ফেনীতে এক হাজারেরও বেশি অটিস্টিক শিশু-কিশোরদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। জেলায় সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক। অটিস্টিক শিশুদের জন্য প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু থাকলেও নির্ধারিত সেবা পাচ্ছে না তারা। এতে অটিজম কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফেনী জেলায় ২৬ হাজার ২৩৩ জন নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১ জন অটিস্টিক। তাদের সরকার নির্ধারিত হারে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ৪৭৮ জন মাসিক ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন করতে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।
১৯৮৭ সালে শহরের মিজান রোডে ফেনী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরের বছর থেকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৯৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এদের জন্য মাত্র চারজন প্রশিক্ষিত ও একজন সাধারণ শিক্ষক নিয়োজিত রয়েছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকারিয়া ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলটি পরিচালনার জন্য কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় আসবাবপত্র ও উপকরণের যথেষ্ট সংকট রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
Advertisement
জাকারিয়া ফারুক বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই সমস্যার প্রধান বিষয়। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিকভাবে তাদের প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরি।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের আমুভূঞার হাট এলাকার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী হারুনুর রশিদের স্ত্রী ফরিদা আক্তার। তিন সন্তানের মধ্যে তার দুই ছেলেমেয়েই প্রতিবন্ধী। এদের একজন হুমায়ুন রশিদ ও আমেনা আক্তার।
তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শহরের ডাক্তারপাড়ায় বসবাস করেন ফরিদা আক্তার। ছেলে হুমায়ুন ও মেয়ে আমেনা কেউ-ই জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। পাঁচমাস বয়সে খিঁচুনি দেখা দিলে সেখান থেকে আমেনার শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এক বছর বয়সে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায় হুমায়ুনের। পরবর্তী সময়ে নিউমোনিয়া দেখা দিলে শারীরিক নানা প্রতিবন্ধতা দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসা করানোর পরও সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান ফরিদা আক্তার।
শহরের হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন ফেনী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীতে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিবন্ধী সাহায্য কেন্দ্রটি। সেখানে অটিজম আক্রান্তদের অকুপেশনাল থেরাপি ও স্পিচ থেরাপি দেওয়ার কথা থাকলেও জনবল না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান অভিভাবকরা।
Advertisement
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ২০১৩ সালের ২৪ জুন ফেনীতে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে ১৩ পদে কর্মরত রয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপির পদও শূন্য। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন ৪০-৫০ জন প্রতিবন্ধী ফিজিওথেরাপি নেয়।
ফেনী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে অটিজম কিংবা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার শিশু-কিশোরদের বিকাশে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোররা অনেক উপকৃত হবে।
এসআর/জেআইএম