ধর্ম

কদরের রাতে নবিজি (সা.) যে বিশেষ ৫ আমল করতেন

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে কদর পেতে কোমড়ে কাপড় বেঁধে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হতেন। শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। বিশেষ করে ৫টি আমল করতেন। কী সেই পাঁচ আমল?

Advertisement

১. সারা রাত জেগে ইবাদত

বছরের অন্য কোনো সময়ে সারা রাত জেগে ইবাদত করার নজির রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে ছিল না। কিন্তু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কদরের রাতে সারা রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করতেন। নিজে ঘুমোতেন না এবং পরিবারের লোকজনদের জাগিয়ে দিতেন। তাদেরকেও ঘুমোতে দিতেন না। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন-

إذَا دَخَلَ الْعشْرُأحيا اللَّيْل،َ وأيقظ أهْله،ْ وجدَّ وشَدَّ المِئْزَرَ

Advertisement

‘রমজানের শেষ দশক যখন আসতো তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন। নিজ পরিবারকে জাগাতেন। (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।’ (বুখারি ২০২৪, মুসলিম ১১৭৪, তিরমিজি ৭৯৬, নাসাঈ ১৬৩৯, আবু দাউদ ১৩৭৬, ইবনু মাজাহ ১৭৬৮, আহমাদ ২৩৬১১, ১২৩৮৫৬, ২৩৮৬৯)

২. ইতেকাফ করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন-

كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالَى، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ

Advertisement

রমজানের শেষ দশকে মহান আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করা পর্যন্ত ইতেকাফ করেছেন। তাঁর (তিরোধানের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি ২০২৬, মুসলিম ১০৭২, তিরমিজি ৭৯০, আবু দাউদ ২৪৬২, মুসনাদে আহমাদ ২৩৬১১, ২৩৭১৩, ২৪০২৩, ২৪০৯২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْماً

‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমজান মাসের (শেষ) দশদিন ইতেকাফ করতেন। তারপর যে বছরে তিনি মারা যান, সে বছরে বিশ দিন ইতেকাফ করেছিলেন।’ (বুখারি ২০৪৪, ৪৯৯৮, তিরমিজি ৭৯০, আবু দাউদ ২৪৬৬, ইবনু মাজাহ ১৭৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৭৭২৬, ৮২৩০, ৮৪৪৮, ৮৯৫৯, দারেমি ১৭৭৯)

শেষ দশকের বাকি তিনদিন ইতেকাফ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। ইতেকাফ না করলেও সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ও তওবা-ইসতেগফার করার মাধ্যমে লাইলাতুল কদর পাওয়ার চেষ্টা করা।

৩. কোরআন তেলাওয়াত করা

রমজানের বিশেষ একটি আমল এটি। এ শেষ দশকেই আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কোরআন নাজিল করেছিলেন। তাই রমজান মাস এলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং জিবরিল আলাইহিস সালাম যৌথভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। একে অপরকে শোনাতেন। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

...  وَكَانَ جِبْرِيلُ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ ...

‘... জিবরিল আলাইহিস সালাম রমজান মাসের প্রত্যেক রজনীতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁর কাছে কোরআন পুনরাবৃত্তি করতেন।...।’ (বুখারি ৬, ১৯০২, ৩২২০, ৩৪৫৪, ৪৯৯৭, মুসলিম ২৩০৮, নাসাঈ ২০৯৫, মুসনাদে আহমাদ ২৬১১, ৩৪১৫, ৩৪৫৯, ৩৫২৯)

সুতরাং শেষ দশকের রাতগুলো তথা কদরের রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন অধ্যয়ন করা। কিংবা কোরআনের হালাকায় যুক্ত হওয়া। এক কথায় কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা।

৪. কেয়ামুল লাইল করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামুল লাইল করতেন। তিনি কেয়ামুল লাইলকে কদরের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

‘যে ব্যক্তি শবে কদরে (ভাগ্য-রজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে) ঈমানসহ সওয়াবের আশায় কেয়াম করে (নামাজ পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ৩৫, ৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, তিরমিজি ৬৮৩, নাসাঈ ২১৯৮, ২২০৭, ৫০২৭, আবু দাউদ ৩১৭১, ১৩৭২, মুসনাদে আহমাদ ৭১৩০, ৭২৩৮, ৭৭২৯, ৭৮২১, ৮৭৭৫, ৯১৮২, ৯৭৬৭, ৯৯৩১, ১০১৫৯, ১০৪৬২, ২৭৫৮৩, ২৭৬৭৫, দারেমি ১৭৭৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামুল লাইলকে কদরের রাতের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত করে দিয়েছেন। তাই রমজানের শেষ দশকে তথা কদরের রাতে কেয়ামুল লাইল তথা নামাজ পড়া। নামাজে দীর্ঘ সসয় দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা। লম্বা রুকু ও সেজদা দেওয়া।

৫. বেশি বেশি দোয়া করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদরের রাতে বেশি বেশি দোয়া করতেন। তাই আন্তরিকভাবে একনিষ্ঠতার সঙ্গে দোয়া করা। দোয়া হবে আবেগ-ভালোবাসা ও মনের মাধুরী মিশিয়ে। যেখানে কোনো লৌকিকতা থাকবে না। চোখের পানি ঝরিয়ে দোয়া করা। সুতরাং দোয়ায় শতভাগ ভাব-আবেগ উজাড় করে দেওয়া।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি ৩৫১৩, ইবনু মাজাহ ৩৮৫০)

এমএমএস/জিকেএস