ঈদুল ফিতরে টানা পাঁচদিনের সরকারি ছুটি কাটাতে সিলেটের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। জেলার সবগুলো পর্যটনকেন্দ্রই এখন লোকে লোকারণ্য। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নেই ঠাঁই। প্রকৃতিকন্যা জাফলং, ভোলাগঞ্জের সাদা আর বিছানাকান্দি অথবা চা-বাগান যে দিকেই চোখ যায় সেখানেই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়।
Advertisement
পর্যটকদের ঢল নামায় খুশি পর্যটকনির্ভর পেশার মানুষেরা। হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী, ট্যুর গাইড, আলোকচিত্র শিল্পীরা বলছেন, কিছুদিন বিরতি দিয়ে হলেও প্রাণ ফিরেছে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে।
প্রকৃতির টানে ছুটে আসা পর্যটকদের বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রলোতে অন্যরকম এক আবহের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিনে মুখরিত পর্যটনকেন্দ্রসমূহ। ঈদের দিন বিকেলে এখানকার চা-বাগানগুলোতে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি।
ঈদের দ্বিতীয় দিন জল, পাহাড়-টিলা, নদী আর পাথর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছানাকান্দি, জৈন্তাপুরের সারি নদী, কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর, উৎমাছড়া এবং মিঠাপানির একমাত্র জলারবন রাতারগুলের সবুজের সমারোহে পর্যটকের ভিড়।
Advertisement
এছাড়া সিলেট নগরের এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, শহরতলির ড্রিমল্যান্ড, এমএজি ওসমানী শিশুপার্ক, চা-বাগানের ছড়ায় স্থাপিত ওয়াকওয়েতেও শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী লোকজনের ভিড়। সিলেট শহরতলির প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রও পর্যটকদের ভিড় ছিল দেখার মতো।
দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজারের পাশাপাশি সিলেট নগরের বিভিন্ন পার্কগুলোতে দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। সিলেটের সবকটি হোটেল-মোটেলেও রুম খালি নেই। সবই বুকড হয়ে গেছে।
নরসিংদী থেকে সিলেটে ঘুরতে আসা রিজওয়ানা বেগম নামের এক পর্যটক জাগোনিউজকে বলেন, ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতিকন্যা জাফলং, পান্তুমাই-মায়াবি ঝর্ণা, জল-পাথরের স্বচ্ছ-সফেদ পানি আর মিঠাপানির একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলের অপরূপ সবুজ দৃশ্য হাতছানি দিয়ে যেন আমাকে ডাকে। তাই এবার পরিবার নিয়ে সিলেটের পর্যটনস্পটগুলো ঘুরে দেখতে এসেছি।
রিজওয়ানা আরও বলেন, সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো দেশের অন্য যে কোনো পর্যটন এলাকা থেকে একটু আলাদা। তাই লম্বা ছুটি পেলেই এখানে ঘুরতে আসি।
Advertisement
নারায়ণগঞ্জ থেকে বন্ধুদের ঘুরতে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি ঈদের ছুটিতেই আমরা বন্ধুরা মিলে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। এবার ঈদে আমরা জাফলং, সাদাপাথর ও বিছানাকান্দি এসেছি। বন্ধুরা বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস করছে।
সিলেটের মেঘালয়ের কুলঘেঁষা ভোলাগঞ্জের সাদাপারের শীতল পানিতে শরীর জুড়াতে এসেছেন টাঙ্গাইল এলাকার যুবক কামরুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন স্থান আগেও এসেছি, কিন্তু সাদাপাথর এ প্রথম এসেছি। এখানে স্বচ্ছ পানির নিচে জমে থাকা সাদাপাথর দেখে ভালোই লাগছে। ভারত থেকে নেমে আসা হিমশীতল পানিতে ঘা-ভাসিয়ে দিলে এ গরমে অনেক রোমাঞ্চকর অনুভূতি অনুভব করা যায়।
পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান যেন সিলেটকে ঢেকে রেখেছে সবুজ চাঁদরে। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এ লীলাভূমিতে। সিলেটকে বলা হয় দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ। সিলেটের চা-বাগানগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। স্থানীয় পর্যটকসহ ঈদের দিনে হাজার হাজার পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
শনিবার (২২ এপ্রিল) বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক সিলেটের তারাপুর, লাক্কাতুরা, মালনীছড়াসহ বিভিন্ন চা-বাগান দেখতে ছুটে এসেছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঈদুল ফিতর পরবর্তী সময়ে ৪/৫ দিনে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় স্থানীয় পর্যটকসহ ১০ থেকে ১২ লাখ পর্যটক থাকবেন বলে ধারণা করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেই পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো পর্যটক হয়রানি শূন্যের কোটায় রাখতে এবার ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নৌকায়, খাবার হোটেল, পর্যটনকেন্দ্রের দোকান ও পরিবহনস্থলে দায়িত্ব পালন করে তথ্য সংগ্রহ করছেন। যাতে কেউ পর্যটকদের কোনো ধরনের হয়রানি করতে না পারে।
সিলেট জেলা পুলিশের সিনিয়র পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সম্রাট তালুকদার বলেন, ঈদে পর্যটকদের হয়রানি কমাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ। এসব কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।
জেএইচ/এমএস