দেশজুড়ে

দুই লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৬ জন

বাগেরহাটের মোংলায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার কাজে নিয়েজিত রয়েছেন মাত্র ৬ জন ডাক্তার। তবে তাদের মধ্যে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যারা রয়েছেন বেশিরভাগই সদ্য পাসকৃত মেডিকেল অফিসার। তাই চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলীয় এ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী।

Advertisement

মোংলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, চলমান নানাবিধ সংকটে এখানকার মানুষকে যথযাথ সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও সাধ্যনুযায়ী নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এ হাসপাতালের স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসকরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিন জানান, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে ২১ জনের পদই শূন্য। এই ২৮ জনের মধ্যে একজন মেডিসিন, একজন সার্জারি, একজন গাইনি, একজন শিশু, একজন চক্ষু, একজন অর্থপেডিক, একজন কার্ডিওলজি, একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন, একজন নাক-কান-গলা, একজন এনস্থেশিয়া ও একজন স্কিন অ্যান্ড ভিডি বিশেষজ্ঞ। কিন্তু এখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। মাত্র ৬ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে সরকারি এ হাসপাতাল।

৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে আবার অধিকাংশই সদ্য পাসকৃত নতুন চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজগুলো তাদেরকেই করতে হচ্ছে। এই ৬ জনের মধ্যে ৫ জনেরই প্রতিদিন শিফট অনুযায়ী ডিউটি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে আবার উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৮টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন, ৩টি পদ শূণ্য রয়েছে। আর স্বাস্থ্য সহকারীর ২৫টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১২ জন।

Advertisement

প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ রোগী আসছেন। আর ইনডোরে ভর্তি থাকছেন প্রতিনিয়তই ৬০-৭০ জন। এছাড়া ইমারজেন্সিতেও প্রতিদিন ৭০-৮০ জন রোগী আসেন। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক এই ডাক্তারদের।

সরকারি এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে অপারেশন থিয়েটার ও যন্ত্রপাতি থাকলেও সার্জারি, গাইনি ও এনস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদেরকে অপারেশন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আলট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট, আর এক্স-রে মেশিন থাকলেও বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের কারণে চালানো যাচ্ছে না। নেই প্যাথলজির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, নেই এক্স-রের রেডিওলজিস্ট, ইসিজির কার্ডিওগ্রাফারের পদটিও শূন্য।

এছাড়া হাসপাতালের দুইটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি নষ্ট। আরেকটি চালু থাকলেও নেই চালক। রোগীদের সেবাদানের জন্য বিকল্প পন্থায় চালানো হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার পানি সরবরাহেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে কিংবা বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে রোগীদেরকে। এছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে যে পুকুরটি রয়েছে সেটিও ভরাট হয়ে শুকিয়ে গেছে। ফলে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন নিত্য ব্যবহারের পানির সংকটে। হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবনও জরাজীর্ণ।

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিন বলেন, যেকোনো হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। দক্ষ জনবল ছাড়া আমরা যে কাজগুলো করবো সেগুলো কোনোভাবেই সঠিক কার্যক্রম হবে না। তাই সর্বপ্রথমে মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। যা সম্পূর্ণ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া রোগীদের পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজন হয়। কিন্তু দক্ষ জনবল না থাকায় অল্প ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও সদ্য পাস করে এসে যোগদানকৃত মেডিকেল অফিসাররা এখানে সেবা দিচ্ছেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা আমরা দিতে পারছি না। আমাদের নানাবিধ সংকটে এখান থেকে রোগীদেরকে খুলনা ও বাগেরহাটে পাঠাতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও যন্ত্রপাতির অভাবে আমাদের এখানে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, এমন সমস্যা দীর্ঘ প্রায় ৫-৭ বছর ধরেই। মোংলা বিচ্ছিন্ন উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এখানে কেউ পোস্টিং নিয়ে আসতেও চান না, আর কেউ এলেও নানা সমস্যা থাকায় তদবির করে অন্যত্র চলে যান।

এফএ/জেআইএম