ফিফার ৫১ পাতার রিপোর্টে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দীর্ঘদিনের অনিয়মের খতিয়ান। যাতে ফেঁসে গেছেন সদ্য সাবেক হওয়া সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগ। ফিফা কর্তৃক তিনি নিষিদ্ধ হয়েছেন দুই বছরের জন্য। বাফুফের নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা সোহাগকে চাকরিচ্যুত ও আজীব নিষিদ্ধ করে নিজেদের গা থেকে অপরাধের দাগ মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন।
Advertisement
ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ অন্যদের ভাবখানা এমন যে, তারা ধোয়া তুলসি পাতা। সব দোষ সোহাগের। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন ফিফার সিদ্ধান্ত জানার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সোহাগকে আগলে রাখার আভাসই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন- সোহাগের বিষয় নিয়ে তিনি ফিফার সঙ্গে কথা বলবেন। দুই দিনের মধ্যেই তিনি ইউটার্ণ নিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে দীর্ঘদিন বাফুফেতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার জন্য কি আবু নাইম সোহাগ একাই দায়ী? এখানে আর কারো সম্পৃক্ততা নেই?
ফিফা সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ খুঁজে পেয়েছে, সেটা আর্থিক অনিয়মের। বাফুফেতে আর্থিক যে কাজটি করে থাকে ফিন্যান্স কমিটি। যে কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। যিনি দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী। চালান বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । অথচ তিনি ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বাফুফেতে এই জালিয়াতি। এটা তার অজান্তে হয়েছে, তা মানছেন না কেউ। এমন কি বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনও কিছু জানতেন না- সেটাই মানতে নারাজ সবাই। তাহলে শেষ পর্যন্ত সোহাগ কেন বলির পাঠা হলেন? বাকিরা কি বেঁচে যাবেন?
Advertisement
বাফুফের এই দুঃসময়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাধারণ সভার কাউন্সিলরদের। প্রতি সাধারণ সভায় তারা উপস্থিত থেকে বাফুফের সব আয়-ব্যয়ের হিসেব দুই হাত উঁচু করে অনুমোদন করেছেন। বিশাল অনিয়মে তাদের কি কোনো দায় নেই? অনিয়মের যে ফিরিস্তি ফিফার দরবারে পৌঁছেছে সেই অনিয়মের শুরু তো বাফুফের সাধারণ সভা থেকেই।
বাফুফের সাধারণ সভা মানেই যেন রাজকীয় ভাব-সাব। পাঁচতারকা হোটেল বা রিসোর্টে বেশ কয়েকদিন থাকা-খাওয়া, দামী গিফট, নগদ নারায়ন পেয়েই তারা দুর্নীতি জায়েজ করেছেন সাধারণ সভার পর সাধারণ সভায়।
বিশেষ করে নির্বাচনী সাধারণ সভায় তো চকচকে হয়ে উঠতো কাউন্সিলরদের মুখ। বাইরে নানা সমালোচনায় তারা সরব থাকলেও সাধারণ সভায় তাদের মুখ থেকেছে কুলুপ আঁটা। বিনাবাক্যে তারা পাশ করে দিয়েছে কোটি কোটি টাকা অনিয়মের রিপোর্ট। আর ঘরে ফিরে গেছেন বিশাল সুবিধা নিয়ে। বাফুফের আজকের পরিণতির জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী সেই কাউন্সিলরা এখন সবাই নীরব!
আরআই/আইএইচএস
Advertisement