সাহিত্য

৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের সেই কবিতা (অডিও)

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়েলক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছেভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানেঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?জানি, সেদিনের সব স্মৃতি, মুছে দিতে হয়েছে উদ্যতকালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজকবির বিরুদ্ধে কবি,মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমিএকদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবেলিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷না পার্ক না ফুলের বাগান, এসবের কিছুই ছিল না,শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিতধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিলএই ধু ধু মাঠের সবুজে৷কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধেএই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরেআর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুলপ্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটেঅতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ারসকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷এইচআর/এমএস

Advertisement