শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দ দূষণের বহু উৎস আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্প কারখানা কোনো ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম আছে তা মানা হচ্ছে না।
Advertisement
তবে বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, শব্দদূষণ একটি দণ্ডণীয় অপরাধ। প্রথমবার অপরাধের জন্য অনধিক এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভদণ্ড। আর পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনদিখ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভদণ্ড হতে পারে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণে যেসব কঠিন রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে
শব্দদূষণ মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। শব্দ স্তরের গ্রহণযোগ্য পরিমাণ প্রায় ৬০-৬৫ ডেসিবেল, যা একটি সাধারণ কথোপকথনের সমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দের মাত্রা কারও কারও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
Advertisement
শব্দ দূষণের বিভিন্ন উৎসসমূহ-
>> শিল্প উৎসের মধ্যে আছে টেক্সটাইল মিল, ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান্ট, প্রিন্টিং প্রেস ও ধাতু শিল্প। বেশিরভাগ শিল্পে ভারি মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা খুব উচ্চ মাত্রার শব্দ তৈরি করে।
এক্ষেত্রে কম্প্রেসার, এক্সজস্ট ফ্যান, গ্রাইন্ডিং মিল ও জেনারেটরের মতো সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়। যা পরিবেশে সামগ্রিক শব্দের মাত্রা বাড়ায়।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে যানজটে গাড়ির শব্দ: গবেষণা
Advertisement
এই পরিবেশে যারা কাজ করে তারা যদি শব্দের প্রভাব কমাতে ইয়ারপ্লাগ পরার মতো যথাযথ ব্যবস্থা না নেন, তাহলে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন।
>> অটোমোবাইল বিপ্লব শহুরে অঞ্চলে পরিবেশ বা শব্দ দূষণের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাস, ট্রেন ও ট্রাকের মতো যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যানজটের কারণে বেশি মাত্রায় হর্ণের ব্যবহার হয়, ফলে অসহনীয় শব্দ ছোট-বড় সবারই কানের ক্ষতি করছে ও মস্তিষ্কে খারাপ প্রভাব ফেলছে।
>> এছাড়া জনসভা, ধর্মঘট, নির্বাচন, ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ ইভেন্টগুলোর মতো পাবলিক ফাংশনগুলোতে অনেক জোরে মাইকিং বা স্পিকার চালানো হয়। ফলে শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়।
>> ভারী ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে কিছু খামারে ৯০-৯৮ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই সরঞ্জামগুলোর মধ্যে আছে থ্র্যাশার, নলকূপ, ট্রাক্টর, ড্রিলার, চালিত টিলার ও হারভেস্টার।
>> এছাড়া সামরিক সরঞ্জাম যেমন- আর্টিলারি ট্যাংক, রকেট উৎক্ষেপণ, সামরিক বিমানের মহড়া, বিস্ফোরণ ও শুটিং অনুশীলন মারাত্মক শব্দদূষণকারী।
আরও পড়ুন: কানের যেসব সমস্যা গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দেয়
>> এমনকি নির্মাণ কাজ, ওয়ার্কশপ ও অটোমোবাইল মেরামত শব্দদূষণ সৃষ্টি করে। এ ধরনের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো প্রচুর শব্দ উৎপন্ন করে, যা শ্রবণ ক্ষমতার ক্ষতি করে।
>> গৃহস্থালীর কার্যক্রমেও কিন্তু শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। যেমন- দরজা জোরে ধাক্কা দেওয়া, বাচ্চাদের খেলার আওয়াজ, আসবাবপত্র নড়াচড়া, বাচ্চাদের কান্না, উচ্চস্বরে তর্ক করার ইত্যাদি।
এছাড়া প্রেসার কুকার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিন, মিক্স-গ্রাইন্ডার, ডেজার্ট কুলার, এক্সস্ট ফ্যান ও এয়ার-কন্ডিশনারগুলির মতো গৃহস্থালির সরঞ্জামগুলো সমানভাবে প্রচুর শব্দ তৈরি করে।
>> এমনকি অফিস সরঞ্জাম যেমন- প্রিন্টার, ফটোকপিয়ার ও টাইপরাইটার শব্দ দূষণে অবদান রাখে।
আরও পড়ুন: ঠান্ডায় কানে তালা লাগলে দ্রুত যা করবেন
শব্দ দূষণ প্রতিরোধে করণীয়
বিভিন্ন সংস্থার আদর্শ আইন
পরিবহন সেক্টরের শব্দ নিয়ন্ত্রণ, সঠিক নগর পরিকল্পনা-জোনিং কোডের ব্যবহার, রাস্তার শব্দ নিয়ন্ত্রণ, শব্দ-হ্রাসকারী স্থাপত্য নকশা ও বিমানের শব্দ কমানো হলো কিছু শব্দ প্রশমন ব্যবস্থা। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার
শব্দদূষণ কমানোর জন্য একটি সাশ্রয়ী টিপস হল ইয়ারপ্লাগ পরা। আশপাশের পরিবেশ থেকে শব্দের পরিমাণ কমাতে এগুলো কাজের জায়গায় ও ঘুমানোর সময় পরিধান করতে পারেন। এটি ব্যবহারে স্বাস্থ্যকর ঘুম ও কানের পর্দার ক্ষতি প্রতিরোধ হবে।
সাউন্ডপ্রুফিং
যেসব শিল্প কারখানা তাদের যন্ত্রপাতি থেকে প্রচুর শব্দ উৎপন্ন করে, তারা উচ্চ শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে শব্দরোধী উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।
এমনকি বাড়িতেও সাউন্ডপ্রুফিং উপকরণগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডবল-পেন উইন্ডো শব্দদূষণ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকরী।
আরও পড়ুন: ঘুমের যে ব্যাধিতে হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে
জানালা বন্ধ রাখুন
আপনার বাড়ির আশপাশে রাস্তা, যানজট কিংবা অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করলে জানালা বন্ধ রাখুন। ডবল-পেন উইন্ডো বা ডোর হলে আরও বেশি উপকৃত হবেন।
শব্দ প্রতিরোধী হেডফোন
শিল্প ও নির্মাণ শ্রমিকদের শব্দদূষণের ক্ষতি কমাতে বাধ্যতামূলক হেডফোন ব্যবহারের ব্যবস্থা করা উচিত কর্তৃপক্ষের। এ ধরণের হেডফোন অবাঞ্ছিত শব্দ ফিল্টার করে ও কানে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়।
গাছ লাগান
কম্পন ও শক্তিশালী শব্দ তরঙ্গ কমানোর একটি সহজ উপায় হলো বাড়ি বা অফিসের চারপাশে গাছ লাগানো। এক্ষেত্রে শব্দদূষণ একটু হলেও কমবে ও আপনার শারীরিক ক্ষতি কমাবে।
সূত্র: কনজার্ভ এনার্জি ফিউচার
জেএমএস/এমএস