ভ্রমণ

শরীর পোড়ানো গরম নিয়ে ইট-পাথরের দিল্লিতে

বাবর আলী। পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহী। সাইক্লিং, ম্যারাথন রানও তার সঙ্গী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয় করেছেন হিমালয়ের সাড়ে ২২ হাজার ফুটের ভয়ংকর চূড়া ‘আমা দাবালাম’। এর আগে হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সাইকেল চালিয়ে দেশের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু কৃতিত্ব। এবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে। ভূ-স্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে বানিহাল, উধমপুর, জম্মু, পঠানকোট হয়ে দিল্লি ও আগ্রা। পরে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ঝাঁসী পেরিয়ে প্রবেশ তেলঙ্গানায়। এর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক হয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে সফর শেষ হবে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে ৪৫ দিনে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সফর করবেন তিনি।

Advertisement

এই সফরের প্রতিদিনের গল্প থাকবে জাগো নিউজে। আজ থাকছে একাদশ পর্ব।

দিন ৯। সাইকেল নিয়ে যখন মহাসড়কে নেমেছি, তখনও ফ্লাইওভারের বাতি নেভেনি। রাতভর ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে সকালের প্রথম আলোর কাছে ম্লান হতে শুরু করছে সাদা আলো ছড়ানো বাতিগুলো। বিশাল এক ট্রাক্টর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাহাজের খোলের মতো দেখতে অবয়ব। বার কয়েক দেখেও ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না জিনিসটা কী। মুরথাল থেকে এগিয়ে যাচ্ছি দিল্লি শহরের দিকে। শহর যত এগিয়ে আসছে, প্রকৃতির নানান উপাদান ব্যস্তানুপাতিক হারে কমছে। দূরে উঁকি দিতে শুরু করেছে সুউচ্চ সব অট্টালিকা। ইট-সুরকির জঙ্গল ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে প্রাকৃতিক পরিবেশকে।

কিছুদূর চালাতে হাতের বামে পড়লো বৃহদায়তনের রাজীব গান্ধী এডুকেশন সিটি। দূরে থাকা হাইরাইজ সব বিল্ডিং এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। যেন গ্রাস করে নেবে সবকিছু। দুনিয়ার অন্যতম আবিল শহরে পা রাখতে যাচ্ছি। বাতাস গুণমান সূচকে তলানির দিকেই থাকে এর অবস্থান। মাঝে মধ্যেই বাইরে বেরোনোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় এ শহরের বাতাস। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে ঘরে থাকার টোটকা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।

Advertisement

আরও পড়ুন>> মহাভারতের কুরুক্ষেত্র-বাবরের পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্রে 

কুণ্ডলী নামক জায়গার পরে হরিয়ানা ছাড়িয়ে প্রবেশ করলাম দিল্লিতে। ভারতের রাজধানী শহর। একই সঙ্গে ইউনিয়ন টেরিটরি-ও। যাত্রাপথে জম্মু ও কাশ্মীরের পর দ্বিতীয় ইউনিয়ন টেরিটরি। সম্ভবত শেষ ইউনিয়ন টেরিটরি আমার পথচলার। দিল্লিতে ঢুকতেই স্বাগত জানাল ‘জাস্ট চিল ওয়াটার পার্ক’। সময়ের অভাবে ‘চিল’ না করেই ‘জাস্ট’ সামনে এগিয়ে যাওয়া। কিছুটা সামনে পড়লো ত্যাগ বাহাদুর মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স। শিখদের দশজন ধর্মীয় গুরুর মধ্যে ইনি নবম। মোগল যুগে সম্রাট আওরঙ্গজেবের বশ্যতা স্বীকার না করায় জনসমক্ষে হত্যা করা হয় তাকে।

