ঈদুল ফিতর দ্বারপ্রান্তে। খুশির এ উৎসবের আগেও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। অনেক বিনিয়োগকারী দিনের পর দিন তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। সন্তানের জন্য কষ্টে পোশাক কিনতে পারলেও ঈদের সার্বিক খরচ জোগাড় করা নিয়েই শঙ্কায় তারা।
Advertisement
শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মাসের পর মাস বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন একটি কোম্পানি বে-লিজিং। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ার কিনে টাকা আটকে গেছে বিনিয়োগকারী মো. আবুর।
আরও পড়ুন>> চাপে শেয়ারবাজার, গতি ফেরানোর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা
এই বিনিয়োগকারী জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের জুনে বে-লিজিংয়ের শেয়ার কিনি। এরপর আর বিক্রি করতে পারিনি। লোকসানে ছয় মাস ধরে প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। একই অবস্থা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। সব টাকা শেয়ারবাজারে আটকে গেছে। এ অবস্থায় ঈদের আনন্দ করবো কীভাবে?
Advertisement
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছি। কিন্তু সামনে ঈদের অনেক খরচ বাকি। এসব খরচের টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবো সব সময় সেই চিন্তা করি। প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না।
আরও পড়ুন>> শেয়ারবাজারের গলার কাঁটা ফ্লোর প্রাইস
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বে-লিজিংয়ের একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। ৬ এপ্রিল মাত্র ৩০টি শেয়ার লেনদেন হয়। এরপর ৯ এপ্রিল একটি, ১১ এপ্রিল ৬১টি এবং ১৬ এপ্রিল ৩০০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অথচ প্রতিদিন লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ারের বিক্রির আদেশ আসছে।
বে-লিজিংয়ের মতো অবস্থা ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। প্রায় এক বছর ধরে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে খুবই কম সংখ্যক শেয়ার।
Advertisement
আরও পড়ুন>> দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা, ব্রোকারদের বিস্ময়
শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বে-লিজিং নয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের বর্তমানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এখন লেনদেন হচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বাকিগুলো দিনের পর দিন বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, পরপর দুই বছর লভ্যাংশ দেওয়ায় ট্রাস্ট ব্যাংক ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনি। কিন্তু এক বছর হতে চলছে এই মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে ফান্ডটির কয়েক লাখ ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে, কিন্তু দুই হাজার ইউনিটও বিক্রি হচ্ছে না।
আরও পড়ুন>> ক্রেতা সংকটে শেয়ারবাজার, নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা
তিনি বলেন, আমার পোর্টফোলিতেও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ঈদের খরচ জোগাড় করার জন্য প্রায় এক মাস ধরে লেনদেনের শুরুতেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা মিলছে না। শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তা করতে করতে দিন দিন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি।
আরেক বিনিয়োগকারী মো. মনির হোসেন বলেন, ঈদের আগে শেয়ারবাজার ভালো হবে এ প্রত্যাশায় ছিলাম। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে বাজারের পরিস্থিতি যেন ততই খারাপ হচ্ছে। বিনিয়োগ করে যেসব টাকা আটকে গেছে, সেই টাকা কবে ফ্রি করতে পারবো তা আল্লাহ ভালো জানেন।
শেয়ারবাজারের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, রোজার ভিতরে শেয়ার বিক্রির একটা চাপ থাকে। কিছু বিনিয়োগকারী আছেন শেয়ার বিক্রি করে ঈদের খরচ মেটান। এ কারণে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে বিক্রির একটা চাপ ছিল। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। তবে এখন বিক্রির চাপ কমে আসছে। আমাদের ধারণা সামনে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে।
এমএএস/এএসএ/এমএস