দেশজুড়ে

‘বয়স ১০০ বছর হতি গেলো, এরামধারা গরম কুনুদিন দেকিনি’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামের মৃত খোদাবক্সের স্ত্রী শাহার বানু। বয়স ১০০ ছুঁইছুঁই। সামনে ঈদ। তাই বাড়ির পাশের এক মধ্যবয়সীর সহায়তায় এসেছিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে সাহায্য নিতে। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢোকার আগে ভরদুপুরে গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন।

Advertisement

এসময় শাহারবানু বলেন, ‘১০০ বছর বয়স হতি গেলো (হতে গেলো)। এরামধারা গরম কুনু দিন দেকিনি (এরকম গরম কোনোদিন দেখিনি)। এই গরমে সুদু (শুধু) খিদে লাগচে। আর খুব গরমও লাগচে (খুব গরম পড়ছে)। সাহায্য নিতি যাচ্চি পুলিশ স্যারের কাচে (পুলিশ স্যারের কাছে সাহায্য নিতে যাচ্ছি)।’ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতি পুড়ছে তাপপ্রবাহে। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ। বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলেও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৪ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা, সতর্ক করতে মাইকিং

Advertisement

জামিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন। যদিও কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ২৩ এপ্রিলের আগে তেমন সম্ভাবনা নেই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের ভ্যানচালক লিপু মিয়া বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত চার্জার ভ্যান চালাতে কষ্ট নেই। কষ্ট এ রোদে যাত্রী নিয়ে যেতে। বেশি তাপের (গরম) কারণে মানুষ বের হয় না। এজন্য আয়-রোজগার কমে গেছে।’

আলী হোসেন মার্কেটের ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি শিলন আলী বলেন, ‘গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা। মার্কেটে প্রচুর গরম থাকায় দিনের বেলা অনেকটা ফাঁকা থাকছে। তবে ঈদের কারণে জুতা-কাপড়ের দোকানে ভিড় আছে।’

১৮দিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। স্মরণকালের এমন গরমে মানুষসহ হাঁসফাঁস করছে পশুপাখি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। একদিকে খরতাপে হাঁসফাঁস, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।

Advertisement

আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা ১৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, এবার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

এসআর/এএসএম