দিল্লিতে প্রবেশের পর থেকে শুরু হয়েছে উড়ালপুল আর উড়ালপুল। একটা থেকে নামছি মাত্রই আরেকটা হাজির চড়াই নিয়ে। শহরের মূল জনস্রোতে না মিশে এসব সড়ক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এক উড়ালপুল থেকে চোখে পড়লো সারিবন্দি অসংখ্য ইলেকট্রিক পোল। বিজলিবাতির চমক দূর থেকে দূরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইস্পাতের এসব কাঠামো। হোর্ডিং আর বিলবোর্ডের প্রাবল্যে রাস্তার ধার থেকে গাছপালা একেবারে উধাও। লোহার কাঠামোতে ভর দিয়ে দাঁড়ানো বিলবোর্ড থেকে দীপিকা পাড়ুকোন হাত মেলে ডাকছে। অতি মোহনীয় সে আহ্বান!

আরও পড়ুন>> ডোগরা রাজবংশের তল্লাটে 

Advertisement

রাস্তার ধারে কিংবা উড়ালপুলের খানিকটা চওড়া অংশে পায়রাদের ভিড়। লোকে ভুট্টার দানা কিনে ছড়িয়ে দিচ্ছে কবুতরদের জন্য। এই ব্যাপারটা দারুণ লাগলো। দিল্লি শহরে পুরো দিনে এই দৃশ্য চোখে পড়েছে অসংখ্যবার। দানার সঙ্গে অনেকে নিয়ে আসেন পানিও। কিছু জায়গায় মাটির চওড়ামুখো পাত্র আছে জল ধরে রাখার জন্য। পায়রার জন্য এ আয়োজন হলেও কাক-শালিকের অংশও থাকে। তারাও নিজেদের অংশটুকু খুটে খেয়ে নিচ্ছে। স্বরূপ নগরের পরে বিশাল এলাকাজুড়ে ময়লার ভাগাড়। স্তরে স্তরে সজ্জিত ময়লা রূপ নিয়েছে পাহাড়ের। কে যেন গুগল ম্যাপে জায়গাটাকে ‘মাউন্ট দিল্লি’ বলে চিহ্নিত করে রেখেছে!

মাউন্ট দিল্লি চড়তে গেলে শারীরিক সামর্থ্য আর ইচ্ছাশক্তির চেয়েও বেশি দরকার পড়বে নাসিকাশক্তি সাময়িক বন্ধ রাখার দক্ষতার! নিয়মিত প্রণয়মা করলে সে দক্ষতা অর্জন করাই যাবে! এই ময়লার ভাগাড় থেকে শহরের কলেবর আর জনসংখ্যা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কী পরিমাণ বর্জ্য যে এরা দৈনিক উৎপাদন করছে! অন্য কিছু বাদ দিলেও, তিন কোটি লোকের শহর এই দিল্লিকে দৈনিক হজম করতে হয় সমপরিমাণ লোকের মানবনির্যাস। ভাগাড়ের পাশ ঘেঁষেই খালের মতো কালো কুচকুচে জলের একটা ধারা আমার সঙ্গেই বয়ে চলছে।

রাস্তা চলতে হচ্ছে গুগল ম্যাপে চোখ নিবদ্ধ করে। দিল্লির পথেঘাটে লুপ, ইউটার্ন আর উড়ালপুলের কমতি নেই। একবার পথ ভুল হলে উল্টোদিকে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিন-চার কিলোমিটার বিপরীত পথে চালিয়ে তবেই আগের জায়গায় ফেরত আসতে হবে। দিল্লির বাসিন্দাদেরও এসব লুপ কিংবা ইউটার্নে ভুল হয়। চোখের সামনেই দেখলাম তিন-চারবার। আমি একবার ভুল করে প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে আবার ঠিক রাস্তায় আসতে পারলাম। ম্যাপে চোখ আটকে থাকাতেই বাকি দ্রষ্টব্যের দিকে দৃষ্টিদানের সুযোগ আজ কম। অবশ্য দিল্লির দ্রষ্টব্যগুলো নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ নেই। অতীতেও এই শহরে এসেছি। এর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় আছে। লাল কিল্লা থেকে কুতুব মিনার হয়ে হুমায়ুনের কবর- অতীতে এসব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আজ রাজধানী শহর থেকে কোনোক্রমে মানে মানে বেরিয়ে যেতে পারলেই বাঁচি। দিল্লির গরম নিয়েও আমার মধ্যে দৃঢ়প্রোথিত ট্রমা আছে। প্রথম যেবার দিল্লি এসেছিলাম, এয়ারপোর্টে নেমেই মনে হচ্ছিল কে যেন গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিচ্ছে পুরো শরীরে! পরে যতবারই এসেছি, ততবারই এমন অভিজ্ঞতা। জুন-জুলাই-আগস্টে দিল্লির গরম বুকে কাঁপন ধরিয়েছে পূর্বে। সেখানে এপ্রিলের দাবদাহের গরমকে সমীহ করতেই হবে।

