দেশজুড়ে

আজমতের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর গাজীপুর মহানগরীর আটটি থানায় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছেন। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

Advertisement

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকদের নৌকার প্রার্থী আজমতের পক্ষে মাঠে নামানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ওইসব নেতাকর্মীদের মান-অভিমান ভেঙে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকেন তারা। অবশেষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতায় তাদের সে চেষ্টা ফল পেতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে অনেক নেতাকর্মী সিটি নির্বাচনে আজমত উল্লাহর পক্ষে কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আজমতের বাসভবনে গিয়ে ভোটের মাঠে তার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু দল করি তাই দলের প্রতি আনুগত্য থাকতেই হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত মানা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাছাড়া গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার পর মাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি পদগুলো শূন্য আছে। রাজনীতিতে থাকতে হলে পদ-পদবি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে মহানগর কমিটিতে পদ-পদবি পাওয়া যাবে না।

অপর এক নেতা বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হওয়ার পর ফের দলে ফিরে আসার পর আমরা ভেবেছিলাম তিনি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু তিনি তা পাননি। এমতাবস্থায় দলীয় প্রার্থী ও প্রতীকের পক্ষে আমাদের কাজ করতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় আমাদের একটা অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থান ধরে রাখতে হলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

Advertisement

অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় জাতীয় পার্টির শিবিরে মেয়র পদে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

গত শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী বিজয়ী হবেন।

তিনি বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এরইমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রার্থী দিয়েছি। জনগণ ও আমাদের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, আমরা বিজয়ী হবো।

তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত বলেও দাবি করেন জাপা চেয়ারম্যান। জিএম কাদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বলছেন, তারা ভোট দিতে পারবেন তো? ভোট দিলেও ফলাফল কি তাদের দেওয়া ভোট গুনে প্রকাশ করা হবে? এ কথাগুলো সাধারণ ভোটাররা আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। সঠিকভাবে নির্বাচনে ভোট হবে কি না, বাধাগ্রস্ত হবো কি না- এসব প্রশ্ন সাধারণ জনগণের। এ কারণেই মানুষের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর অনাস্থা।’

Advertisement

গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ সিটিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের প্রধান বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় নৌকার বিপরীতে মানুষ লাঙলেই ভোট দেবে বলে প্রত্যাশা।

এম এম নিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, আমি সচিব থাকা অবস্থায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক বড়বড় কাজ করিয়েছি। স্বাস্থ্য ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। সিটি করপোরেশনের জন্য ফান্ড আনতে বিভিন্ন দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে জানাশোনা আছে। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারবো। জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবো।

এদিকে, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আজমত উল্লাহ আর জাহাঙ্গীর বিরোধে সুবিধা নিতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান জাগো নিউজকে বলেন, মেয়র নির্বাচনে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ আছে। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। সবাই মিলে নৌকার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হবে। সিটির জনগণ শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবে।

জাতীয় পার্টি ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আলম মামুন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, হারুন অর রশীদ, সরকার শাহনুর ইসলাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।

ইভিএমে আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৯ জন মেয়র প্রার্থী, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৭৬ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৮ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম জানা যাবে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরআর/এমএস