আবারও ফারাক্কার পানিচুক্তি নিয়ে মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, তাকে ফারাক্কা ও বাংলাদেশ নিয়ে ততই সরব হতে দেখা যাচ্ছে।
Advertisement
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জে গঙ্গার ভাঙনকবলিত এলাকা দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে এক প্রশাসনিক সভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে। নদীর গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে বলা মুশকিল।
এরপর ফারাক্কা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ফারাক্কা ব্যারেজ সংক্রান্ত সমস্যা অনেক দিনের। ফারাক্কার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের, পশ্চিমবঙ্গের নয়। তা সত্ত্বেও আমি অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু ওরা আমাদের কোনো সাহায্য তো করেইনি, উল্টো ইন্দো-বাংলা পানিচুক্তি যখন হয়, ৭০০ কোটি রুপি পাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের উন্নয়নের জন্য। আজ পর্যন্ত এক পয়সা দেয়নি।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশকে পানি দিলে আমার আপত্তি নেই: মমতা
Advertisement
তিনি বলেন, এই চুক্তি ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এইচ ডি দেবগৌড়া যখন (ভারতের) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু গঙ্গার ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকার এক টাকাও দেয়নি। অথচ রাজ্য সরকার এ বিষয়ে এক হাজার কোটি রুপি খরচ করেছে।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, গঙ্গা ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ- এগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। ওরা রাজনীতি নিয়ে যতটা মাথা ঘামায়, দাঙ্গা নিয়ে, প্ররোচনা নিয়ে, কুৎসা নিয়ে, অত্যাচার নিয়ে মাথা ঘামায়, সেটা যদি সঠিক কাজে লাগাতো, তাহলে এই প্রকৃতি রূপসী বাংলার রূপে আরও রূপান্বিত হতে পারতো।
আরও পড়ুন>> কেন্দ্রীয় সরকারে পরিবর্তনের ডাক মমতার
ফারাক্কা বাঁধ। ফাইল ছবি
Advertisement
এর একদিন আগে, গত বৃহস্পতিবার মালদায় এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ফারাক্কায় গঙ্গার পানি বাংলাদেশকে দিলে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাজিকে ভালোবাসি।
মূলত ফারাক্কায় গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের সময় যত ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে ততই সরব হচ্ছেন মমতা। তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফারাক্কার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নিয়মিত বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন।
আরও পড়ুন>> হঠাৎ বাংলাদেশিদের নিয়ে স্মৃতিকাতর মমতা
বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, গঙ্গার ভাঙন ১০০ বছর ধরে চলছে, সবাই এসেছে চলে গেছে। কিছুই করেনি। অথচ গঙ্গার ভাঙন বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, আমাদের (রাজ্য সরকারের) অধীনে নেই। ফারাক্কা- সেটাও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। তুমি (কেন্দ্রীয় সরকার) আমাদের পানি বাংলাদেশকে দিলে আমার আপত্তি নেই, আমি হাসিনাজিকে ভালোবাসি। কিন্তু আমাকে যে তার পরিবর্তে ৭০০ কোটি রুপি দেবে বলেছিলে, আমার সরকারকে, আমার বাংলা গভর্নমেন্টকে, তার এক পয়সাও তো দিলে না। বলতে বলতে গলা ব্যথা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, হয়তো কেউ ভাবতে পারেন আপনি প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদীর) সঙ্গে গিয়ে দেখা করছেন না কেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বহুবার তার কাছে গিয়েছি। কিছুই দেয় না, শুধুই নেয়।
আরও পড়ুন>> ভারতের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা
আগামী চার বছরের মধ্যে (২০২৬ সালে) ৩০ বছরের ফারাক্কা পানিচুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এ অবস্থায় পানিচুক্তির পরিবর্তে বকেয়া অর্থের (৭০০ কোটি টাকা) দাবি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে মমতার। ভাগীরথী নদীতেও তার অতিরিক্ত পানির দাবি শেষপর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেএএ/