দেশজুড়ে

সংসার সামলে কৃষিতে নারীর শ্রম, নেই কাজের স্বীকৃতি

প্রাচীনকাল থেকে পুরুষের পাশাপাশি কৃষি কাজে নারীদেরও অবদান অনেক। কৃষি খাতে মোট যে শ্রম দেওয়া হয় তার অর্ধেকেই করেন নারী। কিন্তু আজও তাদের কাজের স্বীকৃতি কিংবা শ্রমের মূল্য নির্ধারিত হয়নি। সাম্প্রতিক সময় প্রধানমন্ত্রী নারীদের পারিবারিক কাজের মূল্যায়নের বিষয় নজর দিলে বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। সরকার চাচ্ছে নারীদের এ কাজের হিসাবকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে।

Advertisement

নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কৃষিতে নারীদের কাজের অবদানের স্বীকৃতি ও শ্রম মূল্য নির্ধারিত হলে পরিবারে ও সমাজে তারা মত প্রকাশ এবং সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

একজন নারী পরিবারের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি মাঠে ফসল রোপণ থেকে শুরু করে সংগ্রহ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করে থাকে। বিশেষ করে ধান কাটার পর মাড়াই থেকে শুরু করে চাল তৈরি এবং সেগুলো সংরক্ষণ পর্যন্ত সবকাজই নারীরাই করে থাকেন। এছাড়া ডাল, তেল ও দানাদার জাতীয় ফসল সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণেও আছে তাদের নিরলস শ্রম। তবে পরিবার কিংবা সমাজে তাদের এসব কাজের কোনো মূল্য নির্ধারিত নেই। আর পরিবারের দৈনন্দিন কাজের বাইরে কৃষি কাজে শ্রম দিলেও তার কোনো স্বীকৃতি মেলে না। এ কারণে অনেক নারীদের মনে আছে চাপা ক্ষোভ।

সম্প্রতি পটুয়াখালীর গলচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নে সড়কের পাশে দেখা যায় কয়েকজন নারী ও শিশুরা মিলে জমির মুগডাল তুলছেন। কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার বিষয় নিয়ে তাদের কথা হয়।

Advertisement

পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী বিলকিস বেগম বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই সংসারের কাজের পাশাপাশি কৃষির কাজ করি। ছোট বেলায় বাবাবাড়িতে মরিচ তুলতাম, আলু তুলতাম, মুগডাল তুলতাম। এখন স্বামীর সংসারে থেকেও তাই করি। ধানের সময় ধানসিদ্ধ করা, শুকানো ঝাড়া সব কিছুই করি। কিন্তু এ জন্য তো আর বাড়তি কোনো গুরুত্ব নাই। পুরুষ মানুষ কাজ করলে হেইডার একটা বাড়তি গুরুত্ব দেয় সবাই।’

একই মাঠে কাজ করা ৩০ বছর বয়সী রাহিমা বেগম বলেন, ‘ঘরে বাইরে কাজ করলেও স্বামী সন্তানদের কোনো শুকরিয়া নাই। এ কাজ যদি মানুষ রেখে করতে হতো তাহলে অনেক টাকা খরচ হতো। দুপুরে খেয়ে এক মিনিট জিরানোর সময় নাই। এখন সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাল তুলমু, বাড়ি গিয়ে হাঁস-মুরগি ঘরে ঢুকামু। এরপর আবার ডালগুলো গোছগাছ করে রাখবো। একটা পুরুষ মানুষ যে কাজ করে তার চেয়ে আমরা কোনো অংশে কম করি না। আরও বেশি করি। তবে এরপরও কোনো নাম নাই।’

কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে কথা হয় পটুয়াখালী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিরিন সুলতানার সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, নারীরা এখন ফসল রোপণ থেকে শুরু করে সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত সব সেক্টরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এটি আদিকাল থেকেই করে আসছেন। নারীর এ বাড়তি কাজের সামাজিক কোনো স্বীকৃতি কিংবা তাদের কাজের মূল্যায়ন এখনো দেওয়া হয়নি। তবে কৃষি কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে পারলে নারীদের সম্মান ও পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের গুরুত্ব বাড়তো।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে চার কোটি কৃষি পরিবার থাকলেও এর মধ্যে দুই কোটি কৃষাণী আছেন। যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের যেসব সহযোগিতা ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে সেখানে শতকরা ৩০ শতাংশ নারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে কৃষি কাজে নারীদের যে শ্রম তার একটা স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এ বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিডিপিতে নারীর কাজ যোগ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা যোগ করলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

এসজে/জিকেএস