লাইফস্টাইল

গরমে কেন বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা? কোন লক্ষণে সতর্ক হবেন

শুধু শীত নয়, গরমেও বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। বিশেষ করে আপনার যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে তাহলে গরমে সতর্ক থাকা জরুরি।

Advertisement

এক সমীক্ষা অনুসারে, খুব উচ্চ তাপ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। ফলে একজন ব্যক্তির হার্ট দ্রুত স্পন্দিত হয় ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য যারা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন, তাদের উচিত ভরদুপুরে বাইরে বের না হওয়া ও পর্যাপ্ত পানি পান করা।

আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক বুঝলে দ্রুত যা করবেন

ইউরোপীয় হার্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ১৯৮৭-২০১৪ সালের মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার হার্ট অ্যাটাকের রোগীর তথ্য রেকর্ড করা হয়। এরপর দেখা যায়, ২০০১-২০১৪ সালের মধ্যে যখন গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল, তখন হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যাও বেড়ে যায়।

Advertisement

আসলে গরমে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে রক্ত আরও পাম্প করার জন্য হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যা হৃদরোগের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে ও গ্রীষ্মকালীন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এ বিষয়ে ভারতের ফরিদাবাদের কিউআরজি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কার্ডিওলজির পরিচালক ডা. গজিন্দর কুমার গয়াল বলেন, ‘তীব্র এই গরমে সবারই উচিত হার্টের যত্ন নেওয়া। বিশেষ করে বয়স্ক, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ইতিহাসে আক্রান্তদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

আরও পড়ুন: গোসলের কোন ভুলে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক জানালো গবেষণা

হার্ট অ্যাটাক কীভাবে হয়?

Advertisement

শরীরের ছোট্ট এক অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। আকারে ছোট ও ভেতরে ফাঁপা। হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলোর প্রয়োজন হয় নিজস্ব রক্তের সরবরাহ। শরীরের বাকি অংশের মতো হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টির দরকার পড়ে।

এ কারণে হৃদযন্ত্র করোনারি ধমনীর মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। হৃৎপিণ্ড যখন তার কাজ ঠিকমতো করতে পারে না, তখন হার্ট ফেইলিওর হয়। একজন ব্যক্তির শ্বাস যতক্ষণ চলে ততক্ষণ তার হৃদস্পন্দনও চলতে থাকে।

যখন ওই ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যায়, তখন হৃদস্পন্দনও থেমে যায়। আর তখনই ওই ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যখন হৃৎপিণ্ডের রক্তের ধমনীর ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় তখন রক্ত প্রবাহ না হওয়ায় হার্ট অ্যাটাক হয়।

আরও পড়ুন: মিনি হার্ট অ্যাটাকে ১০ মিনিটেই হতে পারে মৃত্যু, জানুন লক্ষণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩০-৪০ বছর বয়সীদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের ঝুঁকি বেশি। নারীদের তুলনায় ছেলেদের সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের সমস্যা প্রায় দ্বিগুণ।

তবে যাদের হার্টের অসুখ আছে তারা যদি নিয়মিত ওষুধ না খান, প্রেশার, সুগার নিয়ন্ত্রণ না করেন তাদের এই সমস্যার ঝুঁকি অনেক বেশি।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?

বুকে ব্যথা হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক ও গুরুতর এক লক্ষণ। যদি আপনি মনে করেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তাহলে দ্রুত জরুরি নম্বরে বা চিকিৎসা সহায়তার জন্য কল করুন। বুকে ব্যথা ছাড়া আরও যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে-

আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও ফেইলিওরের মধ্যে পার্থক্য

>> বুকের মাঝখানে একটি চাপ অনুভূতি>> কাঁধ, বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল, দাঁত বা উপরের পেটে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে>> বমি বমি ভাব, বদহজম, অম্বল বা পেটে ব্যথা>> নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও হাঁপিয়ে ওঠা>> হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ও>> ঘাম।

হার্ট অ্যাটাকের কারণে সাধারণত ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে বুকে ব্যথা হয়। কিছু লোকের বুকে হালকা ব্যথা হয়, আবার কারও ব্যথা বেশি তীব্র হতে পারে। নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো আরও অস্পষ্ট থাকে।

আরও পড়ুন: স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম ২ কারণ জানালো গবেষণা

তাদের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা পিঠে বা চোয়ালের ব্যথা হতে পারে। কিছু কিছু হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করেই হতে পারে। আবার অনেকেরই কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন আগে সতর্কতা চিহ্ন প্রকাশ পায়।

আপনার বা অন্য কারো হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত যা করবেন

প্রথমেই স্থানীয় জরুরি নম্বরে কল করুন। হার্ট অ্যাটাকের কোনো উপসর্গ উপেক্ষা করবেন না। কোনো বিকল্প না থাকলে নিজেই দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান কিংবা কোনো গাড়িতে উঠে চালককে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে বলুন।

জরুরি সাহায্য চাওয়ার পরপরই একটি অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ খেয়ে নিন। অ্যাসপিরিন রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। হার্ট অ্যাটাকের সময় অ্যাসপিরিন খেলে হার্টের ক্ষতি অনেকটা কমে। যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে অ্যাসপিরিন খাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাকের মারাত্মক লক্ষণ ও দ্রুত করণীয়

যদি কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে দ্রুত তাকে সিপিআর দিন, তাহলে তার প্রাণ বাঁচবে। যদি তিনি শ্বাস না নেন কিংবা পালস খুঁজে না পান তাহলে শরীরের রক্ত প্রবাহিত রাখতে সিপিআর দিন বারবার।

ব্যক্তির বুকের মাঝখানে জোরে ও দ্রুত ধাক্কা দিন। প্রতি মিনিটে প্রায় ১০০-১২০ কম্প্রেশন হতে হবে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন। এই কয়েকটি উপায় অনুসরণ করে আপনি নিজের এমনকি অন্যের জীবনও বাঁচাতে পারেন।

সূত্র: মায়োক্লিনিক/হিন্দুস্তান টাইমস

জেএমএস/এএসএম