কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে পরস্পরের জিজ্ঞাসাবাদের আলোচনায় শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২৭তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা নাবা থেকে সুরা নাস পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে। পড়া হবে পুরো ৩০তম পারা। সে সঙ্গে শেষ হবে এ বছরের খতম তারাবিহ। আজকের তারাবিহের তেলাওয়াতে হাফেজে কোরআনগণ সুরা কদর পাঠ করবেন। লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করবেন। কী সেই শ্রেষ্ঠত্ব?লাইলাতুল কদর তালাশের বেজোড় রাত আজ। এ রাতেই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আজই শেষ হবে রমজানের বিশেষ ইবাদত খতম তারাবিহ। লাইলাতুল কদরের রাতে ক্ষমা প্রার্থনায় বিশ্বনবির শেখানো দোয়াও পড়বে মুমিন। হাদিসে এসেছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيউচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)পুরো রমজান মাস জুড়ে যারা সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছে এবং মহান প্রভু রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভে ধন্য হতে পেরেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সফলতা। আর যারা রমজানকে কাজে লাগাতে পারেনি তারাই ব্যর্থ।লাইলাতুল কদরاِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِনিশ্চয়ই আমি এ (কোরআন)কে অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাতে (শবেকদরে)।এই রাতে তা (কোরআন) অবতীর্ণ আরম্ভ করেছেন। অথবা তা ‘লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে অবস্থিত ‘বাইতুল ইযযাহ’তে এক দফায় অবতীর্ণ করেছেন। আর সেখান থেকে প্রয়োজন মোতাবেক নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তা ২৩ বছরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। জ্ঞাতব্য যে, ‘লাইলাতুল কদর’ রমজান মাসেই হয়ে থাকে; অন্য কোন মাসে নয়।
Advertisement
এ আয়াতে বলা হয়েছে, আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘রমজান মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে।’ (সুরা আল-বাকারাহ: আয়াত ১৮৫)এ থেকে জানা যায়, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেশতা অহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রমজান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে। সুরা দোখানে এটাকে মোবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি।’ (সুরা আদ-দোখান: আয়াত ৩)এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কোরআন পাক লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুয থেকে লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতঃপর জিবরিল আলাইহিস সালাম একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কোরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কোরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাজিল করা হয়। (আদওয়াউল বায়ান)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারি ২০২১)অন্য বর্ণনায় আছে ‘তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ কর।’ (বুখারি ২০২০, মুসলিম ১১৬৯, তিরমিজি ৭৯২)সুতরাং যদি লাইলাতুল-কদরকে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রমজানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল-কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদিসসমূহের মধ্যে কোনো বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। (ইবন হাজার: ফাতহুল বারী, ৪/২৬২–২৬৬)وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ؕ আর আপনাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী?এখানে প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অধিকরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেন সৃষ্টি এর সুগভীর রহস্য পূর্ণরূপে জানতে সক্ষম নয়। একমাত্র আল্লাহই এ ব্যাপারে পূর্ণরূপ অবগত।
لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍলাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। উম্মতে মুহাম্মাদির উপর কত বড় আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাকে তার সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে অধিক সওয়াব অর্জন করার সহজ পন্থা দান করেছেন।মুফাস্সিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। [মুয়াসসার] এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রমজান আগমনকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান আসন্ন। মোবারক মাস। আল্লাহ এর রোজা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সে তো যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।’ (নাসাঈ ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ ২/২৩০, ৪২৫)অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ১০৯১, মুসলিম ৭৬০, আবু দাউদ ১৩৭২, নাসাঈ ৮/১১২, তিরমিজি ৮০৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৫২৯)
تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ۚ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍঐ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরিল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।এ আয়াতে ‘রূহ’ বলে জিবরিল আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জিবরিল আলাইহিস সালামসহ ফেরেশতাগণ এই রাতে ঐ সকল কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, যা আল্লাহ এক বছরের জন্য ফায়সালা করে থাকেন।الروح বলে কি বুঝানো হয়েছে মতপার্থক্য থাকলেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরিল আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। জিবরিল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তার উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরিল আলাইহিস সালামের সঙ্গে ফেরেশতারাও সে রাতে অবতরণ করে। (ফাতহুল কাদির)হাদিসে আছে, ‘লাইলাতুল কদরের রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ ২/৫১৯, মুসনাদে তায়ালাসী ২৫৪৫)سَلٰمٌ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِশান্তিময় সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।এতে কোনো প্রকার অমঙ্গল নেই। অথবা এই অর্থে ‘শান্তিময়’ যে, মুমিন এই রাতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে। অথবা ‘সালাম’-এর অর্থ প্রচলিত ‘সালাম’ই। যেহেতু এ রাতে ফেরেশতাগণ ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে সালাম পেশ করেন। কিংবা ফেরেশতাগণ আপোসে একে অপরকে সালাম দিয়ে থাকেন।শবেকদর রাতের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাস দোয়া বলে দিয়েছেনঃ-‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নি।’‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিজি)সুরা নাবা থেকে শুরু করে সুরা নাস পর্যন্ত সর্বমোট ৩৭টি সুরা পড়া হবে আজ। সে সঙ্গে খতম তারাবিহ শেষ হবে। আজকের তারাবিহতে পঠিত সুরাগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচ্য সূচি তুলে ধরা হলো-সুরা নাবা : আয়াত ৪৯মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটি কিয়ামতের ভয়াবহতা কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের অবস্থার বর্ণনার পাশাপাশি জান্নাতএবং তাঁর অধিবাসীদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষে হাশরের ময়দানে অবিশ্বাসীদের আফসোস ও অনুশোচনার বর্ণনা ওঠে এসেছে।এ সুরায় কেয়ামতের ভয়াবহ বর্ণনা অস্রুবিসর্জন দেবে মুমিন। আবার পরক্ষণেই জান্নাতের নেয়ামত লাভের কথায় মুমিনের হৃদয়ে আনন্দ ও খুশি বিরাজ করবে। ৩০তম পারায় কেয়ামতের আলোচনাই হয়েছে বেশি। কেয়ামতের ভয়বাহতা তুলে ধরেআল্লাহ তাআলা বলেন-নিশ্চয় বিচার দিবস নির্ধারিত রয়েছে। যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে; তাতে বহু দরজা সৃষ্টি হবে।এবং পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে। নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে, সীমালংঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে। তারা তথায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে। তথায় তারা কোন শীতল এবং পানীয় আস্বাদন করবে না; কিন্তু ফুটন্ত পানি ও পূঁজ পাবে। পরিপূর্ণ প্রতিফল হিসেবে। নিশ্চয় তারা হিসাব-নিকাশ আশা করত না। 'সুরা নাবা : আয়াত ১৭-২৭)আবার মুমিন জান্নাতেদের নেয়ামত ও সুখ-শান্তির বর্ণনায় মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে আনন্দের বন্যা বইবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-পরহেযগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য। উদ্যান, আঙ্গুর, সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী। এবং পূর্ণ পানপাত্র। তারা তথায় অসার ও মিথ্যা বাক্য শুনবে না। এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে যথোচিত দান।' (সুরা নাবা : আয়াত ৩১-৩৬)
Advertisement
