দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলেও চমক দেখিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। একদিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ৩১৬ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশের ঘোষণা আসার পর শেয়ারের দামে এমন উল্লম্ফন হলো।
Advertisement
রোববার (৩০ এপ্রিল) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ঘোষণা আসে, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এই হিসাব বছরে বড় লোকসানের পরও কোম্পানিটি এই লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির মুনাফায় উল্লম্ফন হয়েছে।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৪ টাকা ১৩ পয়সা লোকসান করেছে। এরপরও বছরটির জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৬ টাকা ৮৫ পয়সা মুনাফা করেছে বলে জানিয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা।
Advertisement
এমন ঘোষণা আসায় এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরু হয় ১৬ টাকা দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। আগের কার্যদিবসের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৪৭ টাকা ৮০ পয়সা।
সেখান থেকে লেনদেন শুরু হয় ২৬৩ টাকা করে। লেনদেনের সময় কয়েক মিনিট গড়াতেই প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৩৫ টাকায় উঠে যায়। তবে এরপর দাম কিছুটা কমে। অবশ্য তারপরও দিনের লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩০৩ টাকা ৮০ পয়সা।
অর্থাৎ দিনের লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৬ টাকা বা ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ। এতে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩১৬ কোটি ৪২ লাখ ১ হাজার ৪০ টাকা। লভ্যাংশ ঘোষণা আসার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। যে কারণে একদিনে শেয়ারের দাম এত বেশি হারে বাড়তে পেরেছে।
হুট করে শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও ক্রেতা সংকটে কয়েক মাস ধরেই কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে ছিল। তবে ২৪ এপ্রিল থেকে শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। রোববার শেয়ারের দামে বড় উত্থানের কারণে মাত্র পাঁচ কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২৪ এপ্রিলের আগে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৭৯ টাকা ১০ পয়সা।
Advertisement
লভ্যাংশ ঘোষণার পর হুট করে শেয়ারের দামে এমন উল্লম্ফন হওয়াকে অস্বাভাবিক বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ডিএসই’র একাধিক সদস্য বলেন, যেভাবে হাইডেলবার্গের শেয়ারের দাম বেড়েছে, এর পেছনে বিশেষ চক্রের হাত থাকাটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ফ্লোরে ছিল। সেখান থেকেই লভ্যাংশের ঘোষণা এবং চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে আসার আগে শেয়ারের দাম বাড়তে থকে। এতে বোঝা যায়, কোনো বিশেষ চক্র আগে থেকেই এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে যায়। তারাই এখন শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
তারা আরও বলেন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ২০২২ সালের ব্যবসায় লোকসান করেও ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই প্রায় ৭ টাকা ইপিএস দেখিয়েছে। এই ইপিএস প্রকাশ করা হয়েছে লভ্যাংশ ঘোষণার দিনেই। মূলত এই ইপিএস সামনে রেখেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং এই দাম বাড়ার পেছনে কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কেউ আছেন কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বড় মুনাফা হওয়ার কারণ হিসেবে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্চ মূল্যে বিক্রি, কাঁচামালের কম দাম এবং প্ল্যান্ট রিপিয়ার ও ব্যবস্থাপনায় কম খরচের কারণে মুনাফা বেড়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় এই বহুজাতিক কোম্পানিটি। তার আগে ২০২০ সালে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এছাড়া ২০১৮ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১৫০ শতাংশ এবং ২০১৬ ও ২০১৫ সালে ৩০০ শতাশ নগদ লভ্যাংশ দেয় হাউডেলবার্গ সিমেন্ট। সে হিসাবে কোম্পানিটির লভ্যাংশ গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক কমেছে।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস