হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে পালাচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পঞ্চম দিনের মতো সেখানে ভয়াবহ লড়াই চলছে।
Advertisement
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে লোকজন গাড়িতে করে এবং পায়ে হেঁটে খার্তুম ত্যাগ করে। সে সময় বন্দুকযুদ্ধ এবং বিস্ফোরণে শহর কেঁপে ওঠছিল।
এদিকে জাপান এবং তানজানিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, তারা তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবারের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর পুণরায় লড়াই শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। সংঘর্ষের কেন্দ্রে থাকা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল ২৪ ঘন্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গেছে। অপরদিকে দুই বাহিনী এই সংঘাতের জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে।
Advertisement
এদিকে টানা কয়েকদিনের সংঘাতের কারণে দেশটিতে খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বুধবার সকালে খার্তুমে বসবাসকারী এক নারী জানান, তার বাড়িতে খাওয়ার মতো আর এক ফোঁটা পানিও অবশিষ্ট নেই।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষই তাদের বাড়ি-ঘরে বুলেট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারা গেছেন। এদিকে জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান সতর্ক করেছেন যে, সংস্থাটির মানবিক কর্মীরা হামলা ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
সেনাবাহিনী ও আরএসএফ বাহিনীর মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষের কারণে রাজধানী খার্তুমসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে আবারও বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বুধবার আরএসএফের পক্ষ থেকে নতুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। সেনাবাহিনী জানায় যে, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে এখনও রাজধানী জুড়ে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অনেক বেসামরিক নাগরিক বলছেন, শহরে কী ঘটছে তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না।
Advertisement
২০২১ সালের অক্টোবরে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সুদানের ক্ষমতা মূলত সামরিক জেনারেলদের হাতে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তার প্রতি অনুগত সামরিক ইউনিটগুলোর সঙ্গে লড়াই চলছে আরএসএফের, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সুদানের উপ-নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো। তিনি হেমেডটি নামেও পরিচিত।
দাগালো বলেছেন, তার সৈন্যরা সব সেনা ঘাঁটি দখল না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। অপরদিকে সুদানের সশস্ত্র বাহিনীগুলোও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ-কে ধ্বংস না করা পর্যন্ত কোনো ধরনের আপোস-আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
অল্প কিছুদিন আগেও এই দুই সামরিক নেতার মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারা দুজন একসাথে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এদিকে সাধারণ মানুষ বলছে, তাদের মনে হচ্ছে এই লড়াই তাদের বিরুদ্ধেই। কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও ১২টি দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৭০ জন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
টিটিএন/এএসএম