জাতীয়

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে এগিয়ে রংপুর, পিছিয়ে চট্টগ্রাম

জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে (৬০ দশমিক ৯ শতাংশ)। এ পদ্ধতির ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে (৭১ দশমিক ৭ শতাংশ)। ২০২০ সালেও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি ছিল বিভাগটিতে। যে কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন এমন নারীর মধ্যে মুখে খাওয়া বড়ি ব্যবহারের হার বেশি। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে এগিয়ে ২০-২৪ বয়সী বিবাহিতরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এসভিআরএস) ২০২১’ জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

এসভিআরএস জরিপ এলাকায় দেখা যায়, বর্তমানে বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশের কিছু বেশি নারী আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এর বিপরীতে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ নারী সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। আগের বছরের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে সনাতন পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে ২০ শতাংশ।

আরও পড়ুন>> কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে পুরুষের, কমছে নারীর

জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে তুলনা করে দেখা যায়, যাদের বয়স ২০-২৪ বছর, তাদের মধ্যে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার সর্বাধিক (৭০ দশমিক ৫ শতাংশ)। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের বর্তমান বয়সের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে অন্য পদ্ধতি ব্যবহারের গড় ব্যবধান শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। একটি নির্দিষ্ট আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শহরাঞ্চলের তুলনায় পল্লি অঞ্চলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাত্রা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। যে পদ্ধতিটি পল্লি অঞ্চলে ৬৪ দশমিক ৯ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন, শহরাঞ্চলে সেটির ব্যবহারের হার ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

Advertisement

জরিপে দেখা যায়, আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পার্থক্য আছে। এক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগে (৬০ দশমিক ৯ শতাংশ)। অন্যদিকে, এ পদ্ধতির ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে (৭১ দশমিক ৭ শতাংশ)। ২০২০ সালেও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি ছিল রংপুর বিভাগে। একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, যে কোনো ধরনের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ধরনটি সংশ্লিষ্ট প্যাটার্নের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন>> নিজ বাড়িতে বসবাস করেন ৮১.৭ শতাংশ মানুষ

জরিপে উঠে এসেছে, সামগ্রিকভাবে সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারের হার ১ দশমিক ২ শতাংশ। সদ্য বিবাহিতদের মধ্যে এটি ব্যবহারের যে মাত্রা পরিলক্ষিত হয়, তাদের দাম্পত্য জীবন প্রলম্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে হার স্থিতিশীলভাবে বাড়তে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের অনুপাত ০ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ৪০-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষণীয় যে, গ্রামীণ নারীদের তুলনায় শহুরে নারীদের মধ্যে সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারের অনুপাত ১ দশমিক ৯ গুণ বেশি। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারের অনুপাত সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় রাজশাহী বিভাগের নারীদের মধ্যে, এ বিভাগের ১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার সবচেয়ে কম হারে পরিলক্ষিত হয় ময়মনসিংহ বিভাগের নারীদের মধ্যে।

Advertisement

আরও পড়ুন>> রেমিট্যান্স আসছে ১২.৮ শতাংশ পরিবারে, শীর্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ

জরিপের তথ্য সংগ্রহের সময় নারীরা জানান, তারা কোনো না কোনো ধরনের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের বর্তমান পরিস্থিতি বলতে এসব পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের অনুপাতকে বোঝানো হয়েছে। এ ধরনের জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে জন্মনিয়ন্ত্রণ আবর্তন অনুপাত (সিপিআর) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ বিবাহিত নারী যে কোনো ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। পল্লি এলাকায় বসবাসকারী নারীরা শহরাঞ্চলে বসবাসকারী নারীদের তুলনায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অভিযোজন করেছেন বেশি। প্রশাসনিক বিভাগ বিবেচনায় রংপুর বিভাগের নারীদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দাদের মধ্যে।

বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের চিত্রটি একটি ধনুকাকৃতির ফল প্রদর্শন করে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকালের পর্যায় থেকে এটির ব্যবহার শুরু হয়। তখন এটি ব্যবহারের আবর্তন অনুপাত থাকে ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবহারের মাত্রা বাড়তে থাকে। ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সভিত্তিক নারীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের অনুপাত পাওয়া যায় ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা।

আরও পড়ুন>> বিবিএস তথ্যে সন্তুষ্ট ৮৫ শতাংশ, বেশি ব্যবহার শিক্ষা-গবেষণায়

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি-মিশ্রণ বলতে ব্যবহৃত পদ্ধতির ধরন দিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীদের আনুপাতিক বণ্টনকে বোঝানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পণ্য ও সরবরাহ পরিকল্পনার জন্য এ সূচকটি ব্যবহার করে। পদ্ধতি-মিশ্রণ বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের একটি আপেক্ষিক মাত্রা তুলে ধরে। বৃহদার্থে পদ্ধতি-মিশ্রণ বলতে জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রাপ্যতাকে বোঝানো হয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের এ ধরনটি নারীদের সব মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে অভিন্নভাবে বজায় রয়েছে। পদ্ধতি-মিশ্রণের ওপর একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ পরিচালনায় দেখা যায়, বড়ি বা পিল ব্যবহারের মাত্রাটি বয়সের সঙ্গে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে যুক্ত। কিছু নির্দিষ্ট বয়সভিত্তিক গোষ্ঠী ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যে বড়ি ব্যবহারের মাত্রা কমতে থাকে। অন্যদিকে ১৫-৪৪ বছর বয়সভিত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে ইনজেকশন ব্যবহারের মাত্রা ইতিবাচক। একমাত্র কনডম ব্যবহার ছাড়া অন্য পদ্ধতি-মিশ্রণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভাগভিত্তিক কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি।

জরিপে দেখা যায়, নারীদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে মুখে খাওয়ার বড়িকে বেশি পছন্দ করেন। জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে ইনজেকশন গ্রহণ বাংলাদেশি নারীদের কাছে দ্বিতীয় পছন্দের পদ্ধতি। এটির ব্যবহারকারীর অনুপাত ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। পরবর্তী পছন্দের পদ্ধতি হলো কনডম, যা ৬ দশমিক ১ শতাংশ নারী ব্যবহার করেন। সব ধরনের পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ০ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ কপার টি ব্যবহার করেন। এছাড়া ২ শতাংশ নারী বন্ধ্যাত্বকরণ, ০ দশমিক ৩ শতাংশ ফোম এবং অন্য ০ দশমিক ৪ শতাংশ নরপ্ল্যান্ট ব্যবহার করেন। বাকি ১ দশমিক ২ শতাংশ যে কোনো সনাতনী পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ ফলাফল আগের বছরের ফলাফলের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।

রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস জরিপের প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রকল্পে মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিষয়ে বিবিএসের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের আওতায় যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তা থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে উৎসারিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। বিশেষভাবে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর নাম, বর্তমান বয়স, শিক্ষার মাত্রা ও দম্পতির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় গ্রহণ করা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি এবং বর্তমানে ব্যবহার করা পদ্ধতির অবস্থা ও ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহ। আমরা মাঠ পর্যায়ে যে তথ্য পেয়েছি তা প্রকাশ করেছি।

এমওএস/এএসএ/এমএস