দেশজুড়ে

‘কাম করলে পেটোত ভাত যায়, না করলে নাই’

‘হামরা (আমরা) গরিব মানুষ। মানষের জমিত (জমিতে) কাম করি খাই। কিসের হামার (আমার) দিবস-টিবস। কাম করলে হামার পেটোত (পেটে) ভাত যায়, না করলে নাই। হামরা এগলে দিবস কী করি (আমরা এ দিবস দিয়ে কী করবো)?’

Advertisement

মে দিবসের বিষয়ে জানতে চাইলে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর সাজু মিয়া।

দিনমজুর সাজু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরে। তার বাপ-দাদার অনেক জমি ছিল। ছিল গোয়ালভরা গরু-ছাগল। একবার দুবার নয়; সাত সাতবার ভিটেমাটিসহ আবাদি জমি সর্বগ্রাসী তিস্তার পেটে চলে গেছে। তিস্তা নদীই রাতারাতি পরিবারটিকে নিঃস্ব বানিয়েছে।

তিস্তা এখন অনেকের জন্য আশীর্বাদ হলেও সাজু মিয়াদের জমিতে এখনো কোনো ফসল হয় না। তাইতো সাজু মিয়া দিনমজুরি করে সাত সদস্যের সংসার চালান। যদি কখনো কাজ না পান, তাহলে অসুস্থ মায়ের ওষুধও কিনতে পারেন না তিনি।

Advertisement

এ গল্প শুধু দিনমজুর সাজু মিয়ার একার নয়; দারিদ্র্যপীড়িত গাইবান্ধা জেলার হাজার হাজার মানুষের গল্প এটি। তিস্তার করাল গ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই সাজু মিয়ার মতো দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

মজির উদ্দিন নামের একজন নির্মাণশ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তার একটি ছবি তুলতে চাইলে তিনি ছবি না তোলার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘মে দিবস কী ভাই? এই দিবস কি হামাক ভাত কাপড় দিবে?’

মজির উদ্দিন বলেন, ‘একদিন কাজ না করলে হামার সংসার চলা দায় হয়ে যায়। দিনমজুরি করি যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচাই। পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভাত, কাপড় আর ছইল-পইলের (ছেলেমেয়ের) নেকাপড়ার (পড়ালেখা) খরচ জোগাড় করতে সারাদিন মানষের বাড়িত কাম করি।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক মরজিনা বেগম। দুই সন্তান রেখে তার স্বামী জসিম উদ্দিন পাঁচ বছর আগে অন্যত্র গিয়ে একজনকে বিয়ে করে ঘর সংসার করছেন। পাঁচ বছর থেকে জসিম উদ্দিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে মরজিনা বেগম ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি সেখানেও প্রতিনিয়ত শ্রম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

Advertisement

মরজিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইটভাটায় কাম করা আর জাহান্নামের আগুনোত পোড়া সমান কথা। লম্পট স্বামী দুইটা ছইল (ছেলে) মোর ঘাড়ত (ঘাড়ে) চাপে দিয়ে আরেকটা বিয়া করছে। ছইল দুইটের মুখের দিকে তাকেয়া আগুনোত পুড়িয়ে সারাদিন কাম করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেটাছইলদের (পুরুষ) সাথে হামরাও সমান কাম করি। তবুও ভাটার মালিকরা হামাক হাফ কামলার দাম দেয়। বেটিছইল জন্যে হামাক ঠকায়। ওমার (তার) বোজা উচিত হামরাও মানুষ, হামারও একটা সংসার আছে।’

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক আব্দুল ওয়াহাব জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন ঘুম থাকি উঠিয়ে অটো নিয়ে বের হয়ে রাতে বাড়িতে ফিরি। যা কামাই হয় তাকে (তা) দিয়ে সংসার চালাই। খালি শুনি মে দিবস, শ্রমিক দিবস। এই দিবসে কী হয়, কেন হয়; তা কিছুই জানি না। হামার অটোর চাকা একদিন না ঘুরলে পেটোত টান পরি যায়।’

এসআর/এএসএম