সুরা নাযিআত : আয়াত ৪৬সুরা নাযিআত মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা কিয়ামত অবশ্যই আসবে। এবং তা অতি সন্নিকটে। তাই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে কিভাবে হককে বাতিলের বিজয়ী করবেন তা বর্ণনা করেছেন। উপমা স্বরূপ হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কিভাবে ফেরাউনের ওপর বিজয় লাভ করেছিলেন এবং ফেরাউন ধ্বংস হয়েছিল তা ওঠে এসেছে এ সুরায়।
সুরা আবাসা : আয়াত ৪২মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় দানের পদ্ধতি, উপদেশ গ্রহণ না করার প্রতি তিরস্কার, উপদেশ গ্রহণ থেকে বিমুখ ব্যক্তিদের পরলৌকিক শাস্তি এবং উপদেশ গ্রহণকারীদের পরকালীন জীবনের পুরস্কারের বর্ণনা করা হয়েছে।সুরা তাকভীর : আয়াত ২৯মক্কায় অবতীর্ণ সুরা তাকভীরে কিয়ামতের দৃশ্যকে চিত্রায়ন করা হয়েছে। তাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে বক্তি কিয়ামতের দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে চায়, সে যেন সুরা তাকভীর এবং সুরা ইনশিকাক পাঠ করে।
সুরা ইনফিতার : আয়াত ১৯এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরার মূল বিষয়বস্তু হলো পরকাল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিনকে দেখতে চায়, সে যেন সুরা তাকভীর, ইনফিতার ও ইনশিকাক পাঠ করে।সুরা মুতাফফিফিন : আয়াত ৩৬মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা মুতাফফিফিনে আল্লাহ তাআলা পরকালের বিষয় তুলে ধরেছেন। এ সুরায় ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রয়ের সময় বেশি গ্রহণ করে বিক্রয়ের সময় কম দেয়ার অনৈতিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরার শেষে সৎ ও ভালো লোকদের সুখ-শান্তি আলোচনা করা হয়েছে। কাফেরদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের জন্য তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে কাফেরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
সুরা ইনশিক্বাক্ব : আয়াত ২৫মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায়ও কিয়ামতের চিত্রায়ন করা হয়েছে।
Advertisement
সুরা বুরুজ : আয়াত ২২মক্কায় অবতীর্ণ সুরা বুরুজে কাফেররা ঈমানদারের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল তার নির্মম পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে এবং সে সঙ্গে মুসলমানদেরকে উত্তম প্রতিফলের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
সুরা ত্বারেক : আয়াত ১৭সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় তাওহিদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ কাফেরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জ্ঞাত, যাতে তারা সফলতা লাভ করতে পারবে না, তার বিবরণ ওঠে এসেছে।
সুরা আ’লা : আয়াত ১৯মক্কা অবতীর্ণ এ সুরায় তাওহিদের আলাচনা করার পাশাপাশি বিশ্বনবিকে উপদেশ প্রদান এবং পাপিষ্ঠ ও কাফেরদের অশুভ পরিণতি এবং ঈমানদারের পরকালীন সাফল্যের কথা ওঠে এসেছে।
সুরা গাশিয়া : আয়াত ২৬২৬ আয়াত বিশিষ্ট মক্কী সুরায় তাওহিদ ও পরকালের আলোচনা করা হয়েছে।
সুরা ফজর : আয়াত ৩০মাক্কী সুরা আল ফজরে পরকালের শাস্তি এবং পুরস্কারের আলোচনা করা হয়েছে। কারণ মক্কার অবিশ্বাসীরা পরকালকে বিশ্বাসই করতো না।
সুরা বালাদ : আয়াত ২০এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ প্রাথমিক প্রত্যাদেশ সমূহের অন্যতম। এ সুরায় মক্কা বিজয়ের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী ও সৎকর্মের আলোচনা করা হয়েছে।
সুরা শামস : আয়াত ১৫মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় নেকি ও বদ, পাপ ও পূণ্যের পার্থক্য বুঝানোর জন্য নাজিল করা হয়েছে। যারা নেকি ও বদ, পাপ এবং পূণ্যকে অবিশ্বাস করে তাদের শাস্তির বিষয়টিও ওঠে এসেছে এ সুরায়।
সুরা লাইল : আয়াত ২১মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমাণ আনা; তাঁর সন্তুষ্টিতে দান-খয়রাত করা; উদারতা ও মহানুভবতার গুণ অর্জন করার ইঙ্গিত প্রদান। পাশাপাশি কুফর ও শিরকে লিপ্ত হওয়া, অহংকার ও কার্পণ্য করা, মানুষের হক বিনষ্ট করায় রয়েছে পরকালীন জীবনের অবাধারিত শাস্তি।
সুরা দোহা : আয়াত ১১মক্কায় অবতীর্ণ সুরা দোহায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিবকে সান্ত্বনার জন্য নাজিল করেছেন।
সুরা আলাম নাশরাহ : আয়াত ৮নবুয়তের পূর্বে বিশ্বনবি মক্কায় ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন; ইসলামের দাওয়াত দেয়ায় যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সে জন্য মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় তাঁকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে।
সুরা ত্বীন : আয়াত ৮এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় মানুষের উৎপত্তি ও পরিণতির বিষয় আলোচিত হয়েছে।
