃহীত

রয়েছে বিতর্ক

তবে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাইকে রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকারে শপথ নিতে হবে কি না তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চার্চ অব ইংল্যান্ড অবশ্য বলেছে, ব্যাপারটি ঐচ্ছিক।

রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান বার্তা থাকবে তার প্রথম প্রার্থনাতেই। তিনি অ্যাবেতে পৌঁছে উচ্চারণ করবেন: ‘আমি সেবা পেতে নয় বরং দিতে এসেছি।’

অনুষ্ঠান ঘিরে লন্ডনজুড়ে কড়া নিরাপত্তা। ছবি সংগৃহীত

অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত হলো রাজার মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ডস মুকুট পরানো। সেই সময় অ্যাবের ঘণ্টা বাজবে এবং পাশে থাকা হর্স গার্ড প্যারেড থেকে গান স্যালুট দেওয়া হবে।

রাজার সঙ্গে সঙ্গে মুকুট পরানো হবে রানি ক্যামিলাকেও। এই জুটির দীর্ঘ ও কিছুটা জটিল সম্পর্কের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখন ‘কুইন ক্যামিলা’ হিসেবে সম্বোধন পাবেন।

অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ভিড় করেছেন দর্শনার্থীরা। ছবি সংগৃহীত

বৈচিত্র্যময় আয়োজনঅনুষ্ঠানটি যতেটা সম্ভব বৈচিত্র্যপূর্ণ করা হচ্ছে এবং আগের যে কোনো অভিষেক অনুষ্ঠানের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় বিশ্বাসের উপস্থিতি থাকছে। ইহুদি, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং শিখ প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

বাইবেল থেকে পাঠ করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, যদিও তার ধর্ম হিন্দু। সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে ওয়েলস, স্কটিশ ও আইরিশ ভাষায়।

হাজার বছর ধরে চলা এই অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো কোনো নারী বিশপ অংশ নেবেন।

শেষমুহূর্তের মহড়া। ছবি সংগৃহীত

আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে ব্রিটিশ সময় আনুমানিক দুপুর ১টায়। এরপর রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা স্বর্ণখচিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাকিংহাম প্যালেসে ফেরত যাবেন। প্রায় এক মাইল পথ পাড়ি দেওয়ার সময় সঙ্গে থাকবে চার হাজার সৈন্য এবং ১৯টি ব্যান্ডদল।

প্রাসাদে পৌঁছানোর পরে ঐতিহ্য অনুসারে ব্যালকনিতে রাজা ও রানির সঙ্গে আর কে কে থাকবেন সেটি এখনো জানা যায়নি। তবে তারা যখন ব্যালকনিতে দাঁড়াবেন, সেসময় আকাশে যুদ্ধবিমানের একটি বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলাকেএএ/