কৃষি ও প্রকৃতি

পটুয়াখালীতে নিরাপদ মুগডাল উৎপাদন

মুগডালের ফলন বাড়াতে এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ফসলের মাঠে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে কৃষকদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে আগ্রহী করতে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগ। সম্প্রতি মুগডালের একাধিক ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বেশ কিছু টেকসই প্রযুক্তি কৃষকদের মাঠে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে মুগডালের ফলন বৃদ্ধির পাশপাশি পরিবেশগত ভাবে কৃষক লাভবান হবেন বলে মনে করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুগডাল চাষ হয় পটুয়াখালীতে। এ বছর ৮৫ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমিতে মুগডাল আবাদ করা হয়েছে। এই ডাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মাঠে মুগডালের বালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরাসরি কৃষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

কীটতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা বলছেন, কীভাবে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব সে বিষয়ে তারা কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মুগডালের ক্ষেতে ফেরোমন ফাঁদ এবং ব্লু স্টিকি ফাঁদের ব্যবহার নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে মুগডালের ফল ছিদ্রকারী পোকাসহ বেশ কয়েক ধরনের পোকা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: থাই পেয়ারা চাষে সফল নাটোরের দুই ভাই 

Advertisement

সম্প্রতি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের এক মাঠে মুগডাল চাষের ওপর এক মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। সেখানে শতাধিক কৃষকের জৈব বালইনাশকের ব্যবহার ও উপকারিতার বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশের ফসলের মাঠে কৃষকরা জৈব বালাইনাশকের বিভিন্ন পদ্বতি ঘুরে ঘুরে দেখেন।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল কুমার দত্ত বলেন, ‘কীটনাশকের যাচ্ছেতাই ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর পোকার পাশপাশি বিভিন্ন উপকারী পোকাও মারা পড়ছে। ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া কীটনাশক কিনতে গিয়ে যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আমরা কৃষকদের বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলছি।’

এদিকে এবার মাঠে এই প্রযুক্তি ব্যবহার ফলে মুগডালের ভালো ফল পাওয়া গেছে বলে জানান কৃষকরা। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় যেমন কমেছে; তেমনি নিরাপদ ডাল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে বলে জানান। শ্রীরামপুর এলাকার কৃষাণী পুতুল রানী বলেন, ‘আগে আমরা পোকা দমনে একাধিক কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এরপরও পোকা মরতো না। এখন একবারেই পোকা মারা যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন: গম চাষে স্বপ্ন দেখছেন শার্শার কৃষকেরা 

Advertisement

সোবাহান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা এখন বিষমুক্ত খাবার পেলাম। পোকা মারতে কোনো ব্যয় হচ্ছে না। আগে টাকা খরচ করে কীটনাশক কিনলেও পোকা মারা যেত না। এখন মোটামুটি ভালোভাবেই পোকা দমন হচ্ছে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘জাতীয় ভাবে ডালের যে গড় উৎপাদনশীলতা, এ অঞ্চলের মুগডালের উৎপাদনশীলতা তার চেয়ে বেশি। ফলে এ ধরনের বালাই ব্যবস্থাপনাসহ নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে মুগডাল চাষে কৃষকদের আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে দেশে ডালের আমদানি নির্ভরতাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

দেশের সবচেয়ে বেশি মুগডাল পটুয়াখালীতে চাষ হলেও সম্প্রতি অন্য ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মুগডাল চাষের জমির পরিমাণ কিছুটা কমেছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

আব্দুস সালাম আরিফ/এসইউ/জিকেএস