দেশজুড়ে

রিকশার চাকায় স্বপ্ন ঘোরে আমিনুলের

চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড় আমিনুল ইসলাম (৬৫)। বাবা ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। সংসারে অভাব অনটন কী তা তেমন একটা বুঝতেন না। শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে অন্য আট-দশজনের মতোই আনন্দ আড্ডায়। দূরন্ত কৈশোর পেছনে ফেলে ১৯৭৭ সালে সিপাহী পদে পুলিশে যোগ দেন। কিন্তু সেখানেও মন টেকেনি তার। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ না হতেই তিন মাসের মাথায় বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর শুরু হয় নিয়তির নির্মম পরিহাস।

Advertisement

হাল ধরেন সংসারের। পেশা হিসেবে বেছে নেন রিকশা। সেই আশির দশকের শেষ থেকে আজ অবধি রিকশা চালিয়ে ভাই-বোনদের গড়ে তুলেছেন। নিজেও বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। টানা ৩৫ বছর ধরে রিকশার চাকায় ঘুরছে আমিনুল ইসলামের স্বপ্ন।

আমিনুল ইসলামের বাড়ি রংপুর নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের মধ্য বাবুখাঁ মহল্লায়। তার এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।

আমিনুল জানান, ১৯৭৭ সালে পুলিশের সিপাহী পদে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে বেতন ছিল ১৪৭ টাকা। টাঙ্গাইলে তিন মাসের প্রশিক্ষণ চলাকালে শেষ দিকে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে আসেন। এর এক সপ্তাহ পর আবারো ফিরে গেলে তাকে আর চাকরিতে নেওয়া হয়নি। বাড়ি এসে এদিক সেদিক ঘুরে দিন কাটতে থাকে। এরইমধ্যে বাবা মারা যান। ছোট ভাই বোনদের মানুষ করতে অবশেষে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। বেছে নেন রিকশা। আমিনুল বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ি ভিটার এক শতাংশ জমি ভাইদের লিখে দিয়ে নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে পাশেই তিন শতক জমি কিনেছেন। সেখানেই স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই গড়েছেন। পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে মুরাদ হোসেন মোটরসাইকেল মেকানিকের দোকানে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। রিকশা চালিয়ে দিনে আয় হয় তিন থেকে চারশো টাকা। তা দিয়েই চলে সংসার।

Advertisement

আমিনুল বলেন, মাঝেমধ্যে শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিলে ঘরে বসে থাকতে হয়। এসময় আয় রোজগার না হলে ধারদেনা করে চলতে হয়।

শ্রমিক দিবস কী তা জানতে চাইলে আমিনুল বলেন, প্রতি বছরতো এ দিনটা আসে। অনেকেই মিটিং মিছিল করেন। নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরেন। কিন্তু আমাদের মতো শত শত আমিনুলেরতো ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।

তিনি বলেন, ৩৫ বছর আগে নগরীর জাহাজ কোম্পানির মোড় থেকে রেলস্টেশন ছিল ৩-৪ টাকা ভাড়া। এখন ২৫-৩০ টাকা। আয় বাড়লেও ব্যয়তো কমেনি।

নগরীর হাড়িপট্টি রোডের কাপড় ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, আমিনুল একজন বিশ্বস্ত রিকশাচালক। আমাদের এই রোডের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মালামাল বহন করেন আমিনুল। অনেক কষ্ট করে তিনি দিন পার করছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে যদি একটা ব্যাটারিচালিত রিকশা পেতেন তাহলে হয়তো ভালোই হতো।

Advertisement

অভাবের সংসারে যেখানে নূন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে আমিনুলের কাছে একটা চার্জার রিকশা কেনা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতোই। বার্ধক্য ছুঁয়ে গেলেও এখনই দমে যেতে চান না। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে এভাবেই আমিনুল পাড়ি দিতে চান জীবনের বাকি দিনগুলো।

এফএ/জিকেএস