ফিচার

সাম্যের উৎসবে না হোক বৈষম্য

দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে রহমতের মাসের ইতি টেনে আসছে উৎসবের দিন। গ্রীষ্মের তপ্ত হাওয়া ছাপিয়ে ঈদ যেন আনন্দের সুবাতাস বয়ে এনেছে সবার মনে। সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সবার জীবনে সকালের সূর্যের মতো দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে নতুন আশার আলোর। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভাবনায় এবারের ঈদ নিয়ে লিখেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি—

Advertisement

আনন্দ ভাগাভাগির মাঝেই ঈদের মাহাত্ম্যঈদ শব্দটা শুনলেই আমার সামনে ভেসে ওঠে আমার গ্রাম। গ্রামে যাওয়া ছাড়া ঈদ একেবারেই যেন অসম্পূর্ণ, মলিন। সেই ছোট্টবেলার ঈদটা যদিও এখন সোনার হরিণ কিন্তু তাই বলে যে ঈদ নিয়ে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে না নিজের মধ্যে, তা বললে মিথ্যা বলা হয় বৈকি! ঈদের আগের রাতে হাত ভরে মেহেদি দেওয়া, ঈদের দিন সকালে উঠে নতুন জামা পরা, পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাঝেই তো ঈদের প্রকৃত মাহাত্ম্য! ইদানিং দেখা যায়, আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘ঈদ তো ঘুমিয়েই কাটাবো’ এমন জিনিসকে খুব মহিমান্বিত করা হয়! কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। ঈদের সৌন্দর্যটা উপভোগ করা উচিত সবারই। আমাদের বছরে দুটি উৎসবই যেন রঙিন হয়ে ফিরে আসে সেই প্রত্যাশাই রাখি। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, শহরের আনাচে-কানাচে, গ্রামের সেই ছোট্ট ঘরটিতে।তাসফিয়া আহসান খান, ৩য় বর্ষ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

ঈদ আনন্দ হোক সীমাহীনঈদ ব্যাপারটা বরাবরই আনন্দের। শৈশবে ঈদ আনন্দ যেমন ছিল, বড়বেলায়ও ঠিক তেমনটিই আছে। তবে বদলেছে শুধু আনন্দের ধরন। তারুণ্যের সবচেয়ে বড় আনন্দ বোধহয় ছুটিতে বাড়ি ফেরা। লেখাপড়ার জন্য বাসা ছেড়ে দূরে থাকতে থাকতে হৃদয়ে জমে বিষণ্নতার মেঘ। প্রিয়মুখগুলো দেখার অনুভূতি যেন মরুতে বহুকাল পর বৃষ্টির আগমন। চাঁদরাতে বাড়ির ছোট-বড় সবাই হই-হুল্লোড়, আড্ডা, রাত জেগে মেহেদি দেওয়া, ঈদের সকালে নতুন জামা পরা, সবাই একসঙ্গে ঈদগাহে যাওয়া, বড়দের থেকে সালামি পাওয়া, ছোটদের সালামি দেওয়া এসব আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব বেড়ে যায়, পরিবারকে সময় দেওয়া, বন্ধুদের সময় দেওয়া, বড়দের কাজে সাহায্য করা, ঈদুল-আজহা হলে কোরবানির পশুর দেখাশোনা, মাংস বিতরণ সবমিলিয়ে দারুণ এক ব্যস্ততায় কাটে ঈদ। কেননা ঈদ তো একা উপভোগের বিষয় নয়। ঈদ সর্বত্র সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার উৎসব। তবে শৈশবে কাটানো ঈদের রঙিন মুহূর্তগুলো আমাকে ভীষণভাবে টানে।রাইসুল রাকীব, তৃতীয় বর্ষ, দর্শন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বয়সের সঙ্গে পাল্টায় ঈদ আনন্দএক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসবমুখর দিন ঈদ। এই ঈদের দিনটিকে উপভোগ্য করার জন্য একেক জনের একেক রকম ইচ্ছা থাকে। যখন ছোট ছিলাম সবচেয়ে বেশি আনন্দ হতো ঈদের আগের দিন। ঈদের আগের দিনে বিকেল থেকে মেহেদি দেওয়া, বিভিন্ন রকমের খাবার বানানো, কার ঈদের জামা সুন্দর হয়েছে—এসব তো লেগেই থাকতো। ঈদের দিন কে কত সালামি পেয়েছে, তা নিয়ে হতো প্রতিযোগিতা। এখন আমরা বড় হয়েছি। ঈদের আনন্দ ভিন্ন রূপ নিয়েছে কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ একই থাকলেও বেড়েছে দায়িত্ব। সারাবছর কোলাহলপূর্ণ শহরে থেকে, এখনো যখন ঈদের জন্য আমার বেতনা নদীর ধারে বাড়িতে যাওয়া হয়; তখন মনের ভেতর এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভব হয়। নিজেও যেন নদীর মতো পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে কল্লোলিনী হয়ে উঠি। আর ঈদের দিন যদি বাড়িতে ঝামেলা না হয়েছে, তাহলে তো সেটা ঈদ বলেই মনে হবে না। হুট করেই মা বলে উঠবেন, ‘আম্মু! তুই এটা করলি কেন?’ তাহলেই তো ঈদের পূর্ণতা! ঈদের এই পূর্ণাঙ্গ আনন্দ মানবজীবনে বারবার আসুক। সবার সঙ্গে বর্ণিল ঈদ কাটাতে চাই।জুবাইদা আশিকা, ২য় বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ।

Advertisement

মায়ের রান্নায়ই যেন ঈদের পূর্ণতাঈদ বলতেই তো একটা দীর্ঘ পরিশ্রান্ত সময় শেষে বিশ্রামকেই বুঝি। তবে একটা সময় ছিল যখন ঈদ শব্দটাই জীবনের এক বর্ণিল সময়। সেসময় পার করে এসে আজ এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। যদিও ঈদের সেই বর্ণিলতা সেভাবে স্পর্শ করে না। তবুও উপভোগ করি, আক্ষেপ করি! দায়িত্ববোধ থেকে এমন এক ঈদের তালাশ করি। যে ঈদে ধনী-গরিব এক হতে পারে। সমাজের প্রতিষ্ঠিত বৈষম্যকে পদদলিত করে জন্ম দেবে নব পুষ্পের। যার সৌরভে বিমোহিত হবে সবাই। খুঁজে পাবে সাম্যের জয়গান। চাঁদরাতে হয়তোবা আগের মতো চাঁদ খুঁজি না কিন্তু অপেক্ষা করি সুন্দর সকালের। ফজরের শেষে প্রকৃতির একান্ত নির্মলতা ভেদ করে যাওয়া হয় কবরস্থানে। যেখানে শুয়ে আছেন আমার দাদা-দাদি এবং অনেকেই। দোয়া শেষে বাসায় ফিরে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি ঈদের নামাজের। ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফেতরাটা আদায় করে ফেলি। কেননা এভাবেই ধনীর সম্পদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গরিবের হক। নামাজ শেষে ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে একটু আনন্দময় মুহূর্ত কাটানোর প্রচেষ্টা। এক মাসের রোজা শেষে গপগপিয়ে মায়ের হাতের রান্না খাওয়াই যেন উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে। পরিবার- প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে এক উঠানে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারাটাই বেশি উপভোগ করি।হাসান মাহমুদ, ১ম বর্ষ, আইন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/জিকেএস