বরগুনায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। রোজা ও তীব্র তাপদাহের কারণে তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরা দামও বেশি পেয়েছেন। জেলায় উৎপাদিত তরমুজের ৯৫ শতাংশ এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে। এখনো অবিক্রিত রয়েছে পাঁচ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত।
Advertisement
তবে অভিজ্ঞ চাষিরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও নতুন চাষিরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই তারা হারিয়েছেন তাদের মূলধন।
বরগুনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৫১২ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় তরমুজ চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৮শ ৩৮ হেক্টর জমিতে। গত বছরের থেকে চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ৩২৬ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। জেলায় এ বছর মোট তরমুজ উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন। যা বিক্রি হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকায়।
মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বৃষ্টিতে প্রায় ৩ হাজার ৭২১ হেক্টর তরমুজ ক্ষেত তলিয়ে যায়। যার মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭১ হেক্টর জমির তরমুজ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৮৬৬ হেক্টর তরমুজ ক্ষেত। অনেক চাষির ক্ষতি হলেও তরমুজের বাজারমূল্য ভালো থাকায় তারা তাদের লোকসান মিটিয়ে লাভের মুখ দেখেছেন।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার স্থানীয় অভিজ্ঞ তরমুজ চাষিরা বৃষ্টির কারণে তেমন ক্ষতির মুখে পড়েননি। তারা তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করে তরমুজ ক্ষেত স্বাভাবিক রেখেছেন। তবে বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন অন্য জেলা থেকে আসা তরমুজ চাষিরা। তারা এই অঞ্চলের আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের প্রস্তুতি রাখেননি। তাছাড়া বৃষ্টির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন পড়েছিল। তখন তারা শ্রমিক পাননি।
আমতলী উপজেলার গাজীপুর এলাকার তরমুজচাষি সোহেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর রৌদ্রের তাপ বেশি থাকায় তরমুজের দাম বেশি ছিল। তাই চাষিরা তরমুজের দাম ভালো পেয়েছেন। তবে অল্প কিছু সংখ্যক চাষি লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকে আবার তাদের সম্পূর্ণ পুঁজি হারিয়েছেন। তবে তার পরিমাণ খুব সীমিত সংখ্যক।
সাতক্ষীরা থেকে তালতলী উপজেলায় তরমুজ চাষ করতে আসা ফরিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দূর থেকে এখানে এসে তরমুজ চাষ করেছি। বৃষ্টিতে আমাদের সম্পূর্ণ পুঁজি হারিয়েছি। এর কারণ হলো এ অঞ্চলের উঁচু জমিগুলো স্থানীয় চাষিরা চাষ করেছেন। আমরা যে জমিতে চাষ করেছি তা স্থানীয়দের থেকে তুলনামূলক অনেক নিচু। তাই বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সিএম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে তরমুজচাষির ক্ষতি কাটাতে আমরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছি। সে কারণে তরমুজচাষিদের তেমন ক্ষতি হয়নি। পাশাপাশি রোজা ও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকায় চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন।
Advertisement
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ জোবাইদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে। এ বছর জেলায় দুই হাজার ৮শ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। জেলায় উৎপাদিত তরমুজের ৯৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এখনো ৫ শতাংশ তরমুজ বিক্রি চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বরগুনার তরমুজ সুস্বাদু হওয়ার কারণে অন্যান্য অঞ্চলের থেকে চাহিদা বেশি থাকে। তাই চাষিরা বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছেন।
এফএ/এমএস