বাজারে নতুন করে তেল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, ঈদুল ফিতরের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও কমেনি। সবমিলিয়ে এখন বাজার করতে গিয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ।
Advertisement
শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর রামপুরা বাজারে মাসওয়ারী বাজার করতে এসে একরামুজ্জামান নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বাজার যেন মধ্যবিত্তদের জন্যও আতঙ্কের জায়গা হয়ে গেছে। মাসের ফর্দ কাটছাঁট করতে করতে এমন অবস্থায় ঠেকেছে যা না হলেই চলে না। তারপরও কুলানো যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ভালো খাবার ছেড়ে সস্তা খাবার খুঁজতে হচ্ছে এখন। আমিষ প্রোটিন ভিটামিন এগুলো কী খাওয়া না খাওয়া দরকার, সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হচ্ছে শুরু দামের চোটে। বিলাসী পণ্য কেনা বাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এখন কেনা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন> চিনির দামে রেকর্ড, কেজি ১৪০ টাকা
Advertisement
সরেজমিনে আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আট ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেল ও চিনির দাম।
খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি কিনতে হলে খুঁজতে হচ্ছে দুই-চার দোকান। কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম আরও বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিপ্রতি। যা গত সপ্তাহে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে ছিল।
অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন তারা ঈদের পর থেকে কোন চিনির সরবরাহ পাননি। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ১২ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের লিটারে লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ৫৪ টাকা। এছাড়া পাম সুপার ওয়েলের দাম লিটারে বাড়ানো হয়েছে ১৮ টাকা।
Advertisement
এখন বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটারের দাম ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তেল-চিনির পাশাপাশি চোখ রাঙ্গাচ্ছে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন। ঈদের পর থেকে মসলাজাতীয় পণ্য তিনটির দামও বেড়েছে হু হু করে। আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। যা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে আমদানি করা চায়না রসুনের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর দেশি রসুনের কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। রোজার ঈদের দুই-এক দিন পরও চায়না রসুনের কেজি ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। আর দেশি রসুন বিত্রিক্র হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
পাশাপাশি দর বেড়েছে আদার। দেশি আদা ২০০ থেকে ২২০ এবং আমদানি করা চায়না আদার কেজি ২৮০থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও দেশি আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং আমদানি করা আদার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ছিল।
অন্যদিকে, বাজারে ঈদের মধ্যে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। এর সঙ্গে গত দুই দিন ধরে বাড়ছে ডিমের দাম। ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
এ ছাড়া বাজারে ঈদের পরে আলুর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সারাবছরই স্থিতিশীল থাকলেও মৌসুমের শুরুতে আলুর অস্থিতিশীল বাজারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা।
দফায় দফায় দাম বেড়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।
আরও পড়ুন> লিটারে ১২ টাকা বেড়ে সয়াবিনের দাম হলো ১৯৯
কারওয়ান বাজারে ক্রেতা সোহাগ হোসেন বলেন, এ বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে সবজি জাতীয় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যা দেখার কেউ নেই।
অন্যদিকে, বাজারে সবজির দামও অনেক চড়া। পেঁপের কেজিও ৬০ টাকায় ঠেকেছে। এ দামের নিচে কোনো সবজি মিলছে না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটল ৫০-৮০ টাকা, সজিনা ১২০-১৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, ‘সব সবজি কিনতেই লাগছে বেশি, বেচবো কমে কেমনে? সারাদেশে বৃষ্টিবাদল হচ্ছে এ জন্য সবজির সরবরাহ কম। আর এ বছর সবজির আবাদও কম হয়েছে বলে জানি।’
এনএইচ/এসএনআর/জিকেএস