যাত্রাপথের নানান সাইনবোর্ডগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। কাশ্মীরি গেটের দিকনির্দেশক ফলক দেখে জায়গাটা স্মৃতির কোণে জ্বলজ্বল করে উঠলো। দিল্লি থেকে মানালি যাওয়ার বাসে এখান থেকেই চাপি আমরা। আউটার রিং রোড ধরে চলছি। অদূরে যমুনা নদী। টানা চালিয়ে রাস্তার ধারেই পেলাম সেলিমগড় দুর্গ। দিল্লি সালতানাত হয়ে ক্ষমতা মোগলদের হাতে গেলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বাবরপুত্র হুমায়ুনকে ১৫৪০ সালে সিংহাসনচ্যুত করেন শেরসাহ সুরি। তার পুত্র সেলিম শাহ সুরি এই সেলিমগড় ফোর্ট তৈরি করেন। তবে সেলিম শাহ সুরি খুব বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেননি। ১৫৫৫ সালে হুমায়ুন সেলিম শাহকে হারিয়েই ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। এই দুর্গের ব্যবহারকে আরেক কাঠি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব! তিনি একে ব্যবহার করেছিলেন জেলখানা হিসেবে।

আজ মোটরসাইকেল আরোহীদের সবার মাথায় শোভা পাচ্ছে শিরস্ত্রাণ তথা হেলমেট। গত কদিনে হেলমেট পরা আরোহীর সংখ্যা হাতের আঙুল গুনে বলে দেওয়া যায়। পাঞ্জাব-হরিয়ানায় হেলমেট মাথায় গলাতে কেউ আগ্রহী নয়। দিল্লির ট্রাফিক পুলিশ শিরস্ত্রাণের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দিতে আগ্রহী নন- এ ব্যাপারে নিশ্চিত। ছোলে-বাটোরে বিক্রি হচ্ছে দেখে এক জায়গায় থামলাম। সকালের নাশতার আগেই ৬২ কিলোমিটার চালানো হয়ে গেছে। অনেকটুকু ঝেড়ে ফেলা গেছে দিল্লিকেও।

নাশতা সেরে সাইকেলে চাপতেই অদ্ভুত রকমের গরম অনুভূত হলো। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়া আর বাতাসকে যেন মনে হচ্ছে সুদূর অতীতের স্মৃতি। অথচ এই কিছুক্ষণ আগেই তো সঙ্গে ছিল। জ্বলন্ত কয়লার মতো রোদ, গায়ে ছ্যাঁকা দিচ্ছে রীতিমতো। তিনটা বাঁক ঘুরে গাছে ছাওয়া একটা সুন্দর রাস্তা পাওয়া গেলো। ছায়ার স্বস্তিটা মিলিয়ে নিতে সময় লাগলো না। দিল্লির ট্রাফিক ফাঁস আবির্ভূত হলো স্ব-মহিমায়। সিগন্যালে সিগন্যালে সময় ক্ষয়। অবশ্য দিল্লির অনেক বাইকার ট্রাফিক সংকেতের থোড়াই কেয়ার করে। লাল বাতি জ্বলা অবস্থাতেই ফুটপাতের ওপর দুই চাকা তুলে দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার রাজধানীবাসী বাইকারদের স্বরূপই এক।

