সাহিত্য

একগুচ্ছ তুর্কি কবিতা

উমিত ইশার ঔজ্জান (১৯২৬-১৯৮৪) তুর্কি সাহিত্যের একজন শীর্ষস্থানীয় লেখক। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় কাজ করলেও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন কবিতার কারণে। তার প্রকাশিত কাব্য ৩৩টি এবং অন্য বই ১৮টি। তার কবিতাসমূহের অধিকাংশই প্রেমের কবিতা। তবে ব্যঙ্গ কবিতাও লিখেছেন তিনি। তারই কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা তুর্কি থেকে ভাষান্তর করেছেন মোরশেদুল ইসলাম—

Advertisement

বিচ্ছেদ বলতে কিছু নেই (পঞ্চম চিঠি)

বিচ্ছেদ বলতে কিছু নেই।এটা আমাদের বানানো কথা।আসলে ভালোবাসা আছে, মিস করা করি আছে, প্রতীক্ষা আছে।এখন কোথায় তুমি? কী করছো?

সূর্য উঠে গেছে ইতোমধ্যেই।তুমিও উঠেছো নিশ্চয়ই।চুল আঁচড়ানোর সময় আমাকে মনে পড়েছিল তোমার, তাই না?যদি মনে পড়ে থাকে তাহলে বিচ্ছেদ হয়নি আমাদের।আমরা স্রেফ মিস করছি আর অপেক্ষা করছি।

Advertisement

সময়কে মনে করিয়ে দেয় এমন সব কিছুই আমি ঘৃণা করি।আর প্রথমটাই হচ্ছে অপেক্ষা করা।কেউ কেউ জীবনভর অপেক্ষা করে নয়তো মানুষকে অপেক্ষায় রাখে।দুটোই খারাপ; দুটোই আমাদের জীবনের করুণ দিক।

মানুষ প্রথমে একটি শিশুর জন্মের অপেক্ষা করে,তারপর তার হাঁটার জন্য, তার কথা বলার জন্য, তার বেড়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করে;সময় চলতে থাকে; এবার তার অর্থ উপার্জনের জন্য অপেক্ষা করে;আইন-কানুন মানতে শেখার অপেক্ষা করে;অপেক্ষা করে মানুষকে ভালোবাসার, ধোঁকা খাওয়ার ও ধোঁকা দেওয়ার জন্য।

এবং তারপর সেই মানবশিশুর মৃত্যুর প্রতীক্ষা করা হয়।আর তার? তার কী হয়?মানুষের কাছ থেকে বন্ধুত্বের প্রত্যাশা করে সে;প্রেয়সীর থেকে বিশ্বাস;সন্তানদের থেকে শ্রদ্ধা আর একটু শান্তি প্রত্যাশা করে;প্রত্যাশা করে সুখ জীবন থেকে।

সময় চলতে থাকে; একদিন সে-ও মৃত্যুর অপেক্ষা করে।যে সবের খোঁজ করেছিল সে তার অনেক কিছুই পায় না;যে সবের অপেক্ষা করেছিল তার অনেক কিছুই আসে না;আর এমন অপ্রাপ্তি নিয়েই মানুষটা দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।

Advertisement

এই হচ্ছে আমাদের জীবন-যজ্ঞ!বাঁচতে বাঁচতে অপেক্ষা করা; অপেক্ষা করতে করতে বাঁচা;এবং বেঁচে, অপেক্ষা করে মরে যাওয়া!

আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।কয়লার টুকরোর মধ্যে এ যেন উজ্জ্বল এক কাঁচের টুকরো।এ আমাদের ভালবাসার নিঃশ্বাস, আমাদের পুনর্মিলনের মানে।এ আমাদের অপেক্ষার একটা চমৎকার দিক।

আমাদের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের মানবতা আকর্ষণীয়,আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়েই সুন্দর আমাদের জীবন।আকাঙ্ক্ষার একটা তিক্ত স্বাদ রয়েছেবিশেষ করে যখন তুমি কিছু আকাঙ্ক্ষা করবে।এর এমন একটা ঘ্রাণ আছে, সব ফুলের জন্য আমি বদলে যাইনি।এর রোশনাই আছে, রঙ আছে—তোমাকে মিস করাটা বলে বোঝানো দায়!

তোমার দেওয়া সমস্ত ব্যথা যদি আমি সইকারণ একটাই আমি তোমাকে মিস করি।অপেক্ষার ভয়ংকর বিষ যদি আমাকে না মারেকারণ একটাই আমি তোমাকে মিস করি।যদি আমি বেঁচে থাকি; যদি আমার ভেতরে আশা থাকে,কারণ একটাই আমি তোমাকে আবার মিস করছি।

যদি তোমাকে এতটা মিস না করতামতবে এতটা ভালোবাসতেও পারতাম না!

****

শুরু হওয়ার আগেই প্রেম সুন্দর

শুরু হওয়ার আগেই প্রেম সুন্দরদুই হৃদয়েই উত্তেজনাচোখগুলোতে ভয় থাকলেই সুন্দর লাগে...একে অন্যের না হওয়ার যুদ্ধলোক না দেখানোর সংগ্রামযখন আমার চোখ ছোঁয় তোমার চোখের নীল...শুরু হওয়ার আগেই প্রেম সুন্দর...

****

দ্বিতীয় চিঠি

জানো?তোমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর থেকে আমি দাঁড়ি রেখেছিসময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছিশার্টে আর মাড় দিই না এখনপ্যান্টও ক্যালেন্ডার করি নানা জুতায় রং দিইএতটা বদলে গেছি যে দেখলে চিনতেই পারবে নাসকালে সূর্য ওঠার সময় ঘুম থেকে উঠিআমার প্রথম কাজ একটা সিগারেট ধরানোএবং কিছুক্ষণ সমুদ্রের কোলাহল শুনিতারপর হঠাৎ করেই তোমার কথা মনে পড়েতোমার চোখ, ঠোঁট, মনে পড়ে তোমার হাতএখন তুমি কোথায় কে জানেহয়তো তোমার বিছানায় শুয়ে আছোএখন স্বপ্নে আমাকে দেখেভয় পাও।এখন শরৎকাল, মনে আছে? শহরে কবিতার মেলা।সব সময় বিষণ্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছিগাছের পাতাগুলো ঝরতে শুরু করেছেউত্তরের পাগলা হাওয়া বইছেপাখিরা নিয়তই দেশান্তরী হচ্ছেমাঝে মধ্যে কেউ কেউ ক্লান্ত কিংবা আহত হয়আমি তাদের ধরে পাখায় হাত বুলাই, ঠোঁটে আদর করিআর বলি যেতোমার সাক্ষাতের জন্য অবশ্যই পরিযায়ী পাখি হতে হবেএভাবেই দিন, সপ্তাহ চলে যায়জট বাঁধে আমার চুল ও দাঁড়িতেতবুও রোজনিজের সঙ্গে একটু বেশিই অভ্যস্ত হইআর জানো?যদিও তোমাকে ভোলা সম্ভব নয়তোমাকে ভোলার চেষ্টা করছি।

অনুবাদক: প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ।

এসইউ/জেআইএম