আইন-আদালত

দৃষ্টি এখন মীর কাসেম আলীর রায়ে

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় আসতে যাচ্ছে মঙ্গলবার। কৃতকর্মের জন্য মানবতাবিরোধী এই অপরাধীর শাস্তি ফাঁসিই থাকছে কি না তা জানতে মানুষের দৃষ্টি এখন আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের দিকে।    যুক্তি-তর্কে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সর্বোচ্চ দণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। অন্যদিকে, দণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা। মীর কাসেমের মুক্তির দাবিতে গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চ বলেছে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবিতে তারা শাহবাগে অবস্থান নেবে। জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমকে রক্ষার চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কাও তাদের। এছাড়া এ রায় ঘিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে নিয়ে সম্প্রতি দুই মন্ত্রীর বক্তব্য উত্তেজনার পারদ আরো চড়িয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানির দাবি জানান।  তিনি বলেন, ‘এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি যে এই মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেম আলীর মামলাসহ যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও তদন্ত সংস্থার অদক্ষতা, অযোগ্যতা এবং দুর্বলতার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা শুধু ব্যস্ত টিভিতে চেহারা দেখানো নিয়ে- এমন কড়া ভাষায় প্রসিকিউটরদের ভর্ৎসনাও করেন তিনি।  এদিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে নিয়ে মন্তব্য করার কারণে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে শাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটতি মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাগুলোর বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ছয়টি আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় এসেছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত চারজনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তারা হলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি বহাল রেখে ষষ্ঠ আপিল মামলার রায় দেয়া হয়েছে গত ৬ জানুয়ারি। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির দণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ সাজা পুনর্বহালের আরজি জানায় রাষ্ট্রপক্ষ আর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানিয়েছে।এদিকে মীর কাসেম আলীর আপিল ৭ কার্যদিবসে শুনানি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ দিন ঠিক করা হয়। এর আগে শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে তা পরিবর্তন করে ৮ মার্চ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।আদালতের আদেশের পর উভয় পক্ষই বলেছে, তারা ন্যায়বিচার পাবেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সর্বোচ্চ দণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এফএইচ/এসকেডি/এনএফ/এবিএস

Advertisement