আবুল বাশার। কুমিল্লা নগরীর পুরাতন মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা। তিনি এক ছেলে আর এক মেয়ের বাবা। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কাজ করেন অন্যের দোকানে। স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বাসায় সেলাইয়ের কাজ এবং একটি পার্লার পরিচালনা করেন। এই দম্পতির সংগ্রাম শুধু দুই সন্তানকে শিক্ষা-দীক্ষায় মানুষের মতো মানুষ করা নিয়ে। তাদের স্বপ্ন, একদিন তারা দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় এগিয়ে আসবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে স্বামী স্ত্রী দুজনের অর্থ আর পরিকল্পনা এগিয়ে চলে। তাদের সেই স্বপ্ন আজ রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
Advertisement
আজ তাদের ছেলে মো. আবুল হোসাইন ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশে। একমাত্র মেয়ে আনিকা তাবাচ্ছুম কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে দর্শন বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার কুমিল্লা কেন্দ্রের শিল্পী ও উপস্থাপিকা। কুমিল্লা কচিকাঁচা মেলার নাচের শিক্ষিকা হিসেবেও কাজ করছেন।
বাবার সঙ্গে ছেলে
বাশার-হোসনেয়ারা দম্পতির দুই সন্তানই অত্যন্ত মেধাবী। একাডেমিক সনদ ছাড়াও তাদের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও সনদপত্র। জাগো নিউজের প্রতিবেদককে এমনটাই জানান গর্বিত বাবা আবুল বাশার।
Advertisement
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের ৮ দিন পর বাড়ি থেকে বের হয়েছি কর্মের সন্ধানে। ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে রাজধানীর চকবাজারে একটি দোকানে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। ১৭ বছর পর কুমিল্লায় চলে আসি। পরে একাধিক কাপড়ের দোকানে সময় দিয়েছি। বর্তমানে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় আনন্দ সিটি সেন্টারে এ. আর ফ্যাশনে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। কর্মজীবনে স্বামী-স্ত্রী দুজনে যা আয় করেছি তা সন্তানদের পড়ালেখায় খরচ করেছি। দুজনের পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে।
তিনি জানান, নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় পুরাতন মৌলভীপাড়ার চিত্র ব্যতিক্রম। তাই সন্তানদের আগলে রেখেছে তাদের মা। স্কুল থেকে আসার পর যেন দুষ্ট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে না মিশতে পারে সেজন্য তাদের প্রাইভেট, গান চর্চা ও খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখত সে। ছেলে কুমিল্লা জেলা স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে। সাংসারিক অবস্থা দেখে ছেলেও টিউশনি করে আমাদের সহযোগিতা করেছে। আজ বড় পুলিশ অফিসার হয়েছে। বিষয়টি ভাবতে গর্বে বুকটা ভরে যায়। দেশ ও দশের সেবা করতে পারবে। আমাদের ত্যাগ সার্থক হয়েছে। পেছনের সব দুঃখ-কষ্ট আজ ভুলি গিয়েছি।
একসঙ্গে পুরো পরিবার
আবুল বাশার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি নিজে পড়ালেখায় বেশি দূর যেতে পারিনি। অল্প টাকায় অন্যের দোকানে কাজ করেছি। তবে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করিনি। আমার মতো সব বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের লেখাপাড়া করিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের সেবায় উৎসাহিত করা। মে দিবসে এই প্রত্যাশাই রইলো।
Advertisement
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থা অত ভালো ছিল না। প্রথমে মা-বাবা দুজনের উপার্জন দিয়ে আমাদের লেখাপড়া শুরু হয়। নাইন থেকে প্রাইভেট পড়িয়ে মা-বাবাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতাম এবং নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। এক কথায় বলতে গেলে জীবন ছিল সংগ্রামের। ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। আমার সফলতার মূল কারিগর সৃষ্টিকর্তার পর মা-বাবা দুজনই।
তিনি আরও বলেন, আমি একটি কথা বিশ্বাস করি পৃথিবীর বড় ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে লেখাপড়ায় ইনভেস্ট করা। সব বাবা-মায়ের উচিত তারা যত কষ্টে থাকুক না কেন বা সন্তান যতই কষ্ট করুক পড়ালেখায় যেন তাদের সর্বোচ্চ ইনভেস্ট করেন। তাহলে একদিন এর অনেক বড় রিটার্ন পাওয়া যাবে। এটাই চিরন্তন সত্য।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসএইচএস/জিকেএস