ভৌগলিক ও আবহাওয়াজনিত কারণে বাংলাদেশে আম মৌসুমের শুরুতে সাতক্ষীরার আম পরিপক্ক হয়। আগাম প্রাপ্তি ও স্বাদের কারণে দেশের বাজারে সাতক্ষীরার আমের প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। গেলো কয়েক বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে সাতক্ষীরার কয়েকটি বাগানের আম।
Advertisement
তবে আগাম বাজার ধরতে অপরিপক্ক আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে আগাম বাজারজাত করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এতে একদিকে যেমন জেলার আমের সুনাম নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে বিষাক্ত আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এজন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে মাঠে নেমেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরইমধ্যে সাতক্ষীরার বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো কয়েক হাজার কেজি অপরিপক্ক আম জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়েছে।
চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে আগামী ১২ মে থেকে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপঘাস, বৈশাখীসহ আরও কয়েকটি প্রজাতির আম দেশের বাজারে উঠবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ২৫ মে হিমসাগর, পহেলা জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন থেকে আম্রপালি আম গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে পারবেন বাগান মালিকরা।
গেলো কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আমচাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে এবার সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের মুখে বাগানের আম রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন আমচাষিরা। গাছ থেকে কিছু কিছু আম ঝরে পড়ছে। আম ঝরা রোধে গাছের গোড়ায় পানি ঢালাসহ গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।
Advertisement
এবার ৩০ বিঘা জমিতে ১০টি আমের বাগান করেছেন সাতক্ষীরা শহরের বাগানবাড়ি এলাকার আনিছুর রহমান। এর মধ্যে ২টি বাগান তার নিজের অন্যগুলো লিজ নেওয়া। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চলতি বছর আমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এবছর ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। তবে অনাবৃষ্টি ও গত কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহে গাছ থেকে অনেক আম ঝরে যাচ্ছে। এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছেন তিনি।
বাটকেখালী এলাকার বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবার ৫ বিঘা জমির একটি আম বাগান লিজ নিয়ে পরিচর্যা করছেন। বাগানের প্রতিটি গাছে ব্যাপক আম ধরেছে। প্রথমে বাগান থেকে কয়েক মণ আগাম জাতের গুটি আম কাঁচা বিক্রি করেছেন। কিছুদিন পর গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ জাতের আম বিক্রি করবেন। এরপর হীমসাগর ও ল্যাংড়া। সবশেষে বিক্রি করবেন আম্রপালি আম। তবে মে মাসে দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য নির্ধারিত তারিখ থেকে এক সপ্তাহ আগে আম বাজারজাত করতে চান তিনি।
সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত গরমে আম ঝরে যাওয়া রোধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, সাতক্ষীরার ৭ উপজেলায় ৪১১৫ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার টন। গত বছর সাতক্ষীরা থেকে ১০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপসহ বেশ কয়েটি দেশে রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছরও প্রায় ২০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির কথা রয়েছে। রপ্তানির জন্য আগে থেকে নির্ধারিত কয়েকটি আম বাগান নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, অপরিপক্ক আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক (কার্বাইড) ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এরইমধ্যে কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসন থেকে প্রচার করা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলায় ১২ মে’র আগে কোনো আম গাছ থেকে পাড়া যাবে না। নির্ধারিত সময়ের আগে কেউ গাছ থেকে আম সংগ্রহ করলে বা কার্বাইড ও কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ক আম বাজারজাত করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বাগান মালিক, কৃষি কর্মকর্তাসহ সকল পক্ষকে নিয়ে সভা করে আম বাজারজাত করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত দিনের আগে কার্বাইড বা কেমিক্যাল দিয়ে অপরিপক্ক আম পাকিয়ে বাজারজাত করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সময়ের আগে জেলার সব বাজারে পাকা আম বেচা বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এফএ/জেআইএম