খেলাধুলা

শুধু বিশ্বকাপ নয়, আমার লক্ষ্য আরও বড়: সোহান

উইকেটকিপিংটা ভালোই করেন। সাথে ব্যাটিংটাও পারেন বেশ। ওপরের দিকে ব্যাট করেন না। ব্যাটিং পজিশন পাঁচ থেকে সাত নম্বরে। ওই জায়গায় একটু হাত খুলে খেলা দরকার। সে কাজটি পারেন বলেই তাকে মাঝে বিবেচনায় আনা হয়েছিল।

Advertisement

খুব আহামরি পারফরম করতে না পারলেও সাহস, আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলে ঢুকে পড়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে তার চটপটে উপস্থিতি আর ব্যাটিংয়ে নেমে প্রতি বলেই কিছু না কিছু করার চেষ্টা অল্প সময়েই তাকে বাড়তি পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

মাঝে তিন ফরম্যাটেই জাতীয় দলে নিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। ভাবা হচ্ছিল জাতীয় দলের এক নম্বর উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে সোহানই বুঝি এক নম্বর ‘চয়েজ’! কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। পুরো এক বছরও জাতীয় দলে টিকে থাকতে পারেননি। এখন কোন ফরম্যাটেই নেই সোহান।

হঠাৎ কি হলো যে কোন ফরম্যাটেই নেই? কি ভাবছেন সোহান? নিজের অনুভব, উপলব্ধি কি? আবার কি সহসাই জাতীয় দলে ফেরার আশা করেন, নাকি মানসিক দিক থেকে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি?

Advertisement

ঈদের ছুটিতে খুলনায় নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে জাগো নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। সেখানে তার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক খোলামেলা কথাই বলেছেন। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তার চুম্বকাংশ।

জাগো নিউজ: হঠাৎ কি হলো সোহান তিন ফরম্যাট থেকেই বাইরে। সোহানকে কি আর আগের জায়গায় অর্থ্যাৎ জাতীয় দলে দেখা যাবে না?

সোহান: খুলনা যাচ্ছি। গোপালগঞ্জের কাছকাছি। হ্যাঁ, ইনশাল্লাহ অবশ্যই। আমিতো না দেখার কোন কারণ খুঁজে পাই না। ইনশাল্লাহ আমি ফিরবো আবার।

জাগো নিউজ: এটাকে কি ব্যাড প্যাচ বলা যায়? নাকি অফ ফর্ম বা খারাপ সময়? কী বলা যায়?

Advertisement

সোহান: আমার কাছে কোন কিছু নিয়ে কোন কিছুই মনে হচ্ছে না। হয়তো বা বড় রান করছি না। বাট টিমের জন্য যা যা দরকার কয়েকটা ম্যাচে আমি তাই করেছি। যেখানে যে রকম খেলা দরকার ছিল, আমি সেখানে খেলতে পেরেছি। আমার জায়গা থেকে আমি সন্তুষ্ট। মনে হয় না, খারাপ খেলেছি বা ভাল খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি এমন নয়। তারপরও নিজের ইম্প্রুভ করার সুযোগ আছে। ওই জায়গা থেকে চেষ্টা করছি, ইনিংসগুলোকে আরও ভাল, আরও বড় করার।

জাগো নিউজ: মাঝে প্রায় অপরিহার্য্য হয়ে ওঠার পর হঠাৎই কোন ফরম্যাটে জাতীয় দলে না থাকা কতটা হতাশার?

সোহান: আসলে ন্যাশনাল টিমে নাই, সেটাতো অবশ্যই খারাপ লাগা। এতে করে যে মন খারাপ হয় না, তা নয়। হয়; কিন্তু আমি একটু অন্যভাবে দেখতে চেষ্টা করছি। এটাও একটা সুযোগ যে নিজেকে আরও ভালমত তৈরি এবং পরিণত করার। ধরেন অনেকেই দেখে কে ৭০ করতেছে কার ব্যাট থেকে লম্বা লম্বা ইনিংস বেরিয়ে আসছে; কিন্তু মাঝে মাঝে যে ১০ বলে ২০ রানের ইনিংসও ক্যামিও অনেক কাজে দেয়। ৩০-৪০ করলে তা খুব নজরে আসে না। ফোকাসও হয় না।

তবে তা নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত না। শেখ জামালে খেলছি, আমার ফোকাস শেখ জামালে। আমার টিম আলহামদুলিল্লাহ ভাল খেলছে। আমি তাতেই অনেক সন্তুষ্ট। অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা নেই। আমার বিশ্বাস এবং আস্থা আছে। জানি আবার যখন সময় আসবে আমি ইনশাল্লাহ ঠিক নিজেকে মেলে ধরবো।

হ্যাঁ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের কথা যদি ধরেন, তাহলে বলবো ওই ফরম্যাটে সবারই উন্নতি দরকার আছে। জায়গা আছে। কিন্তু ওডিআই আর টেস্টের কথা ভিন্ন। হ্যাঁ, টেস্টে ভাল করাই যায়। আমার পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে আমি যে জায়গায় ব্যাটিং করেছি ওই সময় নিজেকে আরও পরিণত করার সুযোগ আসবে।

জাগো নিউজ: সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, তা নিয়ে কোন বিশেষ ভাবনা আছে আপনার?

সোহান: আরও তিন-চার মাস আছে। আমি আমার প্রসেসগুলো ঠিক রেখে নিজের করণীয় কাজগুলো করে যেতে চাই। শুধু এই বিশ্বাকাপ নয়, আমার লক্ষ্য আরও বড়। আমি সে দিকেই তাকিয়ে আছি। এখন ফোকাস শেখ জামালকে নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ হ্যাপি। আমরা খুব বড় টিম না। এরকম টিম নিয়েও চ্যাম্পিয়ন রেসে আছি। শিরোপা দৌড়ে খুব ভালো অবস্থায় আছি। আমার কাছে মনে হয়, সেটাই অন্যরকম সন্তুষ্টি।

জাগো নিউজ: তাহলে কি আপনার চিন্তা ভাবনায় এখন শেখ জামালই ফাস্ট চয়েজ? সেই দলে আপনার ইনপুট কতটা?

সোহান: বলতে পারেন অনেক। আমি নিজর পারফরমেন্সের চেয়েও শেখ জামালকে নিয়ে ভাবি বেশি। দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করি। আমাদের টিম স্পিরিট বেশ ভাল। সবাই দল নিয়ে ভাবে। সাফল্য পেতে মরিয়া।

একটি উদাহরণ দেই। আমাদের দলে একজন বাঁ-হাতি স্পিনার আছে, নাম আরিফ। সে মূলত ছিল নেটবোলার। হয়ত অনেকে চিনে না। তাকে সেভাবে দেখেওনি। প্রিমিয়ার লিগে বাঁ-হাতি স্পিনার খুব গুরুত্বপূর্ণ বোলিং অপশন। কিন্তু দল বদল বা দলগঠনের সময় আমরা তেমন ভাল মানের কোন বাঁ-হাতি স্পিনার নিতে পারিনি।

আমাদের ওই জায়গায় বিশ্বাস ছিল আরিফ পারবে। অথচ সে ছিল নর্মাল একজন নেট বোলার। সে নেটে বোলিং করতো। তার নেটের পারফরমেন্স দেখে আমরা তাকে প্রিমিয়ার লিগে খেলাচ্ছি এবং সে ভালই পারফরম করে যাচ্ছে। এখানো হয়ত ৪-৫ উইকেট পায়নি কোন ম্যাচে। তবে ধারাবাহিকভাবে ভাল বোলিং করে যাচ্ছে। এক-দুই উইকেট করে পাচ্ছে। সময় সময় টিম হিসেবে আমাদের যা যা করার আমরা তা করতে পারছি।

জাগো নিউজ: তাহলে আপনার লক্ষ্যটা কি?

সোহান: আমার লক্ষ্য অনেক বড়। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই সময় আমাকে কিছু বিষয় নতুন করে চিন্তা করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। আমি নিজের অবস্থা আরও পর্যালোচনা করতে পারছি। আর একটা সুযোগ দিচ্ছে।

জাগো নিউজ: আপনার ব্যাটিং নিয়ে কি জাতীয় দলের হেড বা ব্যাটিং কোচের সঙ্গে কথ বলেছেন? কোন টেকনিক্যাল সমস্যা? ফুটওয়ার্ক বা স্কিল জনিত ঘাটতির কারণ কি আছে?

সোহান: এগুলো নিয়ে নর্মালি কথা হয় সবারই। তবে আমি নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করি বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান বাবুল, এবারের লিগে গাজী গ্রুপের হেড কোচ) সাথে। ওই জায়গায় কিছু টিউনিংতো থাকেই। কিছু গ্যাপ তৈরি হলে তিনি বলে দেন কিছু কাজ করতে। আমার কাছে মনে হয় এখন জাতীয় দলের বাইরে থাকায় টিউন করার আরও বেশি সময় ও সুযোগ পাব। আমার ব্যাটিং নিয়ে আমি সেভাবে চিন্তিত না। হয়ত আমার ব্যাটিং ধরন দেখে অনেকের ভাল লাগবে না। এমন নয় আমাকে প্রতি ম্যাচেই রান করতে হবে। এক দুটি ম্যাচে খারাপ খেললে শুনতে হয় রান করতেছি না। আমি তা নিয়ে অত ভাবি না। আমার নিজের প্রতি বিশ্বাসটা আছে। স্কিলের ওপরও আস্থা আছে। আমি অলরেডি বাবুল স্যারের সাথে কাজও করছি কিছু জায়গা নিয়ে। আশা করি ছোট খাট সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।

জাগো নিউজ: তারপরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনার কোন ফরম্যাটে বেশি মনোযোগি হতে হবে? কোন ফরম্যাটে ব্যাটিংটা একটু ভাল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?

সোহান: আমার ওয়ানডে পারফরমেন্সের কথা যদি বলি, তাহলো বলবো দেখেন আমার শেষ ৪ ইনিংস কিন্তু আমি নটআউট। ম্যাচ জিতিয়েও আসছি চার থেকে পাঁচ ম্যাচে। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। হ্যাঁ, টেস্টে আর একটু ভাল খেললে ভাল লাগবে। যদিও খুব বেশি টেস্ট খেলিনি। তবে টি-টোয়েন্টি যে জায়গায় ব্যাটিং করি সেখানে অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে। ওই জায়গায় অনেক সময় অনেক কিছু করারও থাকে না। ওপরে ব্যাটিং করলে একরকম আর নীচে ব্যাটিং করলে অন্যরকম। আরও ভালমত শিখতে পারবো।

জাগো: হাথুরুসিংহের সাথে কথা হয়েছে কি?

সোহান: ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজের সময়ই যা কথা হয়েছে, তারপর আর দেখা হয়নি। কথাও হয়নি।

এআরবি/আইএইচএস