মৌলভীবাজারে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিসহ তিনটি হাওরের প্রায় ৭০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে পিছিয়ে রয়েছে কাউয়াদীঘি হাওর। এ পর্যন্ত ওই হাওরে ৬০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
Advertisement
তবে এবারের ফলনে খুশি নন কৃষকরা। তারা বলছেন, খরা ও শিলাবৃষ্টির কারণে ধানে চিটা হয়েছে। এতে তাদের লোকসান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে ৭০ শতাংশ বোরো ধান কাটা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি ধান এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা শেষ হয়ে যাবে। তবে ব্লাস্ট রোগে ধানে চিটা হয়েছে। তবে কৃষিবিভাগ বলছে, এতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) হাকালুকি, কাউয়াদীঘি হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাওর জনপদের কিষান-কিষানিরা তীব্র রোদে ধান আর খড় শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে ধান কাটা হচ্ছে হারভেস্টার দিয়ে।
Advertisement
কথা হয় সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর এলাকার জুমাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবছর আমাদের দানা (ধান) নেই। সব চুছা (চিটা) হয়ে গেছে। কামলা (শ্রমিক) দিয়ে কাঁচি ধরলে সেটাও লোকসান। ২৪ বিঘার মধ্যে আট বিঘা কাটা হয়েছে। বাকি ১৬ বিঘাই কাটার মতো নয়। সব খড় দাঁড়িয়ে আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগাম চাষ করায় জেলায় চলতি মৌসুমে ব্রি-২৮, ২৯ ও ৪৪ জাতের ধান চিটা হয়ে গেছে।
কাউয়াদীঘি হাওর জনপদের কৃষক ছানি মিয়া হতাশ হয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আট বিঘা জমিতে ফসল লাগিয়ে পাঁচ বিঘা কেটে নিয়েছি। বাকি তিন বিঘা কেটে নেওয়ার মতো নয়।’
উঠানে ও রাস্তায় ধান ও খড় শুকাচ্ছিলেন হাকালুকি হাওরপাড়ের মোক্তাজিরপুর গ্রামের কৃষক বাদশাহ মিয়া। রাস্তায় খড় নাড়তে নাড়তে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার বড় ধরনের ঠকা দিয়েছে (ঠকিয়েছে) ব্রি-২৮ জাত।’
Advertisement
কৃষক মিছবাহ উদ্দিন বলেন, এবারের বোরো ফসলে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। লোকসানের যন্ত্রণা নিয়েই গোলায় ধান তোলার কাজ করছি।
তিনি বলেন, প্রথমে খরায় ক্ষতি করে। পরে শিলাবৃষ্টিতে ধান ঝরে যায়। খরায় ব্রি-২৮, ১৪, ২৯ ও ৯২ জাতের ধানে চিটা হয়েছে। বিঘাপ্রতি যেখানে ১০-১২ মণ পাওয়ার কথা, সেখানে ৪-৫ মণ পাওয়া গেছে।
ভুকশিমইল গ্রামের কিষানি রোজিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘৭০ বিঘা জমিতে ধানচাষ করে বড় ক্ষতির মধ্যে আছি। ৩ ভাগের ১ ভাগ ধান আর বাকি ২ ভাগই চিটা। এবার খরচ উঠবে না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, জেলার হাওরাঞ্চলের ৭০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে কাউয়াদীঘি হাওর পিছিয়ে রয়েছে। ওই হাওরে এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাটা হয়েছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এ বছর জেলায় ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে চাষ হয়েছে ২৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিক টন। আশা করা যায় সেটা অর্জন হবে। গতবছর উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।
ধানে চিটার বিষয়ে উপ-পরিচালক বলেন, এবার কিছু জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা দেখা গেলেও এর পরিমাণ খুবই কম। মাত্র ৯০ হেক্টর। ফলে মোট উৎপাদনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
আব্দুল আজিজ/এসআর/জেআইএম