সুরা আ’লাক্ব : আয়াত ১৯মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে বিশ্বনবির প্রতি নাজিলকৃত প্রথম প্রত্যাদেশ। এ সুরার প্রথম ৫ আয়াত নাজিলের মাধ্যমে নবুয়তের সূচনা হয়েছিল। তাছাড়া এ সুরায় বিশ্বনবির বাইতুল্লায় নামাজ আদায়কালীন সময়ে আবু জেহেলের ধমকের বিষয়ও ওঠে এসেছে।
সুরা ক্বদর : আয়াত ৫এ সুরার অবতীর্ণের স্থান নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ সুরায় কোরআন মাজিদের মর্যাদা, মূল্য ও গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। লাইলাতুল কদরের মর্যাদার বিষয়টিও এ সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে।
সুরা বায়্যিনাহ : আয়াত ৮এ সুরায় রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা আলোচিত হয়েছে।
সুরা যিলযাল : আয়াত ৮মক্কায় অবতীর্ণ সুরায় কিয়ামত ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে।
সুরা আ’দিয়াত : আয়াত ১১মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরাটিতে পরকালের প্রতি অবিশ্বাসের ভয়াবহ পরিণাম দুঃসংবাদের পাশাপাশি পরকালের বিচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের দিক-নির্দেশনা আলোচিত হয়েছে।
সুরা ক্বারিয়াহ : আয়াত ১১মক্কী সুরা ক্বারিয়া। এ সুরায় কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া; পরকালের পুনরায় জীবিত হওয়া, দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের হিসাব প্রদান এবং প্রতিদান গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সুরা তাকাছুর : আয়াত ৮এ সুরাটিও মক্কায় অবতীর্ণ। এতে দুনিয়ার পুজা এবং বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে মানুষকে আখিরাতপন্থী এবং পরকালমুখী করাই এ সুরার উদ্দেশ্য।
সুরা আসর : আয়াত ৩অতিশয় ক্ষুদ্র সুরা অথচ ব্যাপক অর্থবোধক। এ সুরায় মানুষের জীবনের নীতি-আদর্শ ও কর্ম কেমন হওয়া উচিত তা তুলে ধরেছেন।
সুরা হুমাযাহ : আয়াত ৯এ সুরায় ইসলাম পূর্ব জাহেলী সমাজের অর্থ পুজারি ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যে কতগুলো মারাত্মক ধরনের নৈতিক ত্রুটি ও দোষ বিদ্যমান ছিল তা তুলে ধরা হয়েছে।
সুরা ফিল : আয়াত ৫মক্কায় অবর্তীণ এ ঐতিহাসকি সুরা। যেখানে বাইতুল্লাহকে ধ্বংসে আবরাহার বিশাল হস্তি বাহিনীর আলোচনা হয়েছে। আবার হস্তিবাহিনীকে ধ্বংসে আল্লাহর সিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে এ সুরায়।
সুরা কুরাইশ : আয়াত ৪এ সুরায় শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলা ইবাদতের দাওয়াত দেয়ার জন্য নাজিল হয়েছে।
সুরা মাউন : আয়াত ৭পরকালে অবিশ্বাসীদের চরিত্র কতটা নিচু সে চরিত্র চিত্রায়ন করা হয়েছে এ সুরায়।
সুরা কাউসার : আয়াত ৩বিশ্বনরি প্রতি অজস্র নিয়ামতের বর্ণনা লুকায়িত আছে এ সুরায়।
সুরা কাফিরুন : আয়াত ৬এ সুরায় তাওহিদের শিক্ষা এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণের ঘোষণা হয়েছে। প্রত্যেকের ধর্মমত আলোচিত হয়েছে এ সুরায়।
সুরা নছর : আয়াত ৩আরবের বুকে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুসংবাদ এবং পৌত্তলিকতাকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠানোর শুভ সংকেত হলো এ সুরা।
সুরা লাহাব : আয়াত ৫ইসলামের দুশমনদের কারো নাম উচ্চারণ করে কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়নি। ব্যতিক্রম শুধু আবু লাহাব ও তার স্ত্রী। এ সুরায় তার এবং তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে নাজিল করা হয়েছে। তারা বিশ্বনবির দাওয়াতি মিশনের বিরোধিতায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছিল।
সুরা ইখলাস : আয়াত ৪এ সুরাটিতে আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর পরিচয়ের বর্ণনা করা হয়েছে।
সুরা ফালাক্ব ও নাস : আয়াত যথাক্রমে ৫ ও ৬এ সুরা দুটিতে আরবের জাহেলি সমাজের নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বের প্রেক্ষাপট এবং তারা আল্লাহকে একেবারে ভুলে গিয়েছিল। আল্লাহর সম্মুখে নানা প্রতিকৃতি সমাসীন করেছিল। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতে বিশ্বনরি ইসলামের দাওয়াত শুরু করেন।সে সময় অবিশ্বাসী কাফের সকল অপচেষ্টায় ইসলামের অগ্রযাত্রা যখন ছুটে চলছিল তখন এ সুরাদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য ও তাঁর স্মরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ ছিল।সৃষ্টিকুলের যাবতীয় অনিষ্ট হতে মুক্ত হতেই বিশ্বনবি এ সুরাদ্বয় দিয়ে সাহায্য কামনা করতেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস