মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগের নামে পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। মানবপাচার বন্ধ করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে, নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ (এনএসআই)।
Advertisement
শ্রম ও অভিবাসন বিষয়ে কাজ করে নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা শুক্রবার (৫ মে) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অভিবাসীকর্মী নিয়োগ থেকে অবৈধ মুনাফা অর্জনকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হবেন।
পেরেইরা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ব্যক্তিগতভাবে মানবপাচার এবং বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২০২২ সালের ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) প্রতিবেদনে মালয়েশিয়াকে যে টায়ার ৩ র্যাঙ্কিংয়ে অবনমন করা হয়েছে সে সম্পর্কে এ অভিবাসী অধিকার কর্মী বলেছেন।
এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে পাচারের শিকারদের সঙ্গে কথা বললে প্রধানমন্ত্রী এমন এজেন্টদের শনাক্ত করতে পারেন যারা অভিবাসী কর্মী নিয়োগ থেকে অবৈধভাবে লাভবান হয়েছে।
Advertisement
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ, পাসপোর্ট ও ডকুমেন্ট আটকে রাখা, প্রাপ্য বেতন ও সুবিধা না দেওয়া, বাজে অভিবাসনকে মানবপাচার এবং জোরপূর্বক শ্রম বলে চিহ্নিত করেছে।
এসব দোষে মালয়েশিয়ার কিছু উৎপাদক এর ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে মালয়েশিয়ার সরকার শ্রম অবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল বলেছেন, সরকার গত বছরের টিআইপি প্রতিবেদনে টায়ার ৩ র্যাঙ্কিং থেকে মালয়েশিয়ার অবস্থা উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১৭ সালে, মালয়েশিয়াকে টায়ার ২-এ রাখা হয়েছিল, যার অর্থ হলো যদিও মালয়েশিয়া সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যূনতম মানগুলো মেনে চলেনি তবে তারা উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করেছে।
২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত র্যাঙ্কিং টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে নেমে এসেছে। এর মানে সরকার ন্যূনতম মানগুলো মেনে চলার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা করেছে, তবে একইসঙ্গে পাচারের শিকারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement
মালয়েশিয়া ২০২১ এবং ২০২২ সালে টায়ার ৩ এর সর্বনিম্ন র্যাঙ্কে নেমে এসেছে। টিআইপি প্রতিবেদনে টায়ার ৩-এ র্যাঙ্ক করা মানে সরকার মানদণ্ড মেনে চলে না এবং মানবপাচার মোকাবিলায় ন্যূনতম মানগুলো মেনে চলার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টাও করে না।
পেরেইরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই মাঠে এসে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে হবে। আমি নিশ্চিত যে নিয়োগকর্তা এবং এজেন্টরা সরকারের ভেতরে এবং বাইরে উভয় দিক থেকে কারা কাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তা খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন।
মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের ওপর। যতক্ষণ পর্যন্ত কোম্পানি এবং এজেন্টরা অভিবাসী শ্রমিক বা পাচারের শিকারদের সুবিধা নেবে, ততক্ষণ স্থানীয় শ্রমিকের সাধারণ সুযোগ সুবিধা প্রভাবিত হবে।
‘ফলে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে যাব কারণ আমরা একটি নিম্ন-মজুরি-নির্ভর দেশ হয়ে উঠছি এবং একটি উচ্চ দক্ষ শ্রমশক্তিতে পরিণত হতে পারব না,’ তিনি বলেছিলেন।
প্রাক্তন ক্লাং এমপি চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের উচিত মানবপাচার মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া কারণ এটি সভ্য মালয়েশিয়া ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি বলেছিলেন, মালয়েশিয়া এখনও তার টায়ার ৩ টিআইপি র্যাঙ্কিং থেকে সরে যেতে ‘দীর্ঘ পথ’ পাড়ি দিতে হবে। ‘প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সান্তিয়াগো বলেছেন একটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দেখাতে হবে যে আপনার কাছে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা রয়েছে, যেটি প্রয়োগের বৃদ্ধি এবং আদালতে আনা মানবপাচার মামলার সংখ্যা দেখায়।
সান্তিয়াগো বলছেন, মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে দরকার একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা।
এমআরএম/এমএস