আন্তর্জাতিক

‘সিরিয়া-লিবিয়ার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে সুদানের সংঘাত’

সিরিয়া এবং লিবিয়ার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে সুদানের সংঘাত। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হেমডক এমন মন্তব্য করেছেন। দেশটিতে চলমান সংঘাতের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

Advertisement

আবদাল্লা হেমডক বলেন, এভাবে সংঘাত চলতে থাকলে তা বিশ্বের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা চারদিক থেকে রাজধানী খার্তুম আক্রমণ করেছে। সেখানে ভারী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই সংঘাতে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গত ১৫ এপ্রিল সুদানের আর্মড ফোর্সেস (এসএএফ) এবং র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামের আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।

আরও পড়ুন: বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে আলোচনা নয়: জেনারেল হেমেডটি

Advertisement

এদিকে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি দাগালো বলেছেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বোমাবর্ষণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো আলোচনায় যাবেন না। তার অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও আরএসএফ যোদ্ধাদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের কূটনৈতিক চেষ্টায় গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সুদানে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও খার্তুমের বিভিন্ন অংশে বিমান, ট্যাংকে এবং কামান দিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। চলমানে সংঘাতে বেশি বিপদে পড়েছে খার্তুম ও ওমদুরমানের বাসিন্দারা। কারণ তারা বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য পাচ্ছে না। নগদ অর্থের সংকট তো রয়েছেই।

এ ঘটনার ফলে এরই মধ্যে অসংখ্য বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লড়াই বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। অন্যদিকে জাতিসংঘ সুদান ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। সংস্থাটি সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির মাঝেও সুদানে দুই পক্ষের লড়াই অব্যাহত

Advertisement

এদিকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সুদানের সামরিক নেতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনীর প্রধানকে শান্তি আলোচনায় রাজি করার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানান হেমডক।

তিনি বলেন, সুদান একটি বিশাল দেশ, এখানে নানা রকম বৈচিত্র্য রয়েছে। আমি মনে করি এই দেশের সংঘাত বিশ্বের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, এই সংঘাত সেনাবাহিনী এবং ছোট কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নয়। বরং সংঘাত চলছে দুটি বাহিনীর মধ্যে যারা ভালো ভাবে প্রশিক্ষিত এবং সশস্ত্র।

সুদানের বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে। তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে রয়েছেন আরেকটি আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেডটি দাগালো।

বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা। কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য নিজেদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়। এরপর থেকে এটি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ লড়াইয়ে রূপ নেয়।

সংকট নিরসনে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। জেনারেল হেমেডটি বলছেন, তিনিও আলোচনায় রাজি। কিন্তু শর্ত হলো, যুদ্ধবিরতি মানতে হবে। তার কথায়, শত্রুতা বন্ধ করুন। এরপরেই কেবল আলোচনায় বসতে পারি।

হেমেডটি বলেন, জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তার কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তিনি দেশটির ক্ষমতাচ্যুত শাসক ওমর আল বশিরের অনুগতদের সরকারে নিয়ে আসার অভিযোগ করে বুরহানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৯ সালে প্রবল গণআন্দোলনের জের ধরে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ যৌথভাবেই ওমর আল বশিরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল। বশিরের তিন দশকের শাসনকাল ইসলামপন্থি আদর্শ ও শরিয়া আইন কার্যকরের জন্য পরিচিত।

আরও পড়ুন: সুদান ত্যাগ করবে না জাতিসংঘ: গুতেরেস

২০২১ সালে তিনি ও জেনারেল বুরহান ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা, বিশেষ করে আরএসএফের এক লাখ সদস্যকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা ভেঙে পড়ে।

জেনারেল হেমেডটি বলেন, আগামীকাল নয়, আমি আজই বেসামরিক সরকার পেতে চাই। একটি পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক সরকার। এটাই আমার নীতি।

টিটিএন