মূল শহরে না ঢুকে শহরের বাইরে বেরোনোর এন্তেজাম দিল্লি শহরজুড়েই। সব উড়ালপুলই একমুখী। নিয়মিত বাসিন্দাদের জীবন সহজতার করার ভালো উদ্যোগ। অবশ্য আমার মতো ক্ষণিকের অতিথির জন্য এগুলো গোলকধাঁধা। লুপের পর লুপ আসছে রাস্তায়। একবার ভুল করে কট খাওয়ায় আমি অতিরিক্ত সাবধান। আগেই গতি কমিয়ে সঠিক পথ দেখে নিই। এত এত লুপের গোলকধাঁধা বোঝার চেয়ে নারীদের ‘তোমার যা খুশি করো’-এর অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা সহজতর হবে বলেই আমার ধারণা। বদরপুর ছাড়াতেই দিল্লির সীমানা শেষ। আবার হরিয়ানা রাজ্যে প্রবেশ করলাম। জেলার নাম ফরিদাবাদ। দিল্লির সঙ্গে মেট্রো যোগাযোগ আছে এ শহরের। উড়ালপুলের আরও ওপরে চলে গেছে মেট্রোর লাইন। মিনিট কয়েক বাদে বাদেই মেট্রো ছুটে যাচ্ছে দিল্লি কিংবা ফরিদাবাদ অভিমুখে।

আরজন্দার কাছে সাক্ষাৎ হলো একদল অসভ্যের সঙ্গে! মিটার বিশেক দূরের ফুটওভার ব্রিজে না উঠে হাইওয়ের মাঝের উঁচু লোহার বেড়া অনেক কসরত করে ডিঙোচ্ছে। কাইলগাও এর পরে দিল্লি পাবলিক স্কুলের ক্যাম্পাস। সেই শ্রীনগর থেকে এই স্কুলের নানান শাখা দেখে আসছি। কত শত শাখা এর কে জানে! এর মধ্যে কুমিল্লার মাতৃভাণ্ডারের মতো আদি ও আসল কোনটা? বল্লভগড় ছাড়াতে ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরলাম। সকাল থেকে অবশ্য এনএইচ-৪৪ বাদে আরও দুটো হাইওয়ে ধরে চলেছি। এনএইচ-১ এবং ২ যাত্রাপথেই ছাড়িয়ে এসেছি। উড়ালপুলে মাঝে মধ্যেই দেখা মিলছে স্পিডগান সমেত পুলিশ ভ্যানের। ফাঁদ পেতে মুরগি ধরছে। এভিয়েটর সানগ্লাসের নিচে ধূর্ত শেয়াল মামার হাসি এ-কান থেকে ও-কান অবধি। সিকরির পর থেকে ম্যারেজ গার্ডেনগুলোর রমরমা ব্যবসা। রাস্তার পাশের অংশ তাদেরই দখলে। আর রাস্তা মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির করতলে। ভারতের রাস্তায় প্রচুর ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি। মূলত মারুতি সুজুকি, হোন্ডা আর হুন্দাই গাড়ির রাজত্ব রাজপথে। সোয়া বারোটায় পলওয়াল পৌঁছে গেলাম। হরিয়ানার জেলা শহর এটি। এক ধাবায় আলু-মটর আর চাউল খেলাম তৃপ্তি সহকারে। বিল হিসেবে যা চাইলো, তাকে বিল না বলে ‘খাল’ বলাই ভালো! ওইটুকুন আলু-মটর আর ভাতের দাম দেড়শ রুপি! যাই হোক, খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ফের সিটে চড়ে বসতেই চোখে পড়লো অসংখ্য হাসপাতাল।

