আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে অপেক্ষা বেড়েছে জাহাঙ্গীর আলমের। রোববার (৩০ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র বাছাইকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করবেন বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন জাহাঙ্গীর আলম।
Advertisement
এদিকে, আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পেলেও নির্বাচনের মাঠে থাকা বা সরে যাওয়া উভয়ই জাহাঙ্গীরের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তার কর্মী-সমর্থকরা। রোববার জাহাঙ্গীর আলমের বেশ কয়েকজন সমর্থক ও কর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তারা এ তথ্য জানান।
সমর্থকরা বলছেন, বিপুল জনপ্রিয়তা ও সমর্থন নিয়ে ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মেয়র পদে দায়িত্ব পালনের তিন বছরের মাথায় তিনি দলীয় পদ ও মেয়র পদ হারিয়ে অনেকটা চাপে পড়েন। যদিও আওয়ামী লীগ তাকে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেও ফিরে পাননি মেয়র পদ।
আগামী ২৫ মে’র সিটি নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তিনি নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ছাড়াও তার মায়ের নামে একটি মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে তার মা জায়েদা খাতুনের।
Advertisement
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার মনোনয়নপত্র এলাকার সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা জমা দিয়েছেন। তিনি জমা দিয়েছেন তার মায়ের মনোনয়নপত্র। তিনি দল নয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে চান।
স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, যে কারণে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে আপিল করলে হয়তো তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে তিনি উভয় সংকটে পড়বেন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে তিনি যদি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে ফের তিনি দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন। নানা আইনি ঝামেলা, প্রতিবন্ধকতা, দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের রোষানলে পড়তে হতে পারে তাকে। সেই সঙ্গে তার কর্মী-সমর্থকরাও নানা বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে পারেন। সরকারি দলের কোনো নেতাকর্মী বা প্রশাসনের কোনো অনুকম্পা তিনি পাবেন না। তাকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে নিজ যোগ্যতা ও ক্ষমতা বলে।
তারা আরও বলছেন, এ অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম যদি নির্বাচন থেকে সরে আসেন তাহলে তার সামনের রাজনৈতিক পথও মসৃণ হবে না। কারণ সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। এখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ খালি নেই। কেন্দ্রীয়ভাবেও কোনো পদে নেই জাহাঙ্গীর আলম। রাজনীতিতে তিনি এখন পদশূন্য। আর এখন দলীয় পদ-পদবি না থাকায় তিনি হয়ে পড়বেন অনেকটা একঘরে। এছাড়া পরবর্তী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরও অনেক প্রার্থী মাঠে থেকে যাবেন। সেক্ষেত্রে তার ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর হবে না। তাছাড়া পদ-পদবি ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম তার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থককেও ধরে রাখতে পারবেন না। তারা বিভিন্ন বলয়ে ঢুকে যাবেন।
জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান মেয়র নির্বাচিত হলে জাহাঙ্গীর আলম অনেকটা কোণঠাসা হয়ে যাবেন। কারণ, মেয়র পদে আজমত উল্লাহ খানের একমাত্র পথের কাঁটা জাহাঙ্গীর আলম। অনেকে মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলমের জন্য ২০১৩ সালে নির্বাচনে পরাজিত এবং ২০১৮ সালে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন আজমত। সে ক্ষত তার এখনো শুকায়নি। সব মিলিয়ে বেকায়দায় পড়তে হবে জাহাঙ্গীর আলমকে।
Advertisement
গাজীপুর মহানগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলমের বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক রয়েছে। তিনি নির্বাচনের মাঠে থাকলে সাধারণ মানুষ তাকে ব্যাপক সমর্থন দেবে। নগরজুড়ে ব্যক্তি জাহাঙ্গীর হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। তিনি নির্বাচনে না থাকলে আগামী পাঁচ বছরে সেই জনপ্রিয়তা কোন জায়গায় গিয়ে ঠেকবে তা সময়ই বলে দেবে।
এদিকে, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তার পায়ে হয়তো শিকল পরতে হতে পারে। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। তিনি গুমের আশঙ্কাও করেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি দেশবাসী ও নগরবাসীকে বলে যাই, যদি আমার মৃত্যু হয়- আপনারা বিশ্বাস করবেন আমি এই শহর রক্ষা করতে গিয়ে যা যা ভালো কাজ আছে সব করেছি। হয়তো বা অনেকে মিথ্যাচার করতে পারে। অনেকে আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে পারে।’
তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। যদি না আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত এই শহরের মানুষকে নিয়ে লড়তে চাই। এই নগরীতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমি যদি কোনো অন্যায় করি তাহলে এই শহরের মানুষ ভোটের মাধ্যমে বিচার করবে। আর যদি ভালো কিছু করি তাহলে অবশ্যই সত্যের জয় হবে।
গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখান থেকে কতিপয় লোকজন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার ক্ষতি করেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করা হয়েছে। এখানে একটা মিথ্যার জয় হয়েছে। সত্যের এখানে পতন হয়েছে। এই মিথ্যাকে যারা সত্য বানিয়েছে আমি তাদেরও বিচার চাই।
তিনি বলেন, আমি তো এক ব্যক্তি দাঁড়িয়েছি। তাহলে আমার বিরুদ্ধে কেন ষড়যন্ত্র। যারা নির্বাচন করতে চান তারা আমার সঙ্গে ওপেনলি করেন। আমি তো বলেছি যে কোনো প্রার্থী আসেন, আমি দাঁড়াই এখানে। যেহেতু ভোটটা জনগণের তাহলে জনগণের প্রতি সম্মান রাখেন।
সমর্থকরা আরও বলছেন, জাহাঙ্গীর আলমের পরবর্তী পদক্ষেপ জানা যাবে তার আপিলে মনোনয়নপত্র বৈধতা পেলে। নির্বাচনী মাঠে তাকে টিকে থাকতে হলে স্রোতের বিপরীতে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
এমআরআর/জিকেএস