তথ্যপ্রযুক্তি

ব্যবহারে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে ভিডিও দেখছিল আট বছরের শিশু আদিত্যশ্রী। হঠাৎ বিস্ফোরিত হয় সেটি। এতে প্রাণ হারায় শিশুটি। দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে ভারতের কেরালায়। আদিত্যশ্রী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওই রাতে সে হাতে মুঠোফোন নিয়ে ভিডিও দেখছিল। একসময় হঠাৎ সেটি বিস্ফোরিত হয়। এতে মারাত্মক আহত হয়। পুলিশের ধারণা, ব্যাটারি ওভারহিটিং বা অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তো মুঠোফোনটি বিস্ফোরিত হয়।

Advertisement

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের মধ্য প্রদেশের উজ্জাইন জেলায় মোবাইল ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। ৬৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে মুখ ও শরীরের অন্য অংশে গুরুতর জখম অবস্থায় বাসার ভেতরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মরদেহের পাশে মোবাইল ফোনের টুকরো পাওয়া গিয়েছিল। তবে কোনো বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ফোন চার্জে দিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। একসময় সেটি বিস্ফোরিত হয়।

এছাড়াও ভারতে স্মার্টফোন বিস্ফোরণে এক নারীর মৃত্যু হয়। বালিশের কাছে ফোনটি রেখে তিনি ঘুমিয়েছিলেন। ঘুমের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। ভারতের দিল্লিতে এ ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ফোনটি পুরোপুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেছনের অংশ পুড়ে যায় এবং ব্যাটারিও ফুলে যায়। গণমাধ্যমে এমন অনেক ঘটনার খবর পাওয়া যায় প্রতিনিয়ত।

শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাজ্যে একটি ট্যাব বিস্ফোরণে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিল ১১ বছর বয়সী এক শিশু। ওই বিস্ফোরণে ম্যাট্রেসে আগুন লেগে যায়। এ ধরনের আরেকটি ঘটনায় ক্রেডল ফান্ডের প্রধান নির্বাহী নাজরিন হাসান মারা যান। তার ফোন চার্জে থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটে। দুটি ফোন তার শোয়ার ঘরে চার্জ দেওয়া অবস্থায় ছিল।

Advertisement

এ তো গেল বিদেশের কয়েকটি খবর। আমাদের দেশেও এমন ঘটনা ঘটছে। কিংবা না ঘটে থাকলেও ওইসব ঘটনা থেকেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। শিক্ষা নেওয়া উচিত। তাই স্মার্টফোন বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে নিজে থেকে সাবধান হতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রকৃত কেবল বা অ্যাডাপ্টার ছাড়া অন্যের চার্জিং কেবল বা অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করা উচিত নয়। কেননা ফোনের আসল চার্জারই নিরাপদ। স্মার্টফোন কেনার সময় প্রকৃত চার্জার বা অ্যাডাপ্টার দেওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখে নেওয়া জরুরি। এছাড়াও ওয়ারেন্টির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

ফোন ব্যবহার করতে করতে ব্যাটারি অকেজো হতে পারে। তাই ডিভাইসের যদি ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়, তবে যে প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস কিনেছেন, তাদের তৈরি ব্যাটারিই কিনুন। তা না হলে ব্যাটারি কিছুদিন পরে ঠিকমতো কাজ করবে না। এমনকি চার্জার কেনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিযুক্ত ডিভাইসে অতিরিক্ত চার্জ দেবেন না। যদি ফোনে শতভাগ চার্জ দেন এবং দীর্ঘক্ষণ শতভাগ চার্জ ধরে রাখেন, তা ব্যাটারির আয়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ থাকলে তার আয়ু থাকে বেশি দিন। পাশাপাশি দাহ্য পৃষ্ঠের আসবাব, বিছানা, কাগজের কাছাকাছি ডিভাইস রেখে চার্জ দেবেন না। অনেক সময় অতিরিক্ত গরম হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

Advertisement

শিশুদের হাতে বেশিক্ষণ ডিভাইস রাখবেন না। গেমস কিংবা কার্টুন দেখাতে গিয়ে অতিরিক্ত সময়ে ডিভাইস হাতে রাখা থেকে বিরত রাখবেন। বুঝিয়ে না পারলেও জোর করে হলেও ডিভাইসটি নিরাপদে রাখবেন। তাহলে শিশুদের হাতে ডিভাইস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটবে না। যে কারণে আদিত্যশ্রীর মৃত্যু ঘটেছিল।

অনেক বিষয় স্বাভাবিক মনে হলেও একটু ভাবনার সময় এসেছে। তাই ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে স্মার্টফোন রেখে চার্জ দেবেন না। অল্প চার্জে থাকলে ফোনের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রয়োজন ছাড়া চার্জে রেখে ঘুমানোর কোনো মানে হয় না। অনেকেই ৩০-৪০ ভাগ চার্জ থাকার পরও চার্জে দিয়ে রাখেন। এছাড়া সরাসরি সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ স্মার্টফোন বা ডিভাইস রাখবেন না। রান্না করার সময় কিংবা খোলা মাঠে কড়া রোদে কাজ করার সময় সঙ্গে ডিভাইস রাখবেন না।

আপনার সচেতন ব্যবহার আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবে। চার্জ ও ব্যবহারের পাশাপাশি সার্ভিসিংয়ের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। স্মার্টফোন বা ডিভাইস সার্ভিসিং করাতে অনুমোদনহীন কোনো সার্ভিস সেন্টারে যাবেন না। এতে যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে অনুমোদিত কোনো সেন্টার থেকেই সেবা নিতে হবে।

এত কিছুর পরও কিছু বিষয়ে সাবধান হতে হবে। চার্জে থাকা অবস্থায় ডিভাইসের ওপর যাতে বাড়তি চাপ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। স্মার্টফোন বা ডিভাইস চার্জ দেওয়ার সময় পারলে এর কেস খুলে নিন। ফোন চার্জের সময় ইয়ারফোন ব্যবহার বা ফোনে কথা বলার সময় চার্জ দেবেন না। ফোন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলুন। বন্ধ হয়ে গেলে চার্জে বসান। কথা বলার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক।

অনেকে টাকা বাঁচানোর জন্য বা অজ্ঞতা বশত সস্তা বা খোলা বাজারে পাওয়া যায় এমন পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করেন। এসব পাওয়ার ব্যাংক মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি ঘটাতে পারে বিস্ফোরণও। ফলে এখনই সতর্ক হোন। খেয়াল রাখবেন, ব্যবহার করতে করতে ব্যাটারি একটু ফুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবর্তন করা জরুরি।

আপনার একটু অবহেলা বয়ে আনতে পারে কান্না। স্মার্ট হতে চাইলে সব বিষয়েই স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে আনস্মার্ট কাজ করা যাবে না। মুঠোফোন বা কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে যেন সংবাদের শিরোনাম হতে না হয়। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য হলেও অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

এসইউ/এমএস