আমাদের দেশে গোবরের ঘুঁটে তৈরি হতে দেখেছি। এখানে ওরা রীতিমতো গোবরের কুঁড়েঘর বানিয়ে ফেলেছে। তাও আবার গায়ে কারুকাজ করা গোবর নির্মিত কুঁড়েঘর। চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহে খড়ের তৈরি কুঁড়ে চোখে পড়েছে। গোবরের তৈরি কুঁড়ে চর্মচক্ষে প্রথম দেখলাম। অল্প এগিয়েই মহাসড়ক থেকে খানিকটা তফাতে ‘কোস মিনার’ পড়লো। কালকের দুটোর চেয়ে বেশ ভগ্নদশা এর। এখনো চলছি ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ ধরে। বামের একটা রাস্তা এগিয়েছে মিরাটের দিকে। রাস্তার বিপরীত দিকে আরেকটা কোস মিনার পেরিয়ে চায়ের পিপাসা মেটানোর জন্য থামলাম। তরুণ দোকানি আগ্রহ নিয়ে নানান খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করলো। ডাক্তার পরিচয় পেয়ে কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলে হোয়াটসঅ্যাপে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আর তিনটে রিপোর্ট আনিয়ে নিলো। তরুণের চোখেমুখে অস্থিরতার ছাপ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন কার?’ উত্তর এলো, ‘গার্লফ্রেন্ডের। আজই ডাক্তার দেখিয়েছে। কী হয়েছে ওর? এগুলো খেলে ঠিক হয়ে যাবে?’ সোজা বাংলায় তার বান্ধবীর হয়েছে দাদ। তাকে বোঝালাম এগুলো এক ধরনের ফাংগাস। ওষুধে সেরে যাবে। এই ফাংগাস নিয়ে একটা মজার ঘটনা পড়ে গেলো। মেডিকেল তৃতীয় বর্ষে পড়ি। ভার্সিটি পড়ুয়া বন্ধু মেডিকেলে এসেছে চর্মরোগ বিভাগে দেখাবে বলে। কপালের চামড়ায় কী জানে হয়েছে ওর। আমি ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলাম। বহির্বিভাগের চিকিৎসক দেখে বললেন, ‘কপালে ফাংগাস হয়েছে। ওষুধ খাও, সেরে যাবে।’ বন্ধু বের হয়ে চিন্তিত মুখে আমাকে বললো, ‘শালার কপাল আমার! মানুষের ফাংগাস (পাঙ্গাস মাছ বুঝিয়েছে!) হয় পুকুরে, আর আমার হইছে কপালে!’

চা ও দোকানির চিকিৎসা-সংক্রান্ত উদ্বেগ মিটিয়ে ফের সাইকেলে। কিলোমিটার দুয়েক এগোতেই বড়সড়ো একটা ধাবা দেখে থামলাম। ধাবার মালিককে রাতে থাকার ব্যাপারে রাজি করিয়ে ফেললাম। জায়গাটার নাম আওরঙ্গাবাদ; পালওয়াল জেলার অংশ। এই নামে জেলা আছে মহারাষ্ট্র আর বিহারে। ঘড়ির ঘণ্টার কাঁটা সবে দুইয়ের ঘর অতিক্রম করেছে। এটি মূলত ট্রাক ড্রাইভারদের ধাবা। পাশেই সুবিশাল ফাঁকা জায়গা। ‘অল ইন্ডিয়া পারমিট’-ওয়ালা কয়েকটা ট্রাক দাঁড়িয়ে। ধাবার ভেতরের চারপাইয়ে গা এলিয়ে শান্তি পাওয়া গেলো না। মাছি মাত্রাতিরিক্ত ত্যক্ত করছে। ফাঁকা জায়গায় একমাত্র বড় বৃক্ষ নতুন পাতায় হালকা সবুজ রংধরা একটা নিম গাছ। এর তলেই আসন গাড়লাম। সঙ্গ দিতে ক্ষণে ক্ষণেই হাজির হচ্ছে অস্থিরমতি কাঠবিড়ালির দল। চারটে বানরও ঘুরঘুর করছে আমাকে আর নিমগাছ কেন্দ্রে রেখে।

চলবে…

এএসএ/জিকেএস