দেশজুড়ে

ঈদের দিনও লোহার শিকলে বাঁধা মমিনুর!

ঈদের খুশিতে সবাই ছোটাছুটি করলেও লোহার শিকলে দুই পা বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন মমিনুর রহমান (২৮) নামে এক যুবকের। ঈদুল ফিতরে সবাই নামাজ পড়তে গেলেও গাছের খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় দিন কাটছে তার। রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন।

Advertisement

মমিনুর লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের ইশোরকোল গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর তৈয়ব আলীর ছেলে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মমিনুর দ্বিতীয়। তার বাবা তৈয়ব আলী একজন দিনমজুর ও মানসিক রোগী। জন্মের ১৬ বছর থেকে শিকলে বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে মমিনুরের। জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই শুধু বাড়ির ভিটা ছাড়া। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে বাবা-মাও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

মমিনুরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, টিনের ভাঙা ঘরের পাশে লোহার শিকলে শিমুল গাছের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। ঘরে একটি ভাঙা চৌকির ওপর কখনো সে দাঁড়িয়ে থাকছে, কখনো সে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছে। আবার কখনো হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন। আজ ঈদের কথা বলতেই মুচকি হেসে দেন মমিনুর।

পরিবার জানায়, জন্মের প্রায় ১৩ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই মমিনুরের মধ্যে মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তার অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেতেন তাকেই মারধর করতেন। সামর্থ্য মতো কিছুদিন চিকিৎসা চালালেও সুস্থ হয়নি মমিনুর। এরপর অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেমে যায়। এরপর দিন দিন আরও বেশি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। এজন্যই পায়ে লোহার শিকল দিয়ে ঘরে গাছের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর।

Advertisement

মমিনুরের বাবা তৈয়ব আলী বলেন, ‘টাকা পয়সা নাই। তাই চিকিৎসা করাতে পারিনি। ১২ বছর ধরে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। আমরা গরীব মানুষ টাকা পয়সা নাই। মানুষের কাছে হাত পেতে যে টাকা পয়সা পেয়েছি তা দিয়ে তার চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেছে। এখন দিনমজুর বাবা নিরুপায় হয়ে সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাইছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য রশিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মমিনুর দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা কালেকশন করে তার চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু শেষ চিকিৎসায় কাজে আসেনি। মানসিক রোগ বেড়ে গেলে বাবা-মা তার দুই পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখছে।

তিনি আরও বলেন, দিনমজুর তৈয়ব আলী নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। তারা খুবই গরিব। এখন মমিনুরের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে পাবনা পাগলা গারদে নেওয়ার কথা আছে।

কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহিদ তাহু জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারটি খুবই গরীব। মমিনুরের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন তিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মমিনুরকে সহায়তা করা হবে।

এসজে/জেআইএম