দেশজুড়ে

মহাদেবপুরে ঐতিহ্যবাহী হুরমেলা

নওগাঁর মহাদেবপুরে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুরমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনব্যাপী উপজেলার চান্দা গ্রামে ‘পীর এ কামেল আবাল দেওয়ান’ মাজারকে কেন্দ্র করে মেলা হয়ে আসছে। মেলায় আলীপুর, চান্দা, অর্জুনি, শালগ্রাম সহ আশপাশের প্রায় ২০ গ্রামের বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণিপেশার মানুষের আগমন ঘটে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পীর এ কামেল আবাল দেওয়ানের বাড়ি উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের কোনো এক গ্রামে। তবে কোন গ্রামে তা জানতে পারেননি এ উপজেলার বাসিন্দারা। তারা সাত ভাইবোন। সবার বড় পীর এ কামেল আবাল দেওয়ান। চেরাগপুর ইউনিয়নের চান্দা গ্রামের বাজারের পাশে তিনি ঝুপড়ি করে আরাধনা করতেন। তার মৃত্যুর পর সেখানেই কবর দেওয়া হয়। এরপর সেখানে তার নামে মাজার গড়ে ওঠে। এ মাজারে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা এসে তাদের মনোবাসনা পূরণে মানত করেন।

বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় রোববার মাজারে সমবেত হয়ে যে যার মতো রান্না করে মানত পূর্ণ করেন। মাজারকে কেন্দ্র করেই মূলত মেলা বসে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে চান্দা গ্রামের বাজারসহ ও চান্দা আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মেলা হয়ে আসছে। মেলা সকাল থেকে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মেলায় আলীপুর, চান্দা, অর্জুনি, শালগ্রাম সহ আশপাশের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের আগমন হয়। হুর হুর করে মেলা শুরু ও শেষ বলে একে হুর মেলা নামে পরিচিত।

মেলার প্রধান আকর্ষণ জিলাপি। বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকানের, মিষ্টি, চিনির তৈরি হাতি-ঘোড়া-বাতাসাসহ পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এছাড়া পাওয়া যায় সাংসারিক ও কৃষি কাজের ছোট-বড় ঝুড়ি, কুলা, ঝাড়ু, পিঁড়ি, পাখা, দা-কাস্তে-কোদাল-বটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

Advertisement

এলাকাবাসী এ মেলা থেকে সারা বছরের সাংসারিক ও কৃষি কাজের যন্ত্রাংশের চাহিদা পূরণ করে। মেলায় আরও আছে ছোটদের বিভিন্ন খেলনা ও রাইডস।

চান্দা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ লোকমান হোসেন বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি এ মেলা। মাজারকে কেন্দ্র করেই মেলা হয়ে থাকে। মেলাটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। হুর হুর করে মেলা শুরু ও শেষ হয়ে যায়। তাই হুরের মেলা নামে পরিচিত।

বগুড়া থেকে কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে মেলায় এসেছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত তিনবছর থেকে এ মেলায় কাঠের আসবাবপত্র বিক্রির জন্য আসেন। মেলার মূল পর্ব একদিনের জন্য হলেও আসবাবপত্র বিক্রি হয় আরও তিনদিন। খাট ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে আছে। আশা করছেন বিক্রি ভালো হবে।

নওগাঁ পৌর শহর থেকে মেলায় কসমেটিকস দোকান দিয়েছেন এনামুল হক। তিনি বলেন, গত বছর প্রায় ৪৭ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়েছিল। এবার প্রথম দিন ৫ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। আশা করছি ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। তবে এ বছর মানুষ ঈদের আনন্দের ব্যস্ততায় মেলামুখী কম হয়েছে।

Advertisement

মাজার পরিচালনা কমিটি সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ মাজারকে কেন্দ্র করে এখানে দিনব্যাপী মেলা হয়ে আসছে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা তাদের মনোবাসনা পূরণ করতে মানত করেন। বছরের এ একটি দিন মাজারে হাজার হাজার মানুষের আগমন হয়। এছাড়া সপ্তাহের রোববারও এখানে উৎসব হয়।

আব্বাস আলী/এসজে/জেআইএম