রাতে জানালা খুলে ঘুমিয়ে পড়লে মোবাইল ফোনে নারীদের ভিডিও ধারণ করতেন এক ব্যক্তি। গভীর ঘুমে থাকলে গায়ে হাতও দিতেন। ২৩ এপ্রিল ঈদের দিন রাতে ছবি তোলার সময় তাকে ধরতে গেলে ফোন ফেলে পালিয়ে যান ওই ব্যক্তি। পরে তার মোবাইল ফোনে গ্রামের বিভিন্ন নারীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ভিডিও পাওয়া যায়।
Advertisement
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের সাফখোলা গ্রামে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি এবং তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পুলিশ তৎপর হলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এক বছর ধরে গ্রামে গভীর রাতে হাজির হতেন এক যুবক। নারীরা ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ছবি তোলা ও ভিডিও করা হতো। এমনকি জানালা দিয়ে গায়ে হাত এবং পাটকাঠি দিয়ে নারীদের শরীরে খোঁচা দিতেন। টের পেয়ে নারীরা চিৎকার করলেই দৌড়ে পালিয়ে যেতেন তিনি।
গ্রামের নয়ন নামের এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে গ্রামের যুবকরা বিষয়টি নজরে রাখেন। পরে ঈদের দিন রাত ৩টার দিকে আমার মেজ ভাইয়ের রুমের জানালা দিয়ে কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করলে আমার ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় ভিডিও ধারণকারীর হাতে আঘাত করলে মোবাইলটি ঘরের মধ্যে পড়ে যায় এবং ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান। তার মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল।
Advertisement
তিনি বলেন, পরে মোবাইল চেক করে দেখা গেছে গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের মেয়ের রাতে শুয়ে থাকার ভিডিওসহ আরও অনেক ভিডিও গোপনে ধারণ করা রয়েছে ওই মোবাইলে। কিন্তু কে এ কাজ করেছে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। মোবাইলটি কার সে তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা গ্রামের মেম্বার ও মাতব্বরদের জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
গ্রামের নারীরা জানান, রাতে ঘুমালে জানালায় এসে ফোনের আলো দেয়, অনেক সময় পাটকাঠি দিয়ে আমাদের শরীরে খোঁচা দেয়। এতে চিৎকার দিলে সে পালিয়ে যায়, কাউকে ধরা যায় না। অনেক মেয়ে ভয়ে রাতে এখন ঘুমাতে পারে না।
এদিকে ওই মোবাইল ফোনে গ্রামের এক কিশোরের সিমকার্ড পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহের ডিবি পুলিশ ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। তবে সেই সিমকার্ড কিছুদিন আগে সে এক কলেজছাত্রকে দিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ওই কিশোর জানায়, ওই মোবাইল ফোনে পাওয়া সিমকার্ডটি আমার। গ্রামের এক কলেজছাত্র কিছুদিন আগে আমার কাছ থেকে নেয়।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে ওই ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের সদস্যরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু তাহের বলেন, সাফখোলা গ্রামটিতে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে মা-মেয়েরা ইচ্ছামতো ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ছবি তোলা মোটেও ঠিক নয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকার কেউ ঠিকমতো রাতে ঘুমায় না। আমি শৈলকুপা থানাকে বিষয়টি জানিয়েছি।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি খুবই আপত্তিকর। আমরা প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তবে এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফএ/এএসএম