দেশজুড়ে

পাহাড়ে পানির তীব্র সংকট

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। পাহাড়ের বাসিন্দারা সাধারণত ছড়ার পানি দিয়ে তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। এছাড়া ছড়া ও কূপের পানি পান করেন। কিন্তু বছরের এই শুকনো মৌসুমে পাহাড়ের ছড়া ও কূপগুলো শুকিয়ে যায়। এতে করে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভোগেন এসব পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার কুতুবছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা হেডম্যান পাড়া। যা রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পাহাড়ি পথ। এ গ্রামে প্রায় ১২৬টি পরিবারের পাঁচশো মানুষের বসবাস। যারা প্রায় সবাই কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামের এসব মানুষ কৃষিকাজসহ পানের জন্য গ্রামের পথ ধরে বয়ে যাওয়া একটি ছড়ার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু শুকনো মৌসুমে ছড়াটি শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পানি সংকটে ভুগছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কৃষিকাজের জন্যও পাচ্ছেন না পানি। শুধু এই গ্রামটি নয়, এরকম আরও বেশকিছু গ্রামে দেখা দিয়েছে পানির সংকট।

দুর্গম পাহাড়ে বসবাসের কারণে সারাবছর এসব গ্রামবাসীকে স্থানীয় ঝিরি-ঝরনার পানির ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করতে হয়। বর্ষার সময় থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও গ্রীষ্মের এই মৌসুমে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়। সরকারের উদ্যোগে দুর্গম কিছু পাহাড়ি গ্রামে রিংওয়েল ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও শুকনো মৌসুমে এসব থেকেও পানি পাওয়া যায় না।

গ্রামবাসী আশপাশের নিচু জায়গায় কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করলেও শুকনো মৌসুমে এসব কূপ শুকিয়ে যায়। যে কারণে পানি সংগ্রহে অনেক পথ হেঁটে পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করেন অনেকে। আবার অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পাশের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করে আনেন।

Advertisement

জানা যায়, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়ে বসবাসের কারণে গভীর নলকূপও স্থাপন করা সম্ভব হয় না। কিছুটা নিচু জায়গায় পানির স্তর পাওয়া গেলেও সেখান থেকেও পানি সংগ্রহ করতে কষ্ট হয় এসব মানুষের। শুকনো মৌসুমে ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এখানে পানির স্তর পাওয়া যায় না।

ঝিরি-ঝরনার পানির ওপর নির্ভরশীল এসব গ্রামের মানুষ বলছেন, নির্বিচারে বন উজাড়, সেগুন গাছের আধিপত্যসহ আরও নানান অনিয়মের কারণে শুধু বর্ষা মৌসুমেই ঝিরি-ঝরনাগুলোতে পানি পাওয়া যায়। শুকনো মৌসুমে পোহাতে হয় পানির তীব্র কষ্ট।

কুতুবছড়ির বাসিন্দা প্রতিম চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামের সব মানুষ ছড়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। শুকনো মৌসুমে তীব্র পানি সংকটে আমরা খাবারের পানিও পাচ্ছি না। পরিবারের লোকেরা অনেক কষ্ট করে পাশের গ্রাম থেকে পানি সংগ্রহ করে আনে।

বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জ্ঞানপ্রভা চাকমা বলেন, আমাদের গ্রামটি পাহাড়ের ওপর হওয়ায় এখানে কোনো নলকূপ নেই। আমরা পাহাড়ের নিচে একটি কূপের পানি পান করি সাধারণত। কিন্তু এখন কূপেও পানি নেই। ফলে আমাদের অনেকখানি পথ হেঁটে হ্রদ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনতে হয়।

Advertisement

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসারে পানির স্তর বর্তমানে থাকার কথা ৮১ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। কিন্তু কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হ্রদে পানির স্তর রয়েছে ৭৬ এমএসএল। অর্থাৎ পাঁচ ফুট পানি কম রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে। কাপ্তাই হ্রদে সর্বনিম্ন পানির স্তর ৬৮ এমএসএল।

রাঙ্গামাটি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে পানির ব্যবস্থা করা সমতলের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। মূলত সমতলের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিরসন করা সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ও পাথুরে এলাকা হওয়ায় ভুগর্ভস্থ পানির স্তর সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের মধ্য দিয়েও পুরোপুরি পানি সংকট সমাধান সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সাধারণ মানুষের কাছে খাবার পানি পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সাজেকে পানির কষ্ট সবচেয়ে বেশি। সেখানে পাইপ নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে পাম্প হাউজ, বুস্টার হাউজ স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় সোলারের মাধ্যমে সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলনের চেষ্টা চলছে। জেলায় ৫৭-৫৮ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় এসেছে বলে জানান এই কর্মকতা।

এফএ/এএসএম