দেশজুড়ে

আপিলে যাবেন জাহাঙ্গীর, মাঠে টিকে থাকলেন মা

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছেলের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও মায়ের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। ফলে নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন মা জায়েদা খাতুন। অপরদিকে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।

Advertisement

রোববার (৩০ এপ্রিল) সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ এবং ঋণ খেলাপির কারণে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।

এদিকে আপিলে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থিতা ফিরে পেলেও নির্বাচনী মাঠে মা অথবা ছেলে দুজনের একজন থাকবেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মায়ের পরামর্শে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর আলম। পরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার মা ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তাই অনেক ভেবেচিন্তেই মাকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে জানান ওই নেতা।

Advertisement

আরও পড়ুন: অপেক্ষা বাড়লো জাহাঙ্গীরের, দ্বিধায় কর্মী-সমর্থকরা

জাহাঙ্গীর আলমের সহকর্মীরা জানান, রাজনৈতিক কোনো পদ-পদবী না থাকলেও মা জায়েদা খাতুন বিচক্ষণ সু পরামর্শক হিসেবে সন্তানের পাশে থেকেছেন ছায়ার মতো। সব বিপদ আপদে সাহস আর শক্তি যোগাচ্ছেন তিনি। ছেলের কঠিন সময়ে নিজে মেয়র প্রার্থী হয়ে জানান দিলেন রাজনীতির মাঠে ছেলের পাশে তিনি শক্তভিত্তি হয়ে দণ্ডায়মান।

স্বশিক্ষিত জায়েদা খাতুন একজন গৃহিণী। তিনি তার ছেলের প্রধান উপদেষ্টা হলেও রাজনৈতিক মাঠে নেই তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। তবে ছেলের সমস্ত কর্মকাণ্ড তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। ছেলেকে সব সময় সুপরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনের এ বিশাল মাঠে তিনি প্রথমবার ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন। নগরীর মানুষ তার পাশে থাকবেন এটা তার প্রত্যাশা।

জায়েদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে মেয়র হয়ে কোনো অন্যায় ও অসৎ কাজ করেনি। সে শিক্ষা তাকে দেওয়া হয়নি। জাহাঙ্গীর আলম নগরীর উন্নয়ন ও নগরীর মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করেছে। সে ঠিক কাজ করেছে না ভুল করেছে তা যাচাই করার জন্যই প্রার্থী হয়েছি। প্রতীক পাওয়ার পর মাঠে নামবো। আশা করি ভোটাররা নিরাশ করবেন না। জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে জন্য নির্বাচনই হচ্ছে অন্যতম মাধ্যম।

Advertisement

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা থেকে সরে গেছে: জাহাঙ্গীর

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী জায়েদা খাতুনের জন্ম ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তার পেশা দেখানো হয়েছে ব্যবসা। ব্যবসা থেকে বছরে আয় তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা আছে ৩৫ লাখ। ব্যাংকে জমা ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় বিনিয়োগ আছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। আছে ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। ইলেকট্রনিকস সামগ্রী দেড়লাখ টাকার এবং আসবাবপত্র আছে দেড় লাখ টাকার। তার স্থাবর কোনো সম্পদ নেই।

মাকে প্রার্থী করার প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যারা আমার মেয়র ও দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের পেছনে ছিল, যারা নগরবাসীকে দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার দল ও প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছে, আমি যাতে প্রার্থী না হতে পারি, তারা সে ব্যাপারে তৎপর ছিল এবং এখনো আছে। ওই আশঙ্কা থেকেই মা প্রার্থী হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, মা গৃহিণী হলেও তিনি আমার প্রথম রাজনৈতিক শিক্ষক। মায়ের মুখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছি। তার অনুপ্রেরণাতেই স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হই। মা আমার কাছে একটি উত্তম আদর্শের জায়গা। এ নগরকে রক্ষার জন্য আমি মায়ের পরামর্শ সব সময় নিয়ে থাকি। তার রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাতেই ভাওয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ভিপি পদে নির্বাচন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হই।

‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নৌকা বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। গাজীপুর মহানগরীকে রক্ষার জন্য একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি পরীক্ষা দিতে ভোটযুদ্ধে নামতে যাচ্ছি।’ যোগ করেন তিনি।

মো. আমিনুল ইসলাম/এসজে