সারাদেশের মতো ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে। এ স্বাস্থ্যসেবার একমাস পার হলেও প্রচারণার অভাবে দেখা মিলছে না রোগীর। একজন করে চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। বৈকালিক সেবা কার্যক্রমেও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ দেখা গেছে চিকিৎসকের কক্ষে।
Advertisement
রোববার (৩০ এপ্রিল) গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। রোগীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বৈকালিক চিকিৎসাসেবার কক্ষ খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালের একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা মেলে মেডিকেল অফিসার ডা. নাইমা আফরিন তৃষার। তিনি ২২ মাস বয়সী সিদরাতুল মুনতাহা নামের এক শিশুকে দেখছিলেন। ওই শিশুর সঙ্গে ছিলেন দুই নারী ও এক পুরুষ। এসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং ইনচার্জ রওশন আরা খাতুন মেডিকেল অফিসারের সহকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। পরে আর কোনো রোগী আসতে দেখেননি এ প্রতিবেদক।
সিদরাতুল মুনতাহার চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে এলে কথা হয় তার বাবা আব্দুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের হাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
আব্দুল হাকিম বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাচ্চার ডায়রিয়া ও পেটব্যথা শুরু হয়। এজন্য তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে দেখানোর পর ২০০ টাকা ফি নিয়েছে। তবে, চিকিৎসক ভালো করেই দেখেছেন। আমি মনে করি সারাদেশের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এমন বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করা দরকার। তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ অল্প টাকায় ভালো চিকিৎসাসেবা পেতো।’
Advertisement
আবারও চিকিৎসকের কক্ষে এসে দেখা যায়, এক ব্যক্তি কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন। জানতে চাইলে নিজেকে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বলে পরিচয় দেন। এখানে কেন আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ইমার্জেন্সি থেকে একজন আমাকে পাঠিয়েছেন। মেডিকেল অফিসার ডা. নাইমা আফরিন তৃষা আছেন কি না দেখতে। এছাড়া এখানে কোনো কাজ নেই আমার। তবে, ওই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ তার নাম প্রকাশ করেননি।
নার্সিং ইনচার্জ রওশন আরা খাতুন বলেন, কয়েকদিন হলো হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। তাই, রোগী কম আসে। এখানে কেমন সুযোগ- সুবিধা পাওয়া যায়, তা মানুষ জানে না। সুযোগ-সু্বিধাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছালে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে আসবে।
মেডিকেল অফিসার ডা. নাইমা আফরিন তৃষা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয়। আজ মাত্র একজন রোগী আসছে। সপ্তাহে চারদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দুদিন মেডিকেল অফিসার রোগী দেখেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি ৩০০ টাকা ও মেডিকেল অফিসারের ফি ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে, মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও রোগী কম আসে। তাছাড়া, বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে মাত্র কয়েকদিন হলো। বিষয়টি সম্পর্কে নিয়মিত প্রচারণা চালালে মানুষ জানতে পারবে। তখন রোগীও বাড়বে।’
Advertisement
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কথা হয় ব্রহ্মপুত্র কনফেকশনারির মালিক মহিবুর রহমানের সঙ্গে। হাসপাতালের গেট থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরে ব্রহ্মপুত্র কনফেকশনারি।
মহিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো প্রচারণা বা মাইকিং করতে শুনিনি। ভেতরে গিয়ে দেখেছি বিকেলে একজন ডাক্তার রোগী দেখেন।’
হাসপাতাল গেটের পাশেই চা বিক্রি করেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। কোনোদিন মাইকিং বা প্রচারণা করেছে বলেও দেখিনি।’
এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন খান মানিক বলেন, ‘এখানে নিয়মিত রোগী দেখা হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এটাতো টেলিভিশনেও প্রচার করছে। তাছাড়া রমজান মাসে এই সেবাটা চালু হয়েছে। তখন তো মাইকিং করা হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে মাইকিং করেও প্রচারণা করা হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করবে কতজন চিকিৎসক বৈকালিক সেবা দেবেন।
তিনি আরও বলেন, বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে অনেক দিন হলো। তারপরও যদি মানুষ না জেনে থাকে তাহলে প্রচারণা চালাতে হবে। এ কাজে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল সরকারের এ প্রচেষ্টা সফল হবে।
গত মার্চ গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু হয়। প্রথমদিন তিন ঘণ্টায় তিনজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/